নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে গভীর রাতে মাজার ভাঙ*চুর-আ*গু*ন।
বরিশাল বিভাগের বরগুনার আমতলী উপজেলায় ‘তৌহিদী জনতা’র নামে একদল লোক একটি মাজারে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করেছে। এ ছাড়া মাজারে আসা ভক্তদের জন্য রান্না করা খাবার নষ্ট করা হয়।
রোববার মধ্যরাতে উপজেলার বটতলা সড়কের পাশে ‘ইসমাইল শাহ বাবার’ মাজারে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান আমতলী থানার ওসি আরিফুল ইসলাম।
খবর পেয়ে সোমবার সকালে বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম মাজারটি পরিদর্শন করেছেন।
এ সময় তিনি বলেন, “দুই পক্ষকে শান্ত থাকতে বলেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। বিষয়টি তদন্তে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি।”
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাজারের ওরস ঠেকাতে ‘তৌহিদী জনতা’র নামে কয়েকশ মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল বের করেন। মিছিলটি মাজারের সামনে পৌঁছালে আশেপাশের আরও কয়েক গ্রামের মানুষ এতে অংশ নিয়ে মাজারে ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দেয়।
এ সময় মাজারের বিভিন্ন আসবাব, ঘরের টিন ও দেয়ালের ইট খুলে ফেলার পাশাপাশি চালানো হয় লুটপাট। ‘তৌহিদী জনতা’ আগুন দিয়ে মাজারের চারপাশ ঘিরে অবস্থান করায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যেতে পারেননি।
‘ইসমাইল শাহ বাবার’ মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, রমজান উপলক্ষে মাজারে দোয়া মোনাজাত ও তবারকের আয়োজন করা হয়। এতে দেড়শ ভক্ত উপস্থিত ছিলেন। তাদের জন্য তবারক হিসেবে সেহরির আগে সাত থেকে আট মণ চালের খিচুড়ি রান্না করা হয়।
“কিন্তু রাত ১২টার পর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমতলী উপজেলা শাখার সভাপতি ওমর ফারুকের নেতৃত্বে আড়াই থেকে ৩০০ লোক মাজারে হামলা করে। পরে তারা মাজারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় তারা রান্না করা খিচুড়ি ফেলে দেন।”
তিনি বলেন, তাৎক্ষণিক পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়। তারা আসলেও হামলাকারীদের শান্ত করতে পারেননি। তাদের সামনে ভাঙচুর ও মাজারের পেছনের দুটি টিনের ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন মাজার কমিটির এই সাধারণ সম্পাদক।
ইসলামী আন্দোলনের ওমর ফারুক অভিযোগ করে বলেন, “১৯৯৬ সালে ইসমাইল শাহ মাজারটি শুরু করেন মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল। সেখানে ওরসের নামে বিদাত ও শিরক করা হয়। এসব কাজে বাধা দেওয়া হলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। মাজারে প্রতিবছর চৈত্র মাসে ঢোল, তবলা ও হরেক রকম বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে গান, বাজনা ও জিকির করা হয়।
“প্রতি বছর চৈত্রের ২ তারিখ ওরসের নামে সেখানে নারী-পুরুষ একত্রে হয়ে ভণ্ডামি ও মাদক সেবন করেন। এ ছাড়া মুসলমান হয়ে তারা সেখানে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কাজ করতেন।”
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মো. নুরে আলম বলেন, রাত ১২টা ৪০ মিনিটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার ঘটেছে। এতে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে ১০ লাখ টাকার মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে।
আমতলী থানার ওসি আরিফুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে দুই পক্ষকে নিয়ে বসেছিলেন। দুইপক্ষ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সিদ্বান্ত নিয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। মাজারের যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে; তা মেরামত করবে কর্তৃপক্ষ।