ঢাকারবিবার , ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ইসলামে কি দিবস পালনের অনুমোদন আছে-মিলাদুন্নবী কি পালন করতেন নবীজি?

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪ ১০:২৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

ধর্ম ডেস্ক :: ইসলামে কি দিবস পালনের অনুমোদন আছে-মিলাদুন্নবী কি পালন করতেন নবীজি?

নবীজির জন্মে পুরো পৃথিবী আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল। সকল নবী-রসুলের সর্দার, সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী এ পৃথিবীতে আগমন করেন রবিউল আউয়াল মাসে। এ মাসেই নবীজির জন্ম ও মৃত্যু হয়েছে। তাই তো ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর কাছে অত্যন্ত গুরুত্ববহ মাস রবিউল আউয়াল।

ঈদে মিলাদুন্নবী বলতে কী বুঝায়?

অশান্তি আর বর্বরতায় ভরপুর সংঘাতময় আরবের বুকে আঁধারের বুক চিড়ে মহানবি (সা.) সুখ-শান্তি কামিয়াবি ও রহমতের বার্তা নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন। মানবজাতিকে সত্যের, সভ্যতার ও ন্যায়ের দিকনির্দেশনা দিয়ে গোটা বিশ্বকে শান্তিতে পরিপূর্ণ করেৃ

‘ঈদ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ খুশি হওয়া, ফিরে আসা, আনন্দ উদযাপন করা ইত্যাদি। আর ‘মিলাদ’ শব্দের অর্থ জন্মতারিখ, জন্মদিন, জন্মকাল ইত্যাদি। তাই ‘মিলাদুন্নবি’ (সা.) বলতে নবিজির আগমনকে বোঝায়। আর ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ (সা.) বলতে নবি করিম (সা.)-এর আগমনে আনন্দ উদযাপন করাকে বোঝায়।

মিলাদুন্নবীর দিনে নবীজির আমল

নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জন্ম উদযাপন করতেন জন্মের বার হিসেবে, তারিখ হিসেবে নয়। নবীজির জন্মদিন ছিল সোমবার। এদিন তিনি কোনো উৎসব, মিছিল বা ভোজনরসিকতা করতেন না, বরং রোজা রাখতেন। হাদিস বেত্তাগণ লিখেছেন, সোমবার নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্মের দিন হওয়ায় প্রতি সোমবার রোজা রাখা মোস্তাহাব।

হজরত আবু কাতাদাহ আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, ‘রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সোমবার রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ওই দিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি। ওই দিনই আমি নবুয়ত লাভ করেছি বা আমার ওপর ওহি অবতীর্ণ হয়..।’ (মুসলিম: ১১৬২)

দিবস পালন নিয়ে ইসলাম কী বলে?

ইসলামে দিবস পালনের অনুমোদন নেই। ইসলামে জন্মদিন পালনের গুরুত্ব যদি থাকতো, তাহলে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িগণ এবং তাবে তাবেইনসহ পূর্ববর্তী মহান ব্যক্তিদের থেকে এটি পালনের প্রমাণ থাকার কথা। কিন্তু আদৌ তা নেই। তারা জন্মদিন পালন করবেন তো দূরের কথা, কারও কারও জন্মসন জানা গেলেও কোন মাসের কোন তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন তা অবধি জানা যায়নি।

এমনকি আমাদের নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রবিউল আউয়াল মাসের কত তারিখে জন্মগ্রহণ করেছেন এটা নিয়েও রয়েছে মতভেদ। সংগত কারণে জন্মদিন পালন নিঃসন্দেহে একটি অনর্থক কাজ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ইসলামে এর কোনো স্থান নেই।

হাদিসে এসেছে, আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

لَتَتَّبِعُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حذو القذة بالقذة حَتَّى لَوْ دخلوا جُحْرَ ضَبٍّ لَدخلتتُمُوهُ قالوا: يَا رسول الله الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى. قَالَ: فَمَنْ؟ অর্থ: অবশ্যই তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির (ইহুদি নাসারাদের) পদ্ধতি অনুসরণ করবে বিঘত বিঘত এবং হাত হাত পরিমাণ অর্থাৎ, সম্পূর্ণরূপে। এমনকি তারা যদি সাণ্ডার (গো-সাপ জাতীয় এক প্রকার হালাল জন্তুর) গর্তে প্রবেশ করে, তবে তোমরাও তাকে অনুসরণ করবে। সাহাবাগণ বললেন, আল্লাহর রসুল ইহুদি ও খ্রিস্টানরা? তিনি বললেন, তবে আবার কারা? (বুখারি: ২৬৬৯)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আরেক হাদিসে নবীজি বলেন,

مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ অর্থ: যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে। (আবু দাউদ: ৪০৩১)

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সোমবার

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) সোমবার (১২ রবিউল আউয়াল)। ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে মানব জাতির জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আরবের মক্কা নগরীর সভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমিনার কোল আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

এক সময় গোটা আরব সমাজ অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। তারা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। আরবের সর্বত্র দেখা দিয়েছিল অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা। এ সময়কে বলা হয় আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ।

তখন মানুষ হানাহানি ও কাটাকাটিতে লিপ্ত ছিল এবং মূর্তিপূজা করত। এই অন্ধকার যুগ থেকে মানবকুলের মুক্তিসহ তাদের আলোর পথ দেখাতে মহান আল্লাহ রসুলুল্লাহকে (সা.) প্রেরণ করেন এই পৃথিবীতে।

মহানবী (সা.) অতি অল্প বয়সেই আল্লাহর প্রেমে অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। পঁচিশ বছর বয়সে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিবি খাদিজা নামের এক ধনাঢ্য মহিলার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে তিনি নব্যুয়ত প্রাপ্ত হন। আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করেন।

বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় এ দিনটি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) হিসেবে পালন করে থাকে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে যথাযথ মর্যাদায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের জন্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর ওপর আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিস্তারিত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে উন্নত খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

এ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। আজ বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব গেটে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধন করেছেন।

অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে- ওয়াজ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, সেমিনার, ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, আরবি খুতবা লিখন প্রতিযোগিতা, ক্বিরাত মাহফিল, হামদ-নাত, স্বরচিত কবিতা পাঠের মাহফিল, ইসলামি ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী, ইসলামি বইমেলা, বিশেষ স্মরণিকা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ।

এ ছাড়াও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সকল বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫৪টি ইসলামিক মিশন ও ৮ টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।