নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালের পোর্টরোডে বাজার ছেড়ে সড়ক দখল, চৌমাথা ও বাংলা বাজারে একই চিত্র : ভো*গান্তিতে সাধারণ মানুষ।
নগরীর অন্যতম ব্যস্ত সড়ক পোর্টরোড। এটি বরিশালের ব্যস্ততম একটি বাণিজ্যিক এলাকা। পোর্টরোডের পুরো সড়ক জুড়েই দখল নিয়েছে ভাসমান বাজার ব্যবসায়ীরা। ফলে সড়কটিতে চলাচলে ভোগান্তি পড়ছেন সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন যানবাহনের চালকেরা।
অভিযোগ রয়েছে, ঘাট ইজারা দারদের যে সিন্ডিকেট রয়েছে তারাই এই ভাসমান বাজার বসিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আর সিটি করপোরেশন বলছে, পোর্টরোডসহ অন্যান্য স্থানের এমন ভোগান্তি দূর করতে ব্যবস্থা নেবে তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, বরিশাল নগরীর পোর্টরোড সড়কে পোর্টরোড পাইকারি মৎস্য আড়ত ও পাইকারি কাঁচাবাজার বসেছে। কিন্তু ঘাট ইজারাদার ও ব্যবসায়ীরা বাজারের ভেতরে না বসে তারা চলে এসেছে মূল সড়কে। সড়কটি দখল করে বসেছে মাছ, সবজিসহ প্রায় ২০০ ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী।
এছাড়াও নগরীর চৌমাথা বাজার, বাংলা বাজারেও দেখা যায় একই চিত্র। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ওইসব সড়কে চলাচল করা সাধারণ মানুষের। যানবাহন চলাচলে সৃস্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজটের। আর স্টল ভাড়া নিয়ে দোকান পরিচালনা করতে পারছেন না স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘সড়কটির দুই পাশ দখল করে কাঁচাবাজার ও মাছসহ বিভিন্ন বাজার বসেছে। রাস্তা থেকে হাঁটা যায় না। যানজটের সৃষ্টি হয়। মানুষ এখন রাস্তার মাঝখান থেকে হাঁটছে। আমরা মোটরসাইকেল নিয়ে এসে এখানে পার্কিং করতে পারছি না। তারা সড়ক দখল করে আবার আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে।’
এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা লাখ লাখ টাকা দিয়ে দোকান দিয়েছি। কিন্তু দোকানের সামনে বাজার বসানোর কারণে আমরা ব্যবসা করতে পারছি না।’
পোর্টরোড বাজারে ভেতরে সেড থাকলেও ইজারাদারদের ইশারায় সড়ক দখল করে ব্যবসা করছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, প্রতিদিন সিটি করপোরেশনকে ৫০ টাকা খাজনা দিয়ে ব্যবসা করেন তারা। এছাড়া নগরীর বাংলাবাজার, চৌমাথা বাজারের সামনের সড়ক দখল করেছেন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা। এতে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যানজট লেগেই থাকে।
রাস্তায় দোকান নিয়ে বসা এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা বাজার ইজারাদারদের ৩০-৫০ টাকা করে দেই। বাজারের ভেতরে বসার পরিবেশ না থাকায় আমরা রাস্তায় বসি। তবে তাও সিটি করপোরেশনের স্লিপে টাকা দিয়ে। সাবেক ঘাট ইজারাদার, তার লোকেরা আমাদের কাছ থেকে এখনও টাকা নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের যেখানে বসাবে আমরা সেখানেই যাব।’
স্থানীয় বাজার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যারা ঘাট ইজারা নিয়েছে তাদের লোকজনই এখন রাস্তায় বাজার বসিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এর মধ্যে নগরীর পোর্টরোড ঘাটের একক নিয়ন্ত্রণে ছিল আওয়ামী লীগ নেতা নীরব হোসেন টুটুলের কাছে। ২০২৩ সালে সিটি নির্বাচনের পর নেতৃত্বের পালা বদল হলে এই ঘাটের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় আরেক আওয়ামী লীগ নেতা খান হাবিবের হাতে। আর বিসিসির দরপত্র আহ্বানের মধ্য দিয়ে চলতি বছরের জুন থেকে আগামী বছরে জুন পর্যন্ত খান হাবিব তাঁর স্ত্রীর নামে এই ঘাটের ইজারা পান। ঘাট নিলেও রাস্তা দখল করে গড়ে তোলে বিশাল বাজার বলে দাবি স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের।
পোর্টরোড মৎস্য মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল সিকদার বলেন, ‘ইজারাদার খান হাবিব বিআইডব্লিউটিএ এর কাছ থেকে বাজার ইজারা নেন। কিন্তু বাজারের সামনের সড়কটি দখল করে বাজার বসিয়েছেন তারা। কিন্তু সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমরা বিআইডব্লিউটিএ ও সিটি করপোরেশনকে জানিয়েছি কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। পাইকারি বাজার ইজারা দিয়েছে সিটি করপোরেশন কিন্তু সব এখন রাস্তার উপরে উঠেছে।’
দখলদারিত্ব ও যানজট নিরসনে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশন। তবে এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএরও উদ্যোগ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল বারী বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। তবে বর্তমানে আমাদের সিটি করপোরেশনে ম্যাজিস্ট্রেট নেই। আমরা ডিসি অফিসের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করি। পোর্টরোডের বিষয়ে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নেব। ইজারাদারকেও আমরা এ বিষয়ে জানিয়েছি। তবে বিআইডব্লিউটিএ কে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।