ঢাকারবিবার , ২৩ নভেম্বর ২০২৫
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বরিশাল নগরীতে এক যুগ আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা, ৩২ ভবনে এখনো মানুষের বসবাস : ভূমিকম্পে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা

ক্রাইম টাইমস রিপোর্ট
নভেম্বর ২৩, ২০২৫ ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংবাদটি শেয়ার করুন....

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল নগরীতে এক যুগ আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা ৩২টি পুরোনো ও জরাজীর্ণ ভবনে এখনো বসবাস করছেন মালিক ও ভাড়াটিয়ারা। শতবর্ষী এসব ভবনের অধিকাংশেই প্রয়োজনীয় সংস্কার না হওয়ায় যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প, দেশজুড়ে নিহত ১০—তবে বরিশাল অক্ষত

শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে ঢাকা ও আশপাশের জেলা। বিভিন্ন স্থানে কার্নিশ ভেঙে ও দেয়াল ধসে অন্তত ১০ জন নিহত এবং ছয় শতাধিক মানুষ আহত হন।
ঢাকা থেকে মাত্র ৪৫ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর মাধবদী ছিল ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। বরিশালে কম্পন খুব বেশি অনুভূত না হলেও বিশেষজ্ঞদের মতে—এ মাত্রার ভূমিকম্প বরিশালেই হলে তালিকাভুক্ত জরাজীর্ণ ভবনগুলোর একটি পর্যন্ত টিকত না।

বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার রবিউল আল আমিন জানান, “বরিশালে বড় কোনো ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে হতাহতের ঘটনা আমাদের সতর্কবার্তা দিয়ে গেছে।”

২০১৩ সালে ৩৫ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা—এখনো রয়েছে ৩২টি

বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে বুয়েটের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ভবনের বয়সের ভিত্তিতে নগরীর ৩৫টি ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। সে সময় ভবনগুলোর সামনে লাল সাইনবোর্ড লাগিয়ে সতর্ক করা হয়।
এরপর কাঠপট্টি রোডের একটি ভবন মালিকপক্ষ ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করে। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৭ অক্টোবর মালিকদের আবেদনের ভিত্তিতে সদর রোডের সাকুর ম্যানশনউলফৎ ম্যানশন সিটি করপোরেশন ভেঙে ফেলে।
বাকি ৩২টি ভবন এখনো আগের অবস্থায় রয়েছে, যেখানে স্বাভাবিকভাবেই চলছে মানুষের বসবাস ও ব্যবসা।

“ভবনগুলো দেখলেই বোঝা যায় কতটা ঝুঁকিপূর্ণ”—বিসিসি

বিসিসির উচ্ছেদ শাখার কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন,
“৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষতি হয়নি ঠিক, তবে এ ভবনগুলো যে ঝুঁকিমুক্ত—তা বলা যাবে না। এগুলো দেখলেই বোঝা যায় কতটা নড়বড়ে। উচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলছে।”

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা

নগরীর যেসব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—
জানুকি সিংহ রোডের মতি লস্করের বাড়ি, পূর্ব বগুড়া রোডের রবীন্দ্রনাথ সেন ভবন, আগরপুর রোডের মনু মিয়ার ভবন, সদর রোডের হোটেল বাহাদুর, নিউ সার্কুলার রোডের সৈয়দ মনছুর আহমেদ ভবন, শাকুর ম্যানশন, ঈশ্বর বসু রোডের সৈয়দ মঞ্জিল, হাসপাতাল রোডের মান্নান মৃধার ভবন, কালুশাহ সড়কের জালাল আহমেদের ভবন, হাতেম আলী কলেজের পুরাতন হোস্টেল, বিএম কলেজের সুরেন্দ্র ভবন, বগুড়া রোডের সালাম চেয়ারম্যানের ভবন, জ্ঞান-বিজ্ঞান ভবন, জেলা পুলিশের মালখানা ও গারদখানা, সিঅ্যান্ডবি রোডের উপজেলা পরিষদের পুরাতন ভবনসহ আরও বহু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক ভবন।

“কমিটি মূল্যায়ন করে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছিল”—প্রধান প্রকৌশলী

বিসিসির প্রধান প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির বলেন,
“এগুলো সিটি করপোরেশনের একার সিদ্ধান্তে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা হয়নি। গণপূর্তসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি যাচাই-বাছাইয়ের পর চূড়ান্ত তালিকা দেয়। তবে সেই সময়ে ভবনগুলোতে বিস্তারিত স্ট্রাকচারাল পরীক্ষা হয়েছিল কি না—সে তথ্য আমাদের কাছে নেই।”

ঝুঁকির মুখে নগরবাসী

বিশেষজ্ঞদের মতে, বরিশাল চরম ভূমিকম্প-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা না হলেও জরাজীর্ণ ভবনগুলো যেকোনো সময় বড় বিপর্যয় ঘটাতে পারে। দ্রুত উচ্ছেদ ও পুনর্নির্মাণই একমাত্র সমাধান, নইলে সামান্য কম্পনে বড় ধরনের প্রাণহানির আশঙ্কা থাকবে।

 

বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির বলেন, এগুলো সিটি করপোরেশনের একার মতামতে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা হয়নি। এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। যেখানে গণপূর্তসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রকৌশলী এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন। তাদের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ওই সময় ভবনগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছিল কি না, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা নেই বলেন এই কর্মকর্তা।