নিউজ ডেস্ক :: ভরা মৌসুমেও দামে অস্বস্তি ইলিশ মাছের, বাড়েনি সরবরাহ
ইলিশ মাছ নিয়ে হা-হুতাশের শেষ নেই স্বল্প আয়ের মানুষের। অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য উপদেষ্টা অবশ্য সেই মাছের দাম কমানোর উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছেন। এদিকে জেলেরা বলছেন, সাগরে ২৩ জুন পর্যন্ত মোট ৬৫ দিন মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশ শিকারে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ মাছ মিলছে না।
কারওয়ান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল আওয়াল বললেন, ইলিশের দাম এখনও তেমন কমে নাই; সরবরাহও খুব বাড়ে নাই। মাছ হচ্ছে দ্রুত পচনশীল। যদি ইলিশ বেশি ধরা পড়ে, আর দেশের বাইরে রপ্তানি না হয় তাহলে দাম কমবে। এক কেজি ওজনের মাছ ১ হাজারের কাছাকাছি হবে। তবে এর চেয়ে কমবে না।
ইলিশ শিকারের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার বর্ণনায় চাঁদপুরের সম্রাট বেপারি বলেন, এই কয়েকদিন মাছ ধরতে গিয়ে কোনো লাভ হয় নাই। ডিজেলের দাম এতো বেশি যে সেই অনুপাতে মাছ না পেয়ে আমরা হতাশ। দেশের জনসংখ্যা বাড়তেছে, কিন্তু মাছের সংখ্যা নদীতে কমে গেছে। দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ছে, শ্রমিক খরচও বাড়ছে। আগে শ্রমিক নিতে যে খরচ হতো, এখন এর চেয়ে দ্বিগুণ হয়।
মৎস্য উপদেষ্টা ফরিদা আখতার গেল ১১ অগাস্ট সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইলিশ নিয়ে নিজের ভাবনার কথা তুলে ধরেন। বলছিলেন, দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে তারপর ইলিশ রপ্তানি করা হবে। একই সাথে দেশের মানুষ যাতে ইলিশ মাছ পায় এবং দাম কমে, সেই উদ্যোগ নেয়া হবে। দেশের মানুষ ইলিশ পাবে না, আর রপ্তানি হবে সেটা হতে পারে না।
সরকার পতনের আগে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি ইলিশ কিনতে গুনতে হয়েছে হাজার থেকে ১৫০০ টাকা। সরকার বিদায়ের পর সেই দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি দুইশ থেকে আড়াইশ টাকা।
রোববার কারওয়ান বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম শুনে আর দামাদামি করার সাহস হচ্ছিল না ক্রেতা হান্নানের। বাধ্য হয়ে আধা কেজি আকারের ইলিশের দাম জানতে চাইলেন। এই আকারের প্রতি কেজি ইলিশের দাম ১২০০ টাকা শুনে চোখ কপালে ওঠা দশা হান্নানের। বললেন, ফেইসবুকে দেখলাম দাম কম, কিন্তু বাজারে এখনও বেশি।
বিক্রেতা দুলাল চন্দ্রসের উদ্দেশে তিনি বললেন, এতো দাম হলে তো কিনে খাওয়ার উপায় নাই। রপ্তানি বন্ধ হয়েও তো লাভ হলো না। ধরাছোঁয়ার বাহিরে দাম চাচ্ছেন। তখন দুলালকে বলতে শোনা গেল, আমাদের দাম বেশিতেই কিনে আনতে হয়েছে। আমরা তো আপনাকে লস দিয়ে বিক্রি করতে পারব না।
নিজের অভিজ্ঞতা আর ধারণা থেকে হান্নান গণমাধ্যমকে বলেন, এখন ইলিশের মৌসুম চলে, দাম কমার কথা। কিন্তু ব্যবসায়ীদের নিশ্চিত একটা বড় সিন্ডিকেট আছে- যারা দাম কমানোর পক্ষে না। এজন্যই দাম কমতেছে না। নদী থেকে অন্য মাছও তো ধরে, সেগুলোর দাম তো কম; শুধু ইলিশের দামই বেশি।
কারওয়ান বাজারে বছর দশেক ধরে ইলিশের ব্যবসা করা দুলাল চন্দ্রের ভাষ্য, ইলিশের চাহিদা অন্য সকল মাছের চেয়ে বেশি। তাই বাজারে ইলিশ বেশি থাকলেও অতি চাহিদার কারণে দাম বেশিই থাকবে। আর মানুষ বেশি দামেই কিনবে।
সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের শুক্রবারের তথ্য অনুযায়ী, দেশের বাজারে ইলিশের সর্বনিম্ন মূল্য ৮০০ টাকা। এক মাস আগে এই দাম ছিল ৭০০ টাকা এবং এক বছর আগে এই সময়ে সর্বনিম্ন দাম ছিল ৬৫০ টাকা।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল বারী বলেন, নদীতে দূষণ বাড়তেছে, বঙ্গোপসাগর থেকে যেসব জায়গা দিয়ে মাছ ঢুকে ভোলা, হাতিয়া এসব জায়গায় প্রচুর পরিমাণে ডুবোচর তৈরি হয়েছে। এজন্য মাছ সহজে ঢুকতে পারছে না। এছাড়াও বৃষ্টির পরিমাণ কম থাকায় পানির লবণাক্ততা না কাটে তাহলে ইলিশ মাছ আসে না। এরপর নির্বিচারে জাটকা ও মা ইলিশ নিধন করা হয়। এসব নানা কারণে মাছের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।তবে তার কিছু দাবি অনুমানভিত্তিক বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হাসান ফারুক। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আগের চেয়ে ইলিশের পরিমাণ কমছে না, বরং বাড়ছে। তবে প্রবৃদ্ধির হার হয়ত কমেছে। জেলেদের তো অনুমানভিত্তিক কথা। তারা দেখা যাবে এত মাসে কম পেয়েছে, আবার আরেক মাসে বেশি পেয়েছে।
ইলিশের দাম না কমার পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে ডিজেলের উচ্চ মূল্যকে দায়ী করেছেন ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরিচালক মোল্লা এমদাদুল্লাহ। তিনি বলেন, ডিজেলের উচ্চ মূল্যই ইলিশের দাম না কমার অন্যতম কারণ।
একই সুরে মৎস্য গবেষক হাসান ফারুক বলেন, জ্বালানি খরচ অনেক বেড়ে গেছে। একটা বড় বোট যদি সাগরের দিকে গিয়ে ১৫ থেকে ২০ দিন থাকে- তাহলে সেটার খরচ ৫ থেকে ৬ লাখেরও বেশি হতে পারে। আর আগে এই খরচ অর্ধেকেরও মতো ছিল। এজন্য মাছের দাম বেশি।