
নিজস্ব প্রতিবেদক :: ভোলায় ঈদকে কেন্দ্র করে বিক্রির উদ্দেশ্য পরম যত্নে লালন-পালন করা গড়ে তোলা ১৬ থেকে ২২ মণ ওজনের বিশাল আকারের ৪টি গরু এখনও বিক্রি হয়নি। ক্রেতা না থাকায় বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। অন্যদিকে এসব গরু হাটে তোলার পর দামাদামি করে কোনো কোনো ক্রেতা উৎপাদন খরচও বলছেন না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত বছরগুলোতে কোরবানির পশুর হাটে ক্রেতাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বড় আকারের গরু। কিন্তু এ বছর ক্রেতারা বড় গরুর দিকে ঝুঁকছে না, আর এতেই বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। সরেজমিনে ভোলা শহরের ‘গরুর হাট’ ও আলীনগর মাদরাসা বাজার পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদকে সামনে রেখে কোরবানির পশুর হাটে ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে ছোট ও মাঝারি আকারের গরু। বিপাকে পড়া খামারিদের মধ্যে একজন সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নে অবস্থিত খাঁন ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো. আবুল কালাম খাঁন। তার খামারে ছোট বড় মিলিয়ে ১১টি গরু রয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে লাইভ ওয়েটে ২২ মণ ওজনের ব্রাহমা জাতের একটি ষাঁড় ‘কালো বদর’ ও ফ্রিজিয়ান ১৬ মণ ওজনের আরেকটি ষাঁড় ‘কালো পাহাড়’। এ বছর ঈদুল আজহায় বিক্রির উদ্দেশ্য ফার্মটিতে দুটি বিশাল আকারের গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। গত ১ সপ্তাহ ধরে তোলা হচ্ছে ভোলার বিভিন্ন হাটে। কালা বদরের দাম দেওয়া হয়েছে ৭ লাখ ও কালো পাহাড়ের দাম দেওয়া হয়েছে ৫ লাখ টাকা।
কিন্তু নেই ক্রেতাদের আগ্রহ। খামারি আবুল কালাম খাঁন বলেন, আমার খামারের একটি ব্রাহমা জাতের গাভীর বাচ্চা হচ্ছে ২২ মণের কালো বদর ও ফ্রিজিয়ান শাহিওয়াল ক্রসের ১৬ মণ ওজনের কালো পাহাড় । সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে কাঁচা ঘাস, খৈল,খড়, ভূসি খাইয়ে বড় করেছি। প্রতিদিন প্রায় পাঁচশ টাকা প্রতিটি ষাঁড়ের পেছনে ব্যয় হচ্ছে। কালা বদরের বয়স ৪ বছর ও কালো পাহাড়ের বয়স ৩ বছর।
দাম চেয়েছি ৭ লাখ ও ৫ লাখ টাকা। ষাঁড়গুলোর পেছনে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ও ৪ লাখ টাকা। বিক্রির উদ্দেশ্য হাটে তোলার পর কয়েকজন ক্রেতা ষাঁড় দুটির পেছনে ব্যয় হওয়া দামও বলেনি, ক্রেতাও কম, এ দামে বিক্রি করলে চালানও উঠবে না। এখন গরু নিয়ে অনেকটা বিপাকে পড়েছি। শুধু আবুল কালাম খাঁন নয়, একই চিত্র পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চরপাতা গ্রামের খামারি মো. আল আমিনের। আল আমিনের খামারে ছোট বড় মিলিয়ে ২৫টি গরু রয়েছে।
বিক্রির উদ্দেশ্য এ বছর প্রস্তুত করেছেন লাইভ ওয়েট ২২ মণ ওজনের শাহিওয়াল জাতের ষাঁড় নাম ‘রাজাবাবু’ ও ১৬ মণ ওজনের শাহিওয়াল জাতের আরেকটি গাভী। ক্রেতারা কাঙ্খিত দাম না বলায় তিনিও বিপাকে পড়েছেন। মো. আল আমিন বলেন, দাম কমিয়ে আমার ২২ মণ ওজনের রাজাবাবুর দাম নির্ধারণ করেছি ৬ লাখ টাকা। কয়েকজন ক্রেতা রাজাবাবুর দাম বলেছেন সর্বোচ্চ ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ১৬ মণ ওজনের অন্য গরুটির দাম নির্ধারণ করেছি সাড়ে ৪ লাখ টাকা।
ক্রেতারা বলছেন ২ লাখের মতো। এসব দামে গরু বিক্রি করলে লাভ তো দূরের কথা মূলধনও উঠবে না। খামারে গরু যত বড় হচ্ছে দৈনিক খরচ ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। গরুগুলো নিয়ে চিন্তায় পড়েছি। ক্রেতা মো. জসিম ও শাহে আলম, রশিদ বলেন, হাটে এসেছি কোরবানির জন্য গরু কিনতে। আমাদের বাজেট ৭০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ সোয়া ১ লাখ টাকা। ছোট ও মাঝারি ধরনের গরু দামাদামি করছি।
এ বিষয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আমাদের সার্বিক পরামর্শে খামারিরা গরুগুলো লালন পালন করেছেন। ভোলায় এ বছর বড় গরুর ক্রেতা কম থাকায় খামারিরা কিছুটা বিপাকে পড়েছেন এবং ক্রেতারা দামও কম বলছেন। এদিকে শেষ মুহূর্তে হলেও গরুগুলো ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা খামারিদের।
উল্লেখ্য, জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্র জানিয়েছে চলতি বছর ভোলা জেলায় কোরবানির জন্য ১ লাখ ২ হাজার ৭৬৯টি পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। চাহিদা রয়েছে ৯০ হাজার ২৫৩টি। চাহিদার বিপরীতে উদ্বৃত্ত রয়েছে ১২ হাজার ৫১৬টি।