নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল গনপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীকে হু.মকি ও মা.রধ.রের চেষ্টা।
সুবিধাবাদি বিএনপি নেতা-কর্মীদের চাপে বেকায়দায় রয়েছে বরিশালের বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে এমন সব নেতা-কর্মীরা ঠিকাদারি কাজ নিতে খামখেয়ালী করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদের বেশিরভাগই আওয়ামীলীগের সাথে আতাত করে বিগত সময়ে কোটি কোটি টাকার কাজ করলেও এখন তারা পুরোটাই বিএনপি বনে গেছেন। ৫ আগস্টের পর থেকে এই সমস্যা প্রকট আকার ধারন করেছে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী কর্মকর্তাগন। কর্মকর্তারা বলেন কাজ না দিলে হুমকি, গালাগাল সহ মারধরে উদ্ধত হচ্ছে বিএনপি পরিচয়ের নেতারা।
তাদের উৎপাতে প্রত্যেকটি দপ্তরে কাজের পরিবেশ নস্ট হচ্ছে। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বরিশাল গণপূর্ত অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে ঘটেছে এমন একটি ঘটনা। সেখানে টেন্ডারপ্রকৃয়া সম্পন্ন হওয়ার পূর্বেই কাজ দিতে হবে এমন দাবি করে নির্বাহী প্রকৌশলীর ওপর হামলা চালিয়েছে সাবেক যুবদল নেতা সহ তার সহযোগীতায় আসা আওয়ামীলীগের নেতা ও তার সহযোগীরা। তবে এমন ঘটনাকে কোন ভাবেই প্রশ্রয় দেয়া হবেনা এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দলের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যাবস্তা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
বরিশাল গণপূর্ত অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়সাল আলম অভিযোগ করে বলেন, বরিশাল জেলায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের অধীনে ৫টি মডেল মসজিদ (মুলাদী, বাবুগঞ্জ, গৌরনদী, উজিরপুর এবং বানারীপাড়া), দুর্নীতি দমন কমিশনের ভবন এবং আনসার ভবনের জন্য অনলাইনে দরপত্র আহাবান করা হয় দুইবারে।
৫ টি মডেল মসজিদের কাজের জন্য ২ জানুয়ারি আহবান করা দরপত্র উন্মুক্ত করা হয় ২৩ জানুয়ারি। অপর দুই কাজের দরপত্র আহবান করা হয় ৫ জানুয়ারি এবং উন্মুক্ত করা হয় ৩ ফেব্রুয়ারী। কিন্তু এতে সবাই সমান দরদাতা নির্ধারণ করায় নিয়মানুযায়ী কাগজপত্র এবং কাজ করার যোগ্যতা দেখে প্রক্রিয়া অনুসরণের সিদ্ধান্ত হয়। বর্তমানে সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক সকল দরপত্রগুলো মূল্যায়ন কার্যক্রম চলছিলো। এই দুই টেন্ডারে সৌরভ এন্টারপ্রাইজ ও গ্যালাক্সি এ্যাসোসিয়েটস নামের লাইসেন্স নিয়ে অংশ নেয় মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম শাহীন, বেলায়েত, আব্দুর রহিম, আওয়ামী লীগ নেতা রিপন। আহবান করা দরপত্রের শর্তাবলী অনুযায়ী সর্বোচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন লাইসেন্সে কাজ প্রদানের জন্য যাচাইবাছাই ও মূল্যায়ন চলমান অবস্থায় সোমবার দুপুর সারে ১২ টার দিকে ঘটে বিপত্তি।
কোন নিয়মের তোয়াক্কা না করে রফিকুল ইসলাম শাহীন, বেলায়েত, আব্দুর রহিম, আওয়ামী লীগ নেতা রিপন তাকে (নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়সাল আলম) মডেল মসজিদ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের ভবনের কাজ গোপালগঞ্জের সৌরভ এন্টারপ্রাইজকে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ শুরু করে। এসময় নিয়ম মেনে যোগ্যতা সম্পন্ন লাইসেন্সে কাজ দেয়ার কথা জানানো হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে তারা। এক পর্যায়ে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়সাল আলমকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করে তার দিকে তেড়ে আসে অভিযুক্তরা। বরিশাল থাকতে হলে সৌরভ এন্টারপ্রাইজেই কাজ দিতে হবে বলে হুমকি প্রদান করেন। এ ঘটনার সিসি টিভি ফুটেজে সব স্পস্ট দেখা গেছে বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী।
এমন অবস্থায় হতচকিত ও শংকিত রয়েছেন বলেও জানান তিনি। ঘটনা শুনে তাৎক্ষনিক বিএনপির প্রকৃত নেতাকর্মীরা এলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্তনে আসে। এ বিষয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের সাথে যোগাযোগ হয়েছে এবং আজ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হবে বলেন মো. ফয়সাল আলম। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে, তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
বরিশাল গণপূর্ত অফিসের সূত্র জানায়, মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম শাহীন বিএনপি নেতা হওয়া সত্ত্বে আওয়ামীলীগের আমলে গনপূর্ত বিভাগে কোটি কোটি টাকার কাজ করেছেন আওয়ামীলীগের সাথে আতাত করে। এসকল কাজের মধ্যে রয়েছে ৬ কোটি টাকার মুলাদি থানা ভবন নির্মান, দের কোটি টাকা দরের আনসার কিচেন কাম ট্রেনিং সেন্টার নির্মান, ৩ কোটি টাকার নিয়ামতি নৌ-পুলিশ ফারি নির্মান সহ বেশ কয়েকটি কাজ।
বর্তমানেও তার খালাতো ভাইয়ের নামে দপদপিয়া নব থিয়েটারের ডরমেটরি ভবনের কাজটিও তিনি করছেন বলে জানা গেছে। পরোক্ষভাবে এসকল কাজ তিনি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ তার পূত্র সাদিক আব্দুল্লাহ সহ আওয়ামীলীগের বিভিন্ন নেতার মাধ্যমে বাগিয়ে নিয়েছিলের বলে জানায় সূত্রটি। বর্তমানে তার সাথে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা রিপন ও বেলায়েত কিছুদিন পূর্বেও আওয়ামীলীগের সময়কার প্যাণেল মেয়র জিয়াউর রহমান বিপ্লবের লোক হিসেবে পরিচিত। তারা বিপ্লবের হয়ে গনপূর্ত বিভাগের বেশ কয়েকটি কাজ করেছে ক্ষমতার প্রভাবে। এখন তারা বিএনপি নেতা হিসেবে কর্মকর্তাদের বিরক্ত করছে প্রতিনিয়ত।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ হাসান মামুন বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজন এসে এখনো ঝামেলা করে, এমন খবর শুনে তিনি এসেছেন। তবে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে কেউ অনিয়ম করলে কেন্দ্র তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া আইনগত দ-নীয় অপরাধ। গনপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মৌখিকভাবে বিষয়টি জনিয়েছেন। লিখিত অভিযোগের পেক্ষিতে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।