নিজস্ব প্রতিবেদক :: ষড়যন্ত্র করে জামায়াতের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে, ডা. শফিকুর রহমান।
যারাই দেশপ্রেমিক ছিল, বিগত সময়ে তাঁদেরকে হত্যা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। আজ (শুক্রবার ৬ ডিসেম্বর) সকালে কুমিল্লা টাউনহল মাঠে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, 'বিগত সময়ে ষড়যন্ত্র করে জামায়াতের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ পালাবার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত মানুষ হত্যা করেছে।
৫ আগস্টের পর আমরা বলেছি আমরা আইন হাতে তুলে নিয়ে প্রতিশোধ নেব না। কিন্তু আমরা প্রতিটি ঘটনার বিচার চাই। যারা এই দেশে জন্মগ্রহণ করেছে, সবাই এই দেশের নাগরিক। এ দেশে সংখ্যালঘু বলতে কিছু নেই।
বিগত সময়ে এ দেশের অন্য ধর্মের মানুষদের সংখ্যালঘু বলে বৈশ্বিক দরবারে ফায়দা লুটে নেওয়া হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিবে, এটি পুরো জাতির প্রত্যাশা। আমরা আপনাদেরকে চাপ দিচ্ছি না। কিন্তু সংস্কারের নামে যেন কালক্ষেপণ না হয় সেদিকেও আপনাদেরকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
দেশ গড়তে হবে চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ মুক্ত মানুষ দিয়ে। আমরা জনগণের উপর আস্থা রাখি। জনগণ অতীত দেখে সিদ্ধান্ত নেবে, তাঁদের খাদেম হিসেবে কাকে বেছে নেবে। আগামী নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট ও টাকার শক্তি চলবে না।'
ভারত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'ভারতের অভ্যন্তরীণ কোন বিষয়ে আমরা তো হস্তক্ষেপ করিনি।
এরপরও তাঁরা আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ করছে। ভারতকে স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, আমরা তাদের কোনো আগ্রাসনকে সহ্য করব না।'
জামায়াতের আমীর বলেন, 'বলা হয়ে থাকে জামায়াত ক্ষমতায় গেলে মহিলাদেরকে ঘরের বাইরে আসতে দেবে না। আমরা বলতে চাই, জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীরা সর্বোচ্চ মর্যাদা ও নিরাপত্তায় থাকবে। রাসূল (সা.) যুদ্ধের ময়দানে নারীদের সুযোগ দিয়েছেন যুদ্ধ করার জন্য, তাহলে আমরা কে ঘরের মধ্যে নারীদের তালাবদ্ধ করে রাখার? নারীরা অবশ্যই ঘর থেকে বের হবে, কারণ তাদেরও সামাজিক দায়িত্ব রয়েছে।'
কুমিল্লা বিমানবদ্ধ চালু এবং কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়ন যৌক্তিক দাবি উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'আমরা বর্তমানে সরকারের কাছে এই যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণের দাবি জানাচ্ছি। বিগত সময়ে কুমিল্লার মানুষ বিভাগ পায়নি শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে। শেখ হাসিনা কুমিল্লাকে যেভাবে অপমান করেছেন, কুমিল্লার সেই সম্মান ফিরিয়ে দিতে হলে অনতিবিলম্বে কুমিল্লা বিভাগ ঘোষণা করতে হবে।'
জামায়াতের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমরা কথা দিচ্ছি জনগণ জামায়াতে ইসলামীকে রায় দিলে দেশের একজন মানুষও বৈষম্যের শিকার হবেন না। আমরা দুর্নীতি করব না, কাউকে করতেও দেব না। মসজিদ, মন্দিরসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পাহারা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।'
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, 'বিগত সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। নৈতিকতাহীন শিক্ষা জাতির জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামীতে শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। এক সময় এদেশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ আসতে শিক্ষার জন্য। আর এখন আমাদেরকে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে ছুটতে হচ্ছে। সামনে এই ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। বাংলাদেশেই বিশ্বের মানুষ আসবে উচ্চ শিক্ষার জন্য।'
গণমাধ্যম নিয়ে তিনি বলেন, 'মিডিয়া হচ্ছে জাতির বিবেক। আপনাদেরকে সেই বিবেককে কাজে লাগাতে হবে। বিগত সময়ে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখা হয়েছে। এখন সেই পরিস্থিতি নেই। আপনারা সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলুন। খোলা মনে, খোলা চোখে বাস্তবতা দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে হবে। আমাদের বক্তব্য আংশিক বা বিকৃত করে প্রকাশ করবেন না। দয়া করে আমরা যেটা বলি সেটাকে অবিকল প্রকাশ করবেন।'
কর্মী সম্মেলনের প্রধান বক্তা ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও চৌদ্দগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ আব্দুল্লাহ মু. তাহের। বক্তব্যে তিনি কুমিল্লা নামে বিভাগ ঘোষণা ও কুমিল্লা বিমানবন্দর চালুর দাবি জানান। এছাড়া ভারতের বিভিন্ন আগ্রাসন বিরোধী বক্তব্য রাখেন।
কুমিল্লা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, মাওলানা আব্দুল হালিম, নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসাইন, মুহাম্মদ আবদুর বর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য জসিম উদ্দিন সরকার। সম্মেলনে কেন্দ্রীয় এবং কুমিল্লা দক্ষিণ ও উত্তর জেলাসহ আশপাশের জেলার নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।