আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: ছবির ব্যক্তির নাম আনোয়ার হোসেন খোকন দেশের বাড়ি বৃহত্তর কুমিল্লার শহরাস্থি থানায়। তিনি নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ দশকের প্রভাবশালী ছাত্রদল নেতা দাবি করেন। কিন্তু তৎকালীন উল্লেখযোগ্য ছাত্রদল নেতা যারা বিএনপি থেকে এমপি-মন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন এবং বর্তমানে বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ে রয়েছেন এমন একাধিক নেতাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান লন্ডনে দায়িত্ব পাওয়ার আগে কেউই খোকন চিনতেন না। বরং চাঁদপুরের একজন বিএনপি নেতা জানান খোকন সাহেবকে ওনারা চিনতেন চাঁদপুর-শহরস্থি পুলিশের দালাল হিসাবে। লন্ডনে এসে মিঃ খোকন ম্যাকডোনাল্ড কর্মি হিসাবে কাজ করে যাচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথমত একজন সিলেটির মাধ্যমে রয়ের পেইড এজেন্ড হিসেবে তারেক রহমানের বাসায় আসা-যাওয়া শুরু করে।
বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা নামপ্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রচন্ড ধুরান্ধার এ খোকন সাহেব ভাল কোন রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার বাসায় আসা যাওয়ার মধ্য দিয়ে ২০১৯ সালে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদ ভাগিয়ে ইউরোপ আমেরিকায় কমিটি গঠনের দায়িত্ব নেয়।
ভাগ্যেও খুলে যায় খোকনের। দায়িত্ব পেয়েই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াসিংটন থেকে কাজ শুরু করেই জড়িয়ে পরে কমিটি বাণিজ্যে। অভিযোগ রয়েছে প্রত্যেকটি আহবায়ক কমিটি তার পছন্দমত ব্যক্তিদের দিয়ে গঠন করে তাদের নিকট থেকে ১০/১৫ হাজার ডলার নিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অধিকাংশ চলমান কমিটির সভাপতি/সেক্রেটারিকে আহব্বায়ক না করে নিজের পছন্দ মত আহব্বায়ক কমিটি গঠন করে। নিউইয়ার্ক-নিউজার্সির কমিটি ভেঙ্গে দু’খন্ড করেছে। কারণ যত কমিটি তত টাকা। ওয়াসিংটন ডিসি, সিটির তৎকালিন কমিটির সভাপতি, সেক্রেটারি এবং নেতা-কর্মিদের সমর্থন না নিয়েই নিউইয়ার্ক থেকে নতুন করে ভার্জীনিয়ায় আসা (গোপালগঞ্জ সদরের বাসিন্দা) হাফিজ খান সোহেলের নিকট থেকে ১৫ হাজার ডলার নিয়ে আহবায়ক করে কমিটি ঘোষণা করে। স্থানীয় সকল নেতাকর্মি ক্ষেপে গেলে প্রতারক খোকন গোপনে হাফিজ খানের মাধ্যমে স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ির নিকট থেকে আরো ২০ বিশ হাজার ডলার তুলে নিয়ে কাউকে না জানিয়ে গোপনে রাজনীতির সাথে জড়িত না এরকম লোকজন দিয়ে কমিটি ঘোষণা করে। যে কমিটিতে তৎকালিন কমিটির উল্লেখযোগ্য কোন নেতা কর্মীকে রাখা হয় নি। এতে স্থানীয় সকল নেতাকর্মিরা ক্ষেপে গালি-গালাজ করলে খোকন সাহেব জানান হাফিজ খান সোহেল নতুন লোকজন নিয়ে দলকে বড় ডোনেশন করেছে তাই তারেক রহমান সরাসরি উনাদের সিলেকশন কমিটি দিয়েছে।
তিনি এভাবে সারা ইউরোপ আমেরিকায় জড়িয়ে পরেন কমিটি বাণিজ্যে। নামপ্রকাশ না করার শর্তে নিউইয়ার্ক বিএনপির এক নেতা জানিয়েছেন গোপালগঞ্জের তৎকালীন ক্ষমতাধর র্যাব-পুলিশের সাবেক মহারথির সুপারিশে হাফিজ খান ভার্জিনীয়ায় নতুন এসে ওয়াসিংটন ডিসি সিটি কমিটির সভাপতি হয়েছে। গোপালগঞ্জের ঐ ব্যক্তির উপর আমেরিকান স্যাংশন থাকায় তার এজেন্ট হিসাবে এখানে হাফিজ খান সোহেল এখানে ঐ বিশেষ ব্যক্তির হয়ে কাজ করে। ম্যাকডোনাল্ডে কাজ করে যে খোকন সাহেবের জীবন সংসার চলত না, কিন্তু কমিটি বাণিজ্য করে ৩ বছরের মধ্যই একাধিক বাড়ি কিনেছে লন্ডনে স্ত্রীর নামে। কমিটি করার দায়িত্ব পেয়ে যেন তাকে আলাদ্বীনের চেরাগ এনে দিয়েছে। যাকে আহবায়ক বানিয়েছে, তার দেওয়া তালিকানুযায়ী আহব্বায়ক কমিটির সদস্য করা হয়েছে আর আহবায়কই সভাপতি, হোক ইলেকশন অথবা সিলেকশন। ভার্জীনিয়াও গোপনে টাকার বিনিময় জহির খানকে আহব্বায়ক কমিটি দিলে নেতা কর্মিরা প্রকাশ্যে ওনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে খোকন সাহেব ওনার ভুল স্বীকার করে বলেন আহব্বায়ক সভাপতি প্রার্থী হতে পারবে না। কিন্তু এই প্রতারক ৪ বছর আহব্বায়ক কমিটি ঝুলিয়ে রেখে ডিসির হাফিজ খানের মতই আহব্বায়ককে সভাপতি করে কমিটি ঘোষণা দিতে চাইলে নেতাকর্মিরা বিদ্রোহ করলে কাউয়ুম চৌধুরী নামে একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশন করে ১০/১৫/২০২৩ তারিখে নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা করে। এতে নেসার-কনা পরিষদ কাউয়ুমকে মানতে না চাইলে খোকন সাহেব জানায় উনি যে নির্বাচন কমিশন দিবে তাকে না মানলে ভার্জিনিয়ায় কোন কমিটি হবে না। পরবর্তীতে ১০/১৫/২০২৩ তারিখে নির্বাচন হলে ফলাফল ঘোষণার সাথে সাথে ব্যালট কার্ডচুপি ধরা পরলে নেসার-কনা পরিষোদ উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণসহ ব্যালট কার্ডচুপির অভিযোগ করে দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সম্পাদক বরাবর। ফলে আনোয়ার হোসেন খোকন ১০/১৭/২০২৩ তারিখে মিটিং ডেকে সকলের বক্তব্য শুনে এবং রেকর্ড করে। প্রাথমিক ভাবে ব্যালট, জালিয়াতি প্রমাণিত হলে ফলাফল স্থগিত ঘোষণা করেন অধিক তদন্ত এবং দোষিদের শাস্তির আশ্বাস দিয়ে। কিন্তু ৬ মাস পর টাকার বিনিময়ে সেই কমিটি ঘোষণা করেন। নিম্নে ১০/১৭/২০২৩ তারিখের প্রাথমিক তদন্ত মিটিং নির্বাচন কমিশনগণ এবং বিজয়ের দাবিদার জহির-তোফায়েল প্যানেলের জহির খানের বক্তব্য তুলে ধরা হল। যাহা প্রমানসহ রেকর্ড আছে আনোয়ার হোসেন খোকন সাহেবের কাছে এবং নেসার কনা পরিষদের কাছে।
অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বক্তব্যঃ
১। প্রধান নির্বাচন কমিশন কাউয়ুম নিজেই বলেছেন, কত ব্যালট এনেছে কাউকে বলেননি। ভোট শুরুর আগে এবং পরে কাউকে ব্যালট গুনে দেখান নি।
২। সাথে থাকা অপর দুইজন সহকারি নির্বাচন কমিশন বলেছেন তারা জানে না কাউয়ুম কত ব্যালট প্রিন্ট করেছে এবং এনেছে।
৩। সহকারি নির্বাচন কমিশনার মহিউদ্দিন আনোয়ার বলেছেন ৬১ ভোটের মধ্য ৫৪ কালেক্ট হওয়ার পরে তাদের কাছে একটি ব্যালট ও অবশিষ্ট ছিল না। এসময় কামরুন কণা জিজ্ঞাসা করে তাহলে পরবর্তি ভোটার আসলে কি করতেন? আমরা ব্যালট দিতে পারতাম না।
৪। অপর সভাপতি প্রার্থী জহির খান বলেছেন কোন ব্যালট/ভোট কার্ডচুপি হয়নি তবে ওনারা (জহির খান) ৬/৭ টি জাল ভোট দিয়েছেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
উপরোক্ত অভিযোগের ব্যাপারে বারবার চেষ্টা করেও আনোয়ার হোসেন খোকনের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।