মঙ্গলবার, ২১ মার্চ ২০২৩, ০৫:২৪ পূর্বাহ্ন
১০, ৯, ৮, ৭, ৬, ৫, ৪, ৩, ২, ১, ০। ক্ষণগণনা শেষে সূচনা হলো বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ। আজ শত বছর পূর্ণ হলো বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তানের। শুভ জন্মদিন জাতির পিতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫৫ বছরের জীবনে বিভিন্ন দফায় প্রায় ১৩ বছরই কেটেছে জেলে। কারাগারে কেটেছে তার আটটি জন্মদিন। বঙ্গবন্ধুর জেল জীবনের ডায়েরি নিয়ে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী‘ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’- বই দুটি প্রকাশিত হলেও তাতে জেলে কাটানো আটটি জন্মদিনের সবগুলোর বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়নি।
তবে ‘কারাগারের রোজনামচা‘ বইয়ে জেলখানায় বঙ্গবন্ধুর একটি জন্মদিন কাটানোর বিবরণ পাওয়া গেছে। ১৯৬৭ সালের ১৭ মার্চ তার ৪৭তম জন্মদিনটা কেমন কেটেছিল বা জন্মদিনে তার দল আওয়ামী লীগ কী কর্মসূচি পালন করেছিল, জাতির পিতা তা তুলে ধরেছেন বইটিতে।
ডায়েরির পাতায় জন্মদিন উপলক্ষে তিনি লিখেছেন, আজ আমার ৪৭তম জন্মবার্ষিকী। এই দিনে ১৯২০ সালে পূর্ব বাংলার এক ছোট্ট পল্লীতে জন্মগ্রহণ করি। আমার জন্মবার্ষিকী আমি কোনদিন নিজে পালন করি নাই-বেশি হলে আমার স্ত্রী এই দিনটাতে আমাকে ছোট্ট একটি উপহার দিয়ে থাকতো। এই দিনটাতে আমি চেষ্টা করতাম বাড়িতে থাকতে। খবরের কাগজে দেখলাম ঢাকা সিটি আওয়ামী লীগ আমার জন্মবার্ষিকী পালন করছে। বোধ হয়, আমি জেলে বন্দি আছি বলেই। ‘আমি একজন মানুষ, আর আমার আবার জন্মদিবস’! দেখে হাসলাম।
কারাগারের রোজনামচা বইয়ে উঠে এসেছে যে, জন্মদিনের তিন দিন আগে স্ত্রী ও সন্তানেরা তার সঙ্গে জেলগেটে দেখা করে যেতেন। ফলে এত অল্প সময়ের ব্যবধানে জন্মদিনে আবার দেখা হওয়ার সুযোগ হবে কিনা, সেই সংশয় ছিল জাতির পিতার মনে। তবে পরিবারের সদস্যরা আবারও আসবে বলে আত্মবিশ্বাসও ছিল তার মনে। অবশ্য ওইদিন তার আত্মবিশ্বাসেরই জয় হয়েছিল। জন্মদিনের দিন বিকাল পাঁচটার দিকে ছেলেমেয়েদের নিয়ে স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব (বঙ্গবন্ধু ডাকতেন রেনু নামে) কারাগারে তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। তাকে অন্য একজনের দেওয়া জন্মদিনের কেকও নিয়ে আসেন বেগম মুজিব।
৪৭তম জন্ম বার্ষিকীর দিনে (১৯৬৭ সালের ১৭ মার্চ) ডায়েরিতে তিনি লিখেছিলেন, ওইদিন জেলখানায় আটক তার দলের নেতারা জন্মদিন উপলক্ষে তাকে গোলাপ, ডালিয়াসহ নানা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এছাড়া বিকালে স্ত্রী ও সন্তানেরা ফুলের মালা ও অন্য একজনের (বদরুন) পাঠানো কেক নিয়ে আসেন। এছাড়া ঢাকা সিটি আওয়ামী লীগও বঙ্গবন্ধুর জন্য একটা বিরাট কেক ওইদিন পাঠিয়েছিল বলে ডায়রিতে উল্লেখ করেন।
আটটি জন্মদিন জেলে কাটান বঙ্গবন্ধু
পাকিস্তানবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন সময় চার হাজার ৬৮২ দিন জেলে কাটিয়েছেন। পাকিস্তান আমলের ২৪ বছরের প্রায় ১৩ বছরই বঙ্গবন্ধুকে জেলে কাটাতে হয়েছে। এসময় অন্তত ৮টি জন্মদিন তার কেটেছে কারাগারে।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু সর্বপ্রথম ১৯৫০ সালে তার ৩১তম জন্মদিন কারাগারে কাটান। পাকিস্তান সরকার তাকে ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি বন্দি করে। টানা ৭৮৭ দিন কারাগারে কাটিয়ে তিনি মুক্তি পান ১৯৫২ সালে। ওই একই দফায় বন্দিদশায় ১৯৫১ সালে তার ৩২তম জন্মদিনও কাটে জেলে। এরপর আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করলে ১৯৫৮ সালের ১১ অক্টোবর গ্রেপ্তার হয়ে টানা ১১৫৩ দিন বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে কাটাতে হয়। গ্রেপ্তারের ১৪ মাসের মাথায় তিনি মুক্তি পেলেও সেদিনই কারা ফটকে আবারও গ্রেপ্তার হন।
এ সময় তার ৪০তম (১৯৫৯ সাল), ৪১তম (১৯৬০) ও ৪২তম (১৯৬১) জন্মদিন কাটে জেলখানায়। ওই দফায় ১৯৬১ সালের শেষ দিকে মুক্তি পাওয়ার কয়েক মাসের মাথায় ১৯৬২ সালের ৬ জানুয়ারি তিনি ফের গ্রেপ্তার হন এবং মুক্তি পান একই বছরের ১৮ জুন। এ কারণে ৪৩তম (১৯৬২) জন্মদিন তাকে জেলে কাটাতে হয়। এরপর ১৯৬৭ সালে ৪৮তম এবং ১৯৬৮ সালে ৪৯তম জন্মদিনও জেলখানায় কাটে বঙ্গবন্ধুর।
Design and Developed By Sarjan Faraby