ধর্ম ডেস্ক :: মায়ের কবর জিয়ারত করে যা বলেছিলেন নবীজি
মা সবচেয়ে মধুর শব্দ। যে শব্দে জড়িয়ে আছে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। মায়ের ভালোবাসা ও স্নেহ কখনও ভোলা যায় না। এর ব্যতিক্রম হয়নি প্রিয় নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্ষেত্রেও। তিনিও মায়ের ভালোবাসায় ব্যাকুল হয়ে যেতেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে মাকে হারান
মৃত মুসলমানের জন্য দোয়া করা, মৃত্যুর কথা স্মরণ করা সুন্নত ও সওয়াবের কাজ। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়ই সাহাবিদের কবরস্থান জান্নাতুল বাকিতে যেতেন এবং বেশ কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করতেন, কবরবাসীদের জন্য দোয়া করতেন
একবার নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের নিয়ে তার মা আমেনা বিনতে ওয়াহাবের কবর জিয়ারত করেছিলেন। সেখানে মায়ের কথা মনে করে তিনি কেঁদে ফেলেন, তাকে কাঁদতে দেখে সঙ্গে থাকা সাহাবিরাও কেঁদে ফেলেন।
বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হোরায়রা (রা.) ঘটনাটি বর্ণনা করে বলেন, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়ের কবরে গেলেন। সেখানে তিনি নিজেও কাঁদলেন এবং তার আশপাশে যারা ছিল তাদেরও কাঁদালেন। তারপর বললেন,
اسْتَأْذَنْتُ رَبِّي فِي أَن أسْتَغْفر لَهَا فَلم يُؤذن لي ن وَاسْتَأْذَنْتُهُ فِي أَنْ أَزُورَ قَبْرَهَا فَأُذِنَ لِي فَزُورُوا الْقُبُورَ فَإِنَّهَا تُذَكِّرُ الْمَوْتَ অর্থ: আমি আমার মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে আল্লাহর কাছে অনুমতি চাইলাম। কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হলো না। তারপর আমি আমার মায়ের কবর জিয়ারতের অনুমতি চাইলাম। আমাকে অনুমতি দেয়া হলো। তোমরা কবর জিয়ারত করো। কারণ কবর মৃত্যুর কথা মনে করিয়ে দেয়। (মুসলিম: ৯৭৬)
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মা যেহেতু নবীজির নবুয়্যত পাওয়ার অনেক আগেই মারা গিয়েছিলেন। তাই তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুমতি নবীজিকে দেয়া হয়নি।
বিখ্যাত সাহাবি হজরত আনাস (রা.) বলেন, জনৈক ব্যক্তি আল্লাহর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রসুল! আমার পিতা কি জান্নাতে আছেন নাকি জাহান্নামে? আল্লাহর রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জাহান্নামে। লোকটি যখন ফিরে যাচ্ছিল, তখন নবীজি তাকে ডাকলেন এবং বললেন, আমার পিতাও তোমার পিতার মতো জাহান্নামে। (মুসলিম: ৩৯৪)
মুসলিম শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থে এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী (রহ.) বলেছেন, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বোঝাতে চেয়েছেন, যারাই কাফের অবস্থায় মারা যাবে, তারা জাহান্নামে যাবে। কোনো আত্মীয়তা বা সম্পর্ক কোনো উপকারে আসবে না।
উপরোক্ত হাদিসের জবাবে ইমাম রাজী (রহ.) বলেন,
যারা জাহান্নামি হওয়ার দাবি করেন। তাদের দলিল হলো মুসলিম, আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমাদের হাদিস। যাতে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিতামাতার জন্য নবীজীকে দোয়া করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ হাদিসের জবাব হলো, এটি নবীজি বলেছেন তার পিতামাতার আসল অবস্থা সম্পর্কে না জানার কারণে। আসলে তারা জান্নাতি। (রদ্দুল মুহতার, মুরতাদ অধ্যায়-৪/২৩১)
তিনি আরও বলেন, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিতামাতা মুশরিক বা পৌত্তলিক ছিলেন না। তারা এক আল্লাহকে বিশ্বাস করতেন এবং হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর ধর্ম ‘হানিফ’ ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। তারা মূর্তিপূজা করেছেন মর্মে কোনো প্রমাণ নেই। তাদের নামও প্রমাণ করে তারা মুশরিক ছিলেন না। (প্রাগুক্ত)
ইবনে হাজার হাইছামী (রহ.) বলেন, ‘আরবি ভাষায় أب (পিতা) শব্দ দ্বারা চাচাকেও বুঝানো হয়। সুতরাং হাদিসে যে ‘আমার পিতা’ বলা হয়েছে- এর দ্বারা উদ্দেশ্য চাচা আবু তালেব।’ (আলমানহুল মাক্কিয়্যা ১০২)
হাদিস বেত্তাগণ বলেন, উক্ত হাদিসদ্বয় ‘খবরে অয়াহিদে’র অন্তর্ভুক্ত। আর এ শ্রেণীর হাদিস দ্বারা আকিদা-বিশ্বাস প্রমাণিত হয় না। সুতরাং এর ওপর নির্ভর করে নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিতামাতাকে জাহান্নামি হিসেবে বিশ্বাস করা ঠিক হবে না। এ বিষয়ে সবচেয়ে নিরাপদ হচ্ছে-- নীরবতা পালন করা। এটিই উত্তম।