নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে ২৩.১৫ শতাংশ মানুষের নেই নাগরিকত্বের প্রমান
নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল:: জন্ম নিবন্ধন হলো একজন মানুষের জন্ম, বয়স, পরিচয় ও নাগরিকত্বের প্রমাণ। রাষ্ট্রের স্বীকৃত নাগরিকের মর্যাদা ও সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে হলে এই সনদ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক। কিন্তু দেশের মোট জনসংখ্যার ১৭ শতাংশেরও বেশি বা তিন কোটি মানুষের জন্ম নিবন্ধন নেই।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি বিবিএস আর্থ-সামাজিক ও জনমিতিক জরিপ-২০২৩ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে নারীরা আর শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষের জন্ম নিবন্ধনের হার কম।
বিবিএসের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মোট জনসংখ্যার মধ্যে ৮৩.৬৪ শতাংশ পুরুষের জন্ম নিবন্ধন আছে। এ ক্ষেত্রে নারীর হার ৮২.০৮ শতাংশ। অর্থাৎ ১৬.৩৬ শতাংশ পুরুষ এবং ১৭.৯২ শতাংশ নারীর জন্ম নিবন্ধন নেই।
জন্ম নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে বরিশাল বিভাগ আর এগিয়ে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ। বরিশালের মোট জনসংখ্যার ৭৬.৮৫ শতাংশ মানুষের জন্ম নিবন্ধন রয়েছে, বাকি ২৩.১৫ শতাংশের নেই। অন্যদিকে চট্টগ্রামে জন্ম নিবন্ধন রয়েছে ৮৯.৫৬ শতাংশ মানুষের, বাকি ১০.৪৬ শতাংশের নেই।
জেলার হিসাবে সবচেয়ে কম নিবন্ধন ভোলা জেলায়। এই জেলার মোট জনসংখ্যার ৬৭.৮৯ শতাংশের জন্ম নিবন্ধন রয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে সব কিছুতেই জন্ম নিবন্ধন সনদ দরকার হয়। এটা ছাড়া কোনো কাজই সম্ভব নয়। স্কুল, কলেজ—এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতেও বয়স প্রমাণের জন্য জন্ম নিবন্ধন প্রদর্শন করতে হয়।
জন্ম নিবন্ধনে হার কম থাকার কারণ বিভিন্ন ভোগান্তি। প্রক্রিয়াটি সহজ না করতে পারলে এই হার বাড়ানো যাবে না। অন্যদিকে ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক হলেও এখনো অনেকে এর বাইরে রয়েছে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, মোট জনসংখ্যার মধ্যে ৯৬.৪৫ শতাংশ মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। অর্থাৎ ৩.৫৫ শতাংশ বা ৫১ লাখ ৪৭ হাজার ৭০০ জন মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। এখানেও পিছিয়ে রয়েছে নারীরা।
পাসপোর্টেও পিছিয়ে রয়েছে দেশের মানুষ। তথ্য অনুযায়ী, মোট জনসংখ্যার মাত্র ৪.৩৯ শতাংশ মানুষের পাসপোর্ট রয়েছে। অর্থাৎ ৯৫ শতাংশেরও বেশি মানুষের পাসপোর্ট নেই। পাসপোর্ট থাকার হার শহরের তুলনায় গ্রামে প্রায় অর্ধেক।
গাড়ি চালানোর জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স বাধ্যতামূলক হলেও যৎসামান্য মানুষের এই লাইসেন্স আছে। বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, মোট জনসংখ্যার মাত্র ২.১১ শতাংশ মানুষের ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে। অর্থাৎ ১৭ কোটি ১৫ লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র ৩৬ লাখ ২০ হাজার ৫৪৮ জন মানুষের ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা পুরুষের হার ৪.১৯ শতাংশ, আর নারী মাত্র ০.১২ শতাংশ।
জরিপের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা নয়ন কান্তি রায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৭ শতাংশ জনসংখ্যার জন্ম নিবন্ধন নেই বলতে এখানে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাইকেই ধরা হয়েছে। আর জাতীয় পরিচয়পত্র নেই যে ৪ শতাংশের তারা ১৮ বছরের বেশি বয়সের। আমরা জরিপের সময় যাদের গৃহে পেয়েছি, তাদের তথ্য মতেই এই রিপোর্ট করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন অ্যান্ড সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাসপোর্ট সবার জন্য জরুরি না হলেও জন্ম নিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সবার থাকার উচিত। এগুলো না থাকলে সরকারের বাজেট বা নীতি প্রণয়নে তথ্য পাওয়া যায় না। তাই এ ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে সরকারের গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’