নিউজ ডেস্ক :: তপশিল ঘিরে ব্যস্ত নির্বাচন কমিশন
নির্বাচন কমিশন (ইসি) জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সবধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে। এখন তপশিল ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছে কমিশন। এরই মধ্যে তপশিল ঘোষণার বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সম্মতি নেওয়া হয়েছে। যে কোনো দিন সভার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন হওয়ার পর ঘোষণা দেওয়া হবে ভোটের তারিখ। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী মঙ্গল অথবা বুধবারই জাতীয় নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করা হবে। সেক্ষেত্রে আজ রোববার সভার বিষয়ে কমিশনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। ইসির একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এবার তপশিল অনুমোদন ও ঘোষণা একই দিন হতে পারে। অর্থাৎ কমিশন সভা যেদিন হবে, সেদিনই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) বক্তব্য রেকর্ড এবং একই দিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের মাধ্যমে তপশিল ঘোষণা করা হবে। এখন সিইসির ভাষণ প্রস্তুতি ও নিজেদের মধ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সিইসিসহ অন্য কমিশনাররা
বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অনড় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে, সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে সরকারবিরোধী বিএনপি ও তাদের মিত্ররা। দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল ও জোটের বিপরীতমুখী এমন অবস্থানের মধ্যেই নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। গত বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি তুলে ধরে হাবিবুল আউয়াল কমিশন। এ সময় রাষ্ট্রপতি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে তপশিল ঘোষণা ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দেন ইসিকে। এখন শুধু তপশিল ঘোষণা এবং সে অনুযায়ী সব কাজ সম্পন্ন করার অপেক্ষা।
এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করতে আমরা বদ্ধপরিকর। শিগগিরই তপশিল ঘোষণা করা হবে। যে কোনো মূল্যে নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচনে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য ডিসি-এসপিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ইসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন করতে হবে কমিশনকে। ১ নভেম্বর থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনাও শুরু হয়ে গেছে। তপশিল ঘোষণার জন্য ইসির হাতে খুব বেশি সময় বাকি নেই। এ অবস্থায় আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যে এখনো কোনো ধরনের সমঝোতার সম্ভাবনা দেখা না গেলেও শেষ পর্যন্ত সংবিধানে দেখানো পথেই হাঁটতে যাচ্ছে আউয়াল কমিশন। সেক্ষেত্রে কোনো দল নির্বাচনে না এলেও তাদের কিছু করার থাকছে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ অন্য কমিশনাররা এরই মধ্যে সাংবিধানিক দায়িত্বের কথা স্পষ্ট করেছেন।
সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বর্তমান পরিস্থিতি নির্বাচনের সম্পূর্ণ অনুকূল না হলেও কিছু করার নেই বলে মন্তব্য করেন সিইসি নিজেই। চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের সামর্থ্য ও ম্যান্ডেট কোনোটাই কমিশনের নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, দলগুলোকেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সংকটের সমাধান করে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। নির্বাচনের পরিস্থিতি সবসময় শতভাগ অনুকূলে থাকে না। তবু সাংবিধানিক দায়িত্ব ও শপথের কারণে কমিশনকে ভোট আয়োজন করতে হবে।
এর আগে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী আগামী বছরের জানুয়ারির ২৯ তারিখের মধ্যে যেভাবেই হোক নির্বাচন হতে হবে। তা না হলে একটি সাংবিধানিক গ্যাপ (শূন্যতা) তৈরি হবে। যদি গ্যাপ তৈরি হয়, তাহলে দেশে একটা অরাজকতা সৃষ্টি হবে। কমিশন তা হতে দিতে পারে না।
ভোটের প্রস্তুতি হিসেবে এরই মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে। দেশে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইনি কাঠামোতে বেশ কিছু সংস্কার করা হয়েছে। সংসদীয় আসনের পুনর্বিন্যাসের কাজ শেষ। নতুন দলের নিবন্ধনের কাজও শেষ। ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। এবার ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ১০৩টি। আর ভোটকক্ষের সংখ্যা ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১৪টি। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষার কাজ শেষ। ভোট-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণসহ আরও কিছু কাজ চলমান রয়েছে।
তপশিল ঘোষণার পর ভোটকেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকা, আসন অনুযায়ী ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ঠিক করার কাজ চলছে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে পর্যবেক্ষক নিবন্ধনের প্রাথমিক ধাপ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে আরও কিছু পর্যবেক্ষক সংস্থাকে নিবন্ধন দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। চূড়ান্ত হয়েছে বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালাও। সংবাদ সংগ্রহে মোটরসাইকেলের অনুমতি দিয়ে সাংবাদিক নীতিমালাও সংশোধন করা হয়েছে। গত ৪ নভেম্বর এক সংলাপের মাধ্যমে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে ডেকে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে ইসির সর্বশেষ প্রস্তুতি প্রজেক্টরের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।এবার নির্বাচনী দায়িত্বে থাকবেন ৯ লাখের বেশি সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা। নির্বাচনী সরঞ্জাম কেনাকাটা, বিভিন্ন দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের ভাতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভাতা মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা খরচ হবে। এর বাইরে নির্বাচনী প্রশিক্ষণে খরচ হবে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেশি।
গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ছিলেন মোট ৬ লাখ ৮ হাজার সদস্য। নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে ভোটকেন্দ্রে থাকেন পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। ভোটকেন্দ্রের বাইরে থাকে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ডের মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স। তবে সংলাপে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবি থাকলেও এবার সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন হবে কি না—এখনো সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।
প্রার্থীদের মনোয়নপত্র দাখিলে যে কোনো জটিলতা এড়াতে এবার অনলাই