নিজস্ব প্রতিবেদক :: অনিয়ম-দুর্নীতির ‘বরপুত্র’ ছিলেন বরিশালের সাবেক মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাইয়ের ছেলে হওয়ার সুবাদে অনিয়ম-দুর্নীতির ‘বরপুত্র’ ছিলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে একতরফা জয় পান সাদিক।
পরের বছর মহানগর আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও সিনিয়র নেতাদের বাদ দিয়ে সাধারণ সম্পাদকের পদও বাগিয়ে নেন তিনি। মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নকশাবহির্ভূত নির্মাণের কারণ দেখিয়ে বাড়ি ভেঙে দেওয়া, জরিমানার নামে টাকা আদায়, ব্যবসায়ীদের কাছে কমিশন দাবি, ভবন নির্মাতাদের কাছে ফ্ল্যাট দাবি, রাজনৈতিক বিরোধীদের মারধর, কথায় কথায় সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করাসহ বহু অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে সাদিকের বিরুদ্ধে। তার নির্দেশে না চললে হয়রানি ও মিথ্যা মামলায় জেল পর্যন্ত খাটাতে হয়েছে অনেককে। পূজা উদযাপন পরিষদের কমিটি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি, বরিশাল ক্লাবও দখল করেছেন তিনি।
কিন্তু এত কিছুর পরেও কেউ টু শব্দ করতে পারেনি তার বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, মেয়র এবং সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়ে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন সাদিক আবদুল্লাহ। তার অনুগতরা পান আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের পদপদবি। তার বিরোধিতা করলে শুধু অপমান, হয়রানি, মামলা নয়, নকশাবহির্ভূত নির্মাণের অভিযোগ তুলে বাড়িতে সিটি করপোরেশনের বুলডোজার চালানোর ভয়ে সবাই চুপ থাকতেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাদিক মেয়র থাকাকালীন বরিশালে যারাই ভবন নির্মাণ করেছে, তাদের কাছে কমিশন হিসেবে ফ্ল্যাট অথবা ফ্লোর চাইতেন তিনি।
না দিলে সিটি করপোরেশনের লোক পাঠিয়ে কাজ বন্ধ করে দিতেন। এমনকি নিজের মামার নির্মাণাধীন পাঁচতলা ভবনেও অংশীদারত্ব চেয়েছিলেন সাদিক। এছাড়া আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারি করা জমি ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক দখল করে নিজের মায়ের নামে করেন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহান আরা বেগম পার্ক’। এ সময় বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও তার তোয়াক্কা করেননি সাদিক।
সাদিকের ভয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারেনি। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থানের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর থেকে আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর। সাদিক দেশে আছেন নাকি দেশ ত্যাগ করে পালিয়েছেন তা নিয়ে এখন সবার মাঝেই কৌতূহল।