নবুয়তের প্রথম দিকে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলেন। পরে তিনি বলেন, আমি তোমাদের কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন ওই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে এখন তোমরা কবর জিয়ারত করতে পার। কারণ তা দুনিয়ার মোহ দূর করে এবং আখেরাতকে মনে করিয়ে দেয়। (ইবনে মাজাহ ১৫৭১)এরপর ইসলাম আসার পর সাহাবায়ে কেরাম যখন জাহিলিয়াতের রীতিনীতি ভুলে যান তখন রসুলুল্লাহ (স.) আবার কবর জিয়ারতের অনুমতি প্রদান করেন। কারণ কবরের দৃশ্য দেখে দুনিয়া যে ক্ষণস্থায়ী সেই বিশ্বাস তাজা হয়, নিজের মৃত্যু ও কবর-জীবনকে স্মরণ করে আখেরাতের প্রস্তুতির সংকল্প গ্রহণ করা যায়।
এছাড়া আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করা এবং মাগফেরাতের দোয়া ও ইসালে সওয়াবের মাধ্যমে তাদের উপকৃত করা যায়। আর আল্লাহওয়ালাদের কবর জিয়ারতের দ্বারা যে পথে চলে তারা আল্লাহর দরবারে মাকবুল হয়েছেন ওই পথে চলার ইচ্ছা করা যায়। এ ধরনের বিভিন্ন মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কবর জিয়ারতকে নিষিদ্ধ করার পরও আবার অনুমতি দান করা হয়েছে।
তবে পুরুষরাই শুধু এই অনুমতির আওতায় পড়ে। নারীদের জন্য কবর জিয়ারতের অনুমতি নেই। যেহেতু তারা কবরে গিয়ে সেখানে কান্নাকাটি ও অস্থিরতা প্রকাশ করার আশঙ্কা থাকায় তাদেরকে কবরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর জিয়ারতকারী নারীদের উপর অভিসম্পাত করেছেন। (মুসনাদে আহমাদ ৮৪৪৯; তিরমিজি, হাদিস ১০৫৬)
কবর বা মাজার জিয়ারতের জন্য নিজের এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় যাওয়া ঠিক নয়। তবে সেখানে যদি ভিন্ন কোনো কারণে গিয়ে থাকে তাহলে সে এলাকার ওলী বুজুর্গদের কবর জিয়ারত করে আসাতে সমস্যা নেই। তবে রসুল (সা.)-এর কবর জিয়ারতের বিষয়টি ভিন্ন। অন্যদের কবর বা মাজারকে এর সাথে তুলনা করা সঠিক নয়। (মায়ারিফুস সুনান ৩/৩৩৫)উল্লেখ্য, কবর জিয়ারতে গিয়ে কবরবাসীর কাছে কিছু প্রার্থনা করা যাবে না। জিয়ারতের আসল উদ্দেশ্য হলো, কবরবাসীর জন্য ইসালে সওয়াবের দ্বারা তার উপকার করা। হাদিস শরিফে কবর জিয়ারতের যে পদ্ধতি বলা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে নিজের জন্য কোনো কিছু চাওয়ার কথা নেই। বরং দোয়া-দরুদ পড়ে তাদের রুহে সওয়াব পাঠানোর কথা আছে।
কবর জিয়ারতের বিষয়ে আমাদের দেশের মানুষ চরম প্রান্তিকতার শিকার। কবরের বিষয়ে শরিয়ত ইফরাত-তাফরিত (কোনো প্রকারের প্রান্তিকতা) অনুমোদন করে না। সুতরাং কবরের অসম্মানও যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি সম্মানের সীমা অতিক্রম করাও নিষিদ্ধ। হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর পাকা করতে, এর উপর গম্বুজ নির্মাণ করতে আর কবরের উপর বসতে নিষেধ করেছেন।' (মুসলিম ৯৭০)
এক হাদিসে আছে, ‘কবরের উপর বসবে না, কবরের দিকে ফিরে নামাজও পড়বে না'। (মুসলিম ৯৭২) আরেক হাদিসে আছে, ‘তোমাদের কেউ যেন কবরের উপর না বসে। সে জ্বলন্ত কয়লার উপর বসুক, যার কারণে তার পরিধেয় কাপড় পুড়ে তার শরীরও পুড়ে যায়- এ-ও তার জন্য ভালো।' (মুসলিম ৯৭১) এক হাদিসে আছে, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর পাকা করতে, তার উপর কিছু লিখতে এবং তা পদদলিত করতে নিষেধ করেছেন। (তিরমিজি ১০৫২)