বরিশাল সফরের বিষয়টি অবশ্য নিজেই স্বীকার করেছেন পেশায় ব্যবসায়ী মঈন। নিজের শহর বরিশালে আসতেই পারেন বলে জানান তিনি। সঙ্গে থাকা উপদেষ্টার সন্তান প্রসঙ্গে বলেন, ‘সে আমার শিশুকালের বন্ধু। দয়া করে এর সঙ্গে রাজনীতি মেলাবেন না।’
মঙ্গলবার বিকালে নগরীতে ছড়িয়ে পড়ে উপদেষ্টার ছেলেকে নিয়ে মঈন আব্দুল্লাহর বরিশালে আসার খবর। ৬টি গাড়ির বহর নিয়ে তিনি বরিশালে এসেছেন বলে জানান অনেকে। পরে খোঁজখবর নিয়ে মেলে এ তথ্যের সত্যতা।
মঈন আব্দুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার জন্মস্থান বরিশালে আমি যাব এটা নিয়ে অবাক হওয়ার কি আছে? আমি তো রাজনীতি করি না। আমি ব্যবসায়ী, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক এবং সিআইপি। দুপুরের একটু আগে বরিশালে গিয়েছি। মায়ের কবর জেয়ারত করেছি। তারপর গেছি কাউনিয়া এলাকার মামা বাড়িতে। সেখানে দুপুরের খাবার খেয়েছি।
স্থানীয় সরকারের উপদেষ্টা হাসান আরিফের পুত্র ব্যারিস্টার মুয়াজ আরিফ সঙ্গে থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সে তো আমার ছোট বেলার বন্ধু। সেই শিশুকাল থেকে আমরা একসঙ্গে বড় হয়েছি। বন্ধুত্ব আর রাজনীতি মিলিয়ে ফেলবেন না।
ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া পৈতৃক বাড়িতে না যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার বাবা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহকে ছাড়া ওই বাড়িতে আমি কি করে যাই? তাছাড়া পত্র-পত্রিকায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া আমার বাড়ির যেসব ছবি দেখেছি তাতে সেখানে গেলে হয়তো নিজেকে সামলাতে পারব না। ওই বাড়ির সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অনেকবার রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু আমার দাদা শহিদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের গড়া ওই বাড়িতে কোনোদিন একটা ঢিলও পড়েনি। যতদূর জানি, আমার পরিবারের কেউও কখনো এভাবে কারো বাড়ি পোড়ায়নি। আমি বাবার সন্তান হিসেবে গর্ববোধ করি। ওই বাড়িতে যখন যাব তখন বাবার সঙ্গেই যাব।
হাসানাত পুত্র মঈন আব্দুল্লাহর এ সফর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, নিজের শহরে তিনি (মঈন) আসতেই পারেন। তবে সময় নির্বাচনটা তার সঠিক হয়নি। এখন যদি ছাত্র-জনতা তার উপর হামলা চালাত কিংবা গাড়ি ভাঙচুর করত সেই দায় তিনি কাকে দিতেন? আমাদের সবচেয়ে বড় যেটা আপত্তি তা হলো মঈন আব্দুল্লাহর সঙ্গে বর্তমান সরকারের একজন উপদেষ্টার সন্তানের উপস্থিতি। বাল্যবন্ধু হোক আর যাই হোক, তিনি একজন উপদেষ্টার সন্তান। এ দেশের মানুষের চরম ঘৃণার কবলে পড়ে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। সেই হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ছেলে মঈন আব্দুল্লাহ।
ইতোমধ্যে একজন উপদেষ্টার বিতর্কিত বক্তব্য নিয়ে মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আরেক উপদেষ্টার ছেলেকে নিয়ে মঈন আব্দুল্লাহর এই সফর ভিন্ন কিছুর ইঙ্গিত দেয়। এসব বিষয়ে বর্তমান সরকারের আরও সর্তক হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে হয়তো আবার আমাদের রাস্তায় নামতে হবে সরকারের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে।
প্রসঙ্গত, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর বড় ছেলে সাদিক আব্দুল্লাহ বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন নগরের কালীবাড়ি রোডে থাকা তাদের পৈত্রিক বাসভবন ভাংচুরের পর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এ ঘটনায় বাড়ির ভেতরে থাকা বিসিসি কাউন্সিলর গাজী নঈমুল ইসলাম লিটুসহ ৩ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান।