নিজস্ব প্রতিবেদক :: বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে শুক্রবার থেকে ৪ দিনব্যাপী উরশ শুরু।
শুক্রবার থেকে ফরিদপুরের বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে ৪ দিনব্যাপী উরশ শুরু হচ্ছে। বাদ জুম্মা নফল নামাজ, মিলাদ ও দোয়া মোনাজাত শেষে পীর হযরত মাওলানা শাহ সুফি সৈয়দ খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) এর রওজা শরীফ জিয়ারতের মাধ্যমে এ দরবার শরীফে মহাপবিত্র বিশ্ব উরশ শরিফের আনুষ্ঠানিক সূচনা হবে। তবে মূল কার্যক্রম শুরু হবে শুক্রবার মাগরিব নামাজ শেষে দু’রাকাত করে ৬ রাকাত নফল নামাজ আদায় ও দোয়া মোনাজাত সহ ফাতেহা শরীফ পাঠন্তে দোয়া মোনাজাতের মাধ্যমে। এ উরশ শরীফ উপলক্ষে ফরিদপুরের আটরশি ও সন্নিহিত গ্রামে প্রায় ২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
ইতোমধ্যে দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা সহ জাকেরান ও আশেকানরা যোগদানের লক্ষ্যে বিশ^ জাকের মঞ্জিলে আসতে শুরু করেছেন। তবে উরশের শেষ দিন পর্যন্ত এ দরবারে শরীফে জন্য অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে বরিশাল-ফরিদপুর ও ঢাকা-খুলনা জাতীয় মহাসড়কের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এক্সপ্রেসওয়ে থেকে আটরশির বিশ^ জাকের মঞ্জিল পর্যন্ত সংযোগ সড়ক সমূহে যানবাহনের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। শৃঙ্খলা রক্ষায় বিপুল সংখ্যক ট্্রাফিক পুলিশ সহ স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন।
দরবার শরীফের অদূরে বিভিন্নস্থানে সব ধরণের যানবাহন পার্কিং-এর লক্ষ্যে বিশাল মাঠ প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব পার্কিং ইয়ার্ড থেকে মুসুল্লীরা পায়ে হেটে বিশ^ জাকের মঞ্জিলে পৌঁছেছেন।
উরশ শরীফ উপলক্ষ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও বিহার ছাড়াও উত্তর প্রদেশ এবং সুদূর কাশ্মির থেকে বিপুল সংখ্যক জাকেরান ও আশেকান এ দরবারে পৌঁছতে শুরু করেছেন। শুধু কুচবিহার থেকেই শতাধিক জাকেরানের কাফেলা বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে পৌঁছেছে ইতোমধ্যে।
আপন পীরের নির্দেশে বাংলা ১৩৫৪ সালে খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছেঃআঃ) পৈত্রিক নিবাস শেরপুরের পাকুরিয়া গ্রাম ছেড়ে আটরশীতে এসে ইসলাম প্রচার শুরু করেছিলেন। মাত্র সাড়ে ৬টাকায় ছনের ছাউনি ও সুপারীর খোলের বেড়া দেয়া একটি ঘর কিনে পীর ‘জাকের ক্যাম্প’ প্রতিষ্ঠা করে ইসলাম প্রচার শুরু করেছিলেন। কালের বিবর্তনে তা ‘জাকের মঞ্জিল’ থেকে আজ ‘বিশ্ব জাকের মঞ্জিল’এ রুপ লাভ করে।
খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃছোঃআঃ) যেদিন আটরশীতে প্রথম পা রাখেন তখন এখানের মুসলমানরা ইসলামের বিধান সম্পর্কে তেমন সচেতন ছিলেন না। তারা ঈদ ও কোরবানীর দিন জমিতে যথারীতি কাজে যেতেন। অথচ পূজা পার্বনে নতুন জামা কাপড় পরে প্রতিমা দর্শনে বের হতো। এমনকি সে সময়ের জমিদারদের হুংকারে আটরশি ও সংলগ্ন সাড়ে সাতরশি,চৌদ্দ রশিতে গরু কোরবানি পর্যন্ত অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ ছিল। সেই থেকে জীবেন শেষ দিন পর্যন্ত পীর আল্লাহ ও রাসুলের পথে পথভোলা মানুষকে দাওয়াত করে গেছেন।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের উরশ শরীফে এবারো দশটি বিশাল মাঠে প্রতি ঘন্টায় লক্ষাধিক মুসুল্লীর খাবার পরিবেশনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ওজু, গোসল ও পয়:প্রণালী সুবিধা নিশ্চিতে এ দরবার শরীফে পর্যাপ্ত অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। পুরো এলাকায় সুবিশাল গাড়ী পার্কিং, চিকিৎসা সেবার জন্য হাসপাতালের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। জাকের মঞ্জিল আলীয়া মাদ্রাসার বিশাল ভবনেও বিপুল সংখ্যক মুসুল্লীয়ানের অবস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের এ উরশ শরীফে রাত ৩টায় রহমতের সময় থেকে এশা নামাজন্তে ৫শ বার দুরুদ শরীফ পাঠ পর্যন্ত দিন-রাতই বিভিন্ন ধরণের এবাদত বন্দেগী সহ ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এবারো উরশ শরীফে অংশগ্রহণকারী মুসুল্লীয়ানরা নফল নামাজ আদায়, ফাতেহা শরীফ ও খতম শরীফ পাঠ সহ দোয়া-মোনাজাত এবং মোরাকাবা মোশাহেদায় অংশ নেবেন। এক সামিয়ানার নীচে ওয়াক্তিয়া নামাজ আদায় সহ মহান আল্লাহ রাব্বুল আল-আমীনের রাজী খুশির জন্য একই সাথে ইবাদত বন্দেগীতে অংশ নেবেন সমবেত মুসুল্লীরা।
উপমাহাদেশের প্রখ্যাত সুফি সাধক খাজা বাকিবিল্লাহ (কুঃছেঃআঃ) এবং তার খলিফা হযরত মুজাদ্দেদ আলফেসানী (রাঃ) তরিকায়ে নকসবন্দীয়া মুজাদ্দেদিয়া ছিলছিলার জমানার মহা ওলিয়ে কামেল হযরত মাওলানা শাহ সুফী সৈয়দ খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) এর দীর্ঘ ৫৭ বছর আটরশীর বিশ্ব জাকের মঞ্জিল থেকে ইসলাম প্রচার করে গেছেন। তিনি ছিলেন অধুনা সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুরের হযরত মাওলানা শাহসুফী সৈয়দ খাজা ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) এর একজন সুযোগ্য খলিফা।
বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে উরশ শরীফ সহ ১২ মাসই রাতের শেষ প্রহরে রহমতের সময়ে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে প্রতিদিনের এবাদত বন্দেগীর কার্যক্রমের সূচনা হয়ে থাকে। এরপরে মিলাদ ও দোয়া-মোনাজাত ছাড়াও জিকির শেষে জামাতের সাথে ফজরের নামাজ আদায়ন্তে ফাতেহা শরীফ ও খতম শরীফ পাঠন্তে এ দরবারে প্রতিদিনের এবাদত বন্দেগী অব্যাহত থাকছে।
আগামী মঙ্গলবার বাদ ফজর ফাতেহা শরীফ ও খতম শরীফ আদায়ন্তে পবিত্র কোরআন তোলাওয়াত এবং মিলাদ শেষে পীর এর রওজা শরীফ জিয়ারতের নিয়তে পুনরায় ফাতেহা শরীফ পাঠন্তে আখেরী মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় ৫০ হাজারেরও বেশী স্বেচ্ছাসেবক পুলিশ ও র্যাব সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।
দীর্ঘ প্রায় অর্ধ শতক ধরে ইসলামের বাণী প্রচার করে ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল মধ্যরাতে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীর হযরত মাওলানা শাহ সুফি সৈয়দ খাজাবাবা ফরিদপুরী নকসবন্দী মুজাদ্দেদী (কুঃছেঃআঃ) ওফাত লাভ করেন। সারা বছরই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ অগনিত মানুষ বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের পীর এর রওজা শরীফ জিয়ারতে সমবেত হয়ে থাকেন।
পীর এর আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী পীরজাদা আলহাজ্ব খাজা মাহফুজুল হক মুজাদ্দেদী সকল মুমিন মুসলমান ও ভক্তবৃন্দকে বিশ্ব জাকের মঞ্জিলের এ উরশ শরীফে অংশগ্রহণের দাওয়াত করেছেন।