নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে বাড়ছে পথশিশুর সংখ্যা। আর এসব শিশু বিভিন্নভাবে ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষার চেয়ে ভিক্ষায় বেশি আগ্রহী বরিশালের পথশিশুরা। স্কুল ফাঁকি দিয়ে রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে প্রতিদিন ভিক্ষা করছে এসব শিশু। ওদের ভিক্ষা চাওয়ার আবদারে বিব্রত হয়ে শেষ পর্যন্ত দু-একজন নগরবাসী ৫ থেকে ১০ টাকা ধরিয়ে দিচ্ছেন তাদের।
এদিকে শহরে পথশিশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও এসব শিশুর স্কুলে ফেরাতে বা সমস্যার সমাধানে কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না কর্তৃপক্ষকে। ফলে দিন দিন নগরীতে বেড়েই চলেছে শিশু ভিক্ষুকদের সংখ্যা।
অন্যদিকে দিন দিন অব্যাহতভাবে বরিশালে শিশুশ্রম বেড়েই চলছে। বরিশালের বিভিন্ন কলকারখানা, বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সব জায়গায় এখনো বেআইনিভাবে শিশুদের নিয়োগ দেওয়া হয়। শিশুশ্রম বন্ধে কঠোর আইন থাকলেও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না।
দারিদ্র্য, অশিক্ষা আর পেটের দায়ে কখনো অটোরিকশার চালকের আসনে, কখনো ভাঙারি দোকানে, কখনো বাসের হেলপার আবার কখনো কখনো হোটেল-রেস্তোরাঁয় কাজ করতে দেখা যায় ১০ থেকে ১২ কিংবা ১৪ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের।
নারী ও শিশু শ্রমিকদের প্রতি নজর দিতে হবে। সরকারিভাবে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ হলেও শিশুদের কাজে নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়ায় দিন দিন শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েই চলছে।
হৃদয় নামে ১৪ বছর বয়সী এক রিকশাচালকের সঙ্গে কথা হয়। সে জানায়, তার বাবা অন্যত্র বিয়ে করে চলে যাওয়ায় দুই ভাই-বোন আর মাকে নিয়ে সংসার চালাতেই রিকশার সিটে উঠেছে সে।
নগরীর ভাটারখাল এলাকার মোটর মেকানিকের দোকানের কর্মচারী রহিম নামে এক শিশু শ্রমিক জানায়, তারা পাঁচ ভাই ও দুই বোন। বাবা রিকশাচালক। তাই এখানে কাজ করে যা পায়, তা দিয়ে সংসারে সাহায্য করে সে। শুধু সোনিয়া বা রহিমই নয়, নগরীতে সহস্রাধিক শিশু শ্রমিক নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, হোটেল ও গ্যারেজে কাজ করছে।
এ ব্যাপারে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর বরিশালে ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল হিমন কুমার সাহা বলেন, বরিশাল নগরীতে ৮০০-এর মতো শিশু শ্রমিক শনাক্ত করেছেন। যাদের মধ্য থেকে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে বিড়ি কারখানার ৪১০ জন, লেদার ওয়ার্কশপের ১২ জন, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে ৩৭ জন এবং বিভিন্ন বেকারির ৪৫ জন শিশু শ্রমিক নিরসন করতে সক্ষম হয়েছেন তারা।
বরিশাল বিএম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মোরশেদা নাজনিন বলেন, ‘শিশুরা অনেক কিছুই জানে না বা বোঝে না। মা-বাবা বা অন্যরা শিশুদের ব্যবহার করে সহানুভূতি আদায় করে ভিক্ষা করছে। শিশুরা ছোট থেকে এ ধরনের কাজে নিয়োজিত থাকার ফলে তারা পরনির্ভরশীল হয়ে ওঠে। পরে তারা এখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। শিশুকাল থেকে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িত থাকার কারণে তাদের মানসিক গঠন ঠিকমতো হয় না। শিশু ভিক্ষুকদের শিক্ষার আলোয় এনে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।’
বরিশাল সমাজসেবার সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, যারা শিশুদের স্কুলে না পাঠিয়ে ভিক্ষা করাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। শিশু আইনে উল্লেখ আছে, কোনো শিশু ভিক্ষা করতে পারবে না।
বরিশাল জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘যারা স্কুল ও মাদ্রাসা ফাঁকি দিয়ে ভিক্ষা করছে তাদের ঘরে ফেরানোর দায়িত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষের। এসব শিশুর সুরক্ষার জন্য প্রথমে কাউন্সেলিং করতে হবে। যেসব শিশু নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে, এদের এখন সঠিক পথে পরিচালিত করতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংস হবে। তাই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শিশু ভিক্ষা বন্ধ করতে হবে।’