নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা রাজাবাহাদুর সড়কে এক যুবককে কুপিয়েছে চিহ্নিত কিছু সন্ত্রাসীরা। শুক্রবার সন্ধ্যা রাতে ওই এলাকার মহিলাক্লাবের সম্মুখ সড়কে পত্রিশোর্ধ্ব মেহেদি হাসান মিঠুনের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে তাকে প্রথমে মারধর এবং পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায় ১০ থেকে ১২ জনের একটি বাহিনী, যাদের নেতৃত্ব দেন বরিশাল মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ দাস। বরিশাল প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বাসভবন এবং কোতয়ালি মডেল থানাধীন জনবহুল এলাকায় রক্তারক্তির এই খবর পার্শ্ববর্তী বঙ্গবন্ধু উদ্যানে দর্শনার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই রক্তাক্ত যুবক মিঠুনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। এর আগে হামলাকারীরা মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঠিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বেশ কয়েকজন যুবক কয়েকটি মোটরসাইকেল রাস্তার ওপর রেখে তর্কাতর্কিতে লিপ্ত হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেহেদি হাসান মিঠুন নামক যুবককে মারধর শুরু করে ১০/১২ জন। একপর্যায়ে তারা যুবককে রাস্তায় ফেলে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। নিজেকে আত্মরক্ষার্থে যুবক চেষ্টার পাশাপাশি ডাৎ-চিৎকার শুরু করলে স্থানীয়রা ছুটে আসলে হামলাকারী সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায়। তখন পুলিশকে ফোন করা এবং রক্তাক্ত যুবককে উদ্ধার করে দ্রুত বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বসবাসরত এলাকার এমন ঘটনা ঘটেছে, এ খবর ছড়িয়ে পড়লে পার্শ্ববর্তী বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বেড়াতে আসা জনসাধারণ ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে যুবকরে ডান হাতের আঙ্গুল ও পা মারাত্মক জখম হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে রাজধানী ঢাকা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে মেহেদি হাসান মিঠুনের শ্বশুর ১০ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা বাদশা চৌধুরী জানিয়েছেন, তার জামাতাকে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়েছে, অবস্থা গুরুতর। চিকিৎসকেরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করেছেন।
বাদশা চৌধুরী বরিশাল সদর আসনের এমপি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের অনুসারী। তিনি জানান, কার নেতৃত্বে হামলা হয়েছে এবং এতে আরও কারা জড়িত সকলের নাম-পরিচয় ইতিমধ্যে নিশ্চিত হয়েছেন।
মিঠুন বর্তমানে রাজনীতি না করলেও এক সময় আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ওয়ার্ডপর্যায়ের নেতা ছিলেন। এবং ওই সময় যাদের সাথে বিরোধী ছিল, তাদেরই একজন প্রদীপ এই হামলা চালিয়েছে, জানান মি. চৌধুরী।
জামাতার বরাত দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা জানান, ১০ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মিঠুনের সাথে কারও কোনো বিরোধ নেই। তারপরেও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ দাস পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশে এ হামলা করে। এতে প্রদীপের সাথে হাসান ওরফে গালকাটা হাসান এবং অপু জড়িত থাকার তথ্য জানা গেছে।
বাদশা চৌধুরী জানান, জামাতা মিঠুন শহরের বটতলা এলাকায় অবস্থান করছিলেন এমন সময় জুবায়ের নামক এক বন্ধু তাকে ফোন করে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে ডাকে। কিন্তু সেখানে পৌছানোর আগেই মহিলাক্লাবের সম্মুখে রাজাবাহাদুর সড়কে তার মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে প্রদীপসহ ১০/১২ জন। এবং সাথে সাথে মারধর শুরু করে দেয়। কিছুক্ষণ পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হাত এবং পায়ে এলোতাপাড়ি কোপায়। তাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টায় মিঠুন ব্যর্থ হলে ডাৎ-চিৎকার দেয়, তখন আশপাশের মানুষ ছুটে আসলে হামলাকারী প্রদীপসহ সকলে মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ পৌছানোর আগেই রক্তাক্ত অবস্থায় মিঠুনকে উদ্ধার করে শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর আগে বটতলা থেকে মিঠুনকের পিছু নেয় প্রদীপসহ সন্ত্রাসী বাহিনী, অভিযোগ করেন বাদশা।
তবে এই বর্বরতার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক প্রদীপ দাস। উল্টো বলছেন, বিষয়টি আমি শুনে আশ্চর্য হয়েছি। মিঠুনের সাথে অনেকের বিরোধ আছে, হয়তো তা নিয়ে কেউ করেছে।
বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানার ওসি আরিচুল হক জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল এবং মেডিকেলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। হামলায় কারা জড়িত তা যুবকের স্বজনেরা জানিয়েছে, এ ঘটনায় মামলা হবে।’