হাফিজ স্বাধীন :: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ বরিশালের তাইবুর : খোঁজ নেইনি কেউ, শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি।
গত ৪ আগস্ট বরিশালে 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে' গুলিবিদ্ধ আহত শিক্ষার্থী মোঃ তাইবুর রহমান এর কেউ খোঁজ খবর নেয়নি। এখন পর্যন্ত পায়নি অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্যাগে সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা বা আর্থিক সহায়তা। ক্ষুদ্র ব্যবসার পুঁজি ও পৈতৃক জমি ও গাছ বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ টাকা ব্যয় করেছি। অর্থের অভাবে ছেলের সুচিকিৎসা সহ নিজ উদ্যাগে প্রয়োজনীয় ঔষধ কিনে দিতে পারছিনা। সুচিকিৎসার অভাবে নানা রোগে অসুস্থ হয়ে পড়ছে তাইবুর। তাই ১৪ নভেম্বর ভর্তি করেছি বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। শনিবার (১৬ নভেম্বর) চিকিৎসাধীন তাইবুরের বেড শয্যার পাশে বসে তার বাবা মোঃ মাইনুল খান ও মা মোসাঃ তাসলিমা বেগম 'হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় অশ্রুভরা চোখে' প্রতিবেদকের কাছে এমন তথ্য ব্যক্ত করেন।
অসুস্থ তাইবুর জানায়, গত ৪ আগস্ট বরিশাল সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এলাকায় 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন' চলাকালীন সময় ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। বিপরীত দিক থেকে আসা 'ছড়া গুলিতে' ক্ষত-বিক্ষত হয় মাথা ও পিঠ সহ পুরো শরীর। ওই দিনই তাকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভর্তি করলেও পরে উন্নত চিকিসার জন্য ঢাকা প্রেরণ করা হয়। বরিশাল ইসলামিয়া কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র তিনি। তার পিতা পেশায় একজন চা-বিস্কুটের ক্ষুদ্র দোকান ব্যবসায়ী এবং মা গৃহীনি। নগরীর কাউনিয়া হাউজিং এলাকার আব্দুল হাই মিয়ার ভাড়াটিয়া এবং বরিশাল বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুধল ইউনিয়নের সতরাজ গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা।
তিনি আরো বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের উন্নত চিকিৎসার চেষ্টা চলছে- ১১ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ। অন্যদিকে, ১৪ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের বিশেষ সহকারী মো. সায়েদুর রহমানের সাথে সচিবালয়ে আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় উপদেষ্টা ও একজন বিশেষ সহকারী। বৈঠক শেষে সরকারের পক্ষ থেকে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরা হয়।
তাছাড়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনের নেতারা আহত শিক্ষার্থীদের পাশে থেকেছে এবং থাকছে কিন্তু আমার সুচিকিৎসা বা আর্থিক সহায়তার বেলায় বৈষম্য হয় কেন ? তা বুঝে উঠতে পারছি না। আমি বাঁচতে চাই। আমার শরীর থেকে এখনও সব গুলি উঠানো হয়নি। তারমধ্যে আবার এখন ভুগতেছি জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্ট ও পেটে ব্যাথা রোগে। যে কারণে আবারো হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।
মাইনুল খান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছেলের মাথা সহ পুরো শরীরজুড়ে রয়েছে ছড়া গুলির ক্ষত-বিক্ষতর চিহ্ন। ব্যবসার ক্যাশ টাকা খরচ করে ছেলের চিকিৎসা করিয়েছি। কিন্তু পাইনি কোন ব্যক্তি বা দপ্তরের সহযোগিতা। অন্তবর্তীকালীন সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত প্রায় সকল শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যয় বহন করলেও আমার ছেলের বেলায় তা জুটেনি। ব্যবসার মূলধন, জমি ও গাছ বিক্রির অর্থ ব্যয় করে এখন মানবেতর জীবন যাপন করছি। শুধুমাত্র এলাকা থেকে ১০ হাজার আর বরিশাল ইসলামিয়া কলেজ থেকে ৫ হাজার টাকা পেয়েছি। এছাড়া এখন পর্যন্ত কেউ আর্থিক সহায়তা করেনি এবং খোঁজ খবর নেয়নি।
মোসাঃ তাসলিমা বেগম বলেন, তাইবুর মেধাবী ছাত্র। অসুস্থ শরীর নিয়ে ঢাকায়ও কোচিং করছিল। কিন্তু সে বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তার শরীর থেকে ছড়া গুলির ছোট ছোট 'কার্তুজ' আমি নিজেও উঠিয়েছি। সেই গুলিও আমার কাছে রয়েছে। ছেলের সুস্থতা ও ভবিষ্যত উজ্জল হোক এটাই অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আমার চাওয়া পাওয়া। কারণ, সংসারে ২ ছেলের মধ্যে তাইবুর বড়। ছোট ছেলে এখনও শিশু। সংসারে হাল ধরার কেউ নেই। ব্যবসার অর্থ সহ জমি ও গাছ বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসায় ব্যয় করেছি। এখন অভাব অনটনের মধ্যে জীবন-যাপন করতেছি।