নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে লঘুচাপের কারনে ভারী বর্ষনে জনজীবন বিপর্যস্ত
বরিশালে সোমবার সকাল ৬টার পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় প্রায় ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পরে ৯টা পর্যন্ত আরো ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে জনজীবন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সকাল ৬টা থেকে ৯টার মধ্যেই ২১ মিলি বৃষ্টি ঝড়িয়েছে। ফলে বরিশাল অঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন থেকে যে প্রায় ২৪ লাখ টন চাল পাবার লক্ষ্য রয়েছে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তাও ক্রমশ বাড়ছে। বরিশাল নগরীর প্রায় পুরোটাই আবার জলাবদ্ধতা কবলে। নগরীর প্রায় সবগুলো সড়কই পানির তলায়। নবগ্রাম রোডসহ কয়েকটি সড়কে পানি হাটু অতিক্রম করেছে। নগরীর পশ্চিমাংশের সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী এ সড়কটিতে সোমবার বিকেল পর্যন্ত যানবাহন চলাচলও প্রায় বন্ধ ছিল। সড়কটির পাশের ফুটপাতও ডুবে যাওয়ায় পথচারীদের দূর্ভোগ চরমে। নগরীর অনেক বাড়িঘরেও পানি ঢুকে পড়েছে।
গত সপ্তাহধিককালের লাগাতর মাঝারী থেকে প্রবল বর্ষণে বরিশালর ও সন্নিহিত এলাকার হাজার হাজার পুকুর ও দিঘি প্লবিত হয়ে লক্ষ লক্ষ মাছ সহ পোনাও বেরিয়ে গেছে। সর্বশান্ত এ অঞ্চলের মৎস্যচাষীগণও। বরিশাল সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছধরা নৌকা ও ট্রলারসমুহকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচলেরও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
ভাদ্রের পূর্ণিমার ভরা কাটালের মাঝারী থেকে ভারী বর্ষণ মরা কাটাল পোরিয়ে ক্রমাগত আসন্ন বড় অমাবশ্যা ছুতে চলেছে। সে অবস্থা সৃষ্টি হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। যদিও আবহাওয়া বিভাগ গত সপ্তাহাখেনক ধরেই ‘বর্ধিত ৫দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবনতা হ্রাস পেতে পারে’ বলে পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে। সোমবারও একই বার্তা দেয়া হয়েছে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে। কিন্তু গত এক সপ্তাাহেও বর্ধিত পাঁচ দিনের দেখা মেলেনি। বৃষ্টিপাত প্রবনতা হ্রাসের পূর্বাভাসের সাথে বাস্তবতার কোন মিল লক্ষ্য করা যায়নি।
ফলে সামনের কয়েকটি দিন বৃষ্টিপাত পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে যাবে তা নিয়ে শংকিত বরিশালের সাধারন মানুষ সহ কৃষি যোদ্ধাগনও। চলতি খরিফ-২ মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে ৮ লাখ ৮১ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ২৪ লাখ টন আমন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জনে কৃষকগন অতিরিক্ত বীজতলা তৈরী করলেও তার প্রায় পুরোটাই গত সপ্তাহধীককাল ধরে প্লাবনের কবলে। ইতোমধ্যে যে প্রায় আড়াই লাখ হেক্টরে আমনের রোপন সম্পন্ন হয়েছে তাও পানির তলায়। ফলে পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে তা নিয়ে শংকিত কৃষককুল।
পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বরিশাল অঞ্চলের ২৩টি গেজ স্টেশনে নদ-নদীর পানির পর্যবেক্ষন করে লালমোহন এবং দৌলতখানে মেঘনা ও সুরামা বাদে ২০টি স্থানেই পানি বিপতসীমার নিচে পবাহিত হচ্ছে বলে জানান হয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ থেকে বরিশাল ও সন্নিহিত এলাকায় নতুন করে একটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে। বরিশাল ও সন্নিহিত নদী বন্দরসমুহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘন্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া সহ বৃষ্টি এবং বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পায়রা বন্দরকেও আবার ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেতের আওতায় আনা হয়েছে।তবে সোমবারও ৩দিনের পূর্বভাসে বরিশাল সহ গোটা উপকূলীয় এলাকাতেই অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া সহ বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টির পাশাপাশি কোথাও কোথাও মাঝারী ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির কথা বলা হয়েছে আবহাওয়ার বুলেটিনে। পাশাপাশি গত এক সপ্তাহের মত করেই সোমবারের বুলেটিনেও বর্ধিত ৫দিনে ‘বৃষ্টিপাতের প্রবনতা হ্রাস পেতে পারে’ বলে জানান হয়েছে।
বছরের শুরু থেকেই জুলাই মাসেও বরিশালে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০.৬% বৃষ্টিপাতের ঘাটতি থাকলেও চলতি মাসে পূর্বাভাসকৃত ৩৫০ থেকে ৩৯০ মিলিমিটারের চেয়ে অনেক বেশী বৃষ্টিপাতের পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে ইতোমধ্যে।
ফলে স্বাভাবিক জনজীবনে ভয়াবহ বিপর্যয়ের পাশাপাশি ১৪ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত বরিশাল কৃষি অঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন ও উঠতি আউশ সহ গ্রীষ্মকালীন সাক-সবজির ক্ষেত্রে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। সদ্যসমাপ্ত খরিফ-১ মৌসুমে বরিশালে লক্ষ্যত্রার ৬০ ভাগ জমিতেও আউশের আবাদ সম্ভব হয়নি অনাবৃষ্টি সহ গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’র প্রভাবে অতি বর্ষণের কারণে। কিন্তু সে আউশ ঘরে তোলার সময়ই প্রবল ও অতি বর্ষণে পাকা ধান পানির তলায়।
সোমবার বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালায় বরিশাল ও তৎসংলগ্ন আকাশ ঢেকে আছে। হালকা থেকে মাঝারী বর্ষণও অব্যাহত ছিল।