নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল নগরী জুড়ে ভ্রাম্যমান ফলের দোকান, সিএনজি, মাহেন্দ্র ও মোটরসাইকেলের স্ট্যান্ড।
সদর হাসপাতালের পূর্ব পাশের দেয়াল ঘেঁষে ফুটপাতের উপর ভগ্নপ্রায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে বরিশাল সিটি করপোরেশন এর একটি অবৈধ স্থাপনা। আর এই স্থাপনাটিকে ঘীরেই জেলখানা মোড় থেকে নাজিরের পুল সড়কের দুপাশের ফুটপাত বেদখল হয়েছে বলে দাবী ১৯ নং ওয়ার্ড নাজিরমহল্লা ও ৪ নং ওয়ার্ড কাউনিয়া, ভাটিখানা এলাকার বাসিন্দাদের। সরেজমিনে ২৩ এপ্রিল বুধবার দুপুরে বরিশাল নগরীর জেলখানা মোড়ে দাঁড়িয়েই চোখে পড়ে মোড়ে অপেক্ষমান তিনটি রুটের ইজিবাইক, সিএনজি, মোটরসাইকেলসহ যানবাহন, পথচারী, ফুটপাত ব্যবসায়ীদের চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। বিশেষ করে জেনারেল হাসপাতালের সামনের ফুটপাত ধরে নাজিরের পুল, ভাটিখানা, আমানতগঞ্জের পথে যেতে রোগী, যাত্রী ও এলাকার বাসিন্দাদের হাঁটাচলার কোনো উপায় নেই।
সড়কের পাশ ধরে হাঁটা যায়না যানবাহনের চাপে। আবার দুপাশের ফুটপাতের একপাশে হাসপাতালের দেয়াল ঘেঁষে বিসিসির পরিত্যক্ত অবৈধ স্থাপনাকে ঘীরে ফুটপাত দখল করেছে মোটরসাইকেল, সিএনজি, ইজিবাইক স্ট্যান্ড। সাথে আছে ময়লা আবর্জনা ও মানুষের বর্জ্যের দুর্গন্ধ। অন্যপাশে জেলখানার দেয়াল ঘেঁষে নাজিরের পুল পর্যন্ত ফুটপাত দখল করে নিয়েছে খাবারের দোকান, চা ঘর, সবজি বিক্রেতা সহ বিভিন্ন উপকরণ বিক্রির দোকান। কেউ এদের বসায়নি, কেউ কোনো চাঁদাও নেয়না দাবী করে এসব ব্যবসায়ীরা বলেন, পেটের দায়ে আমরা নিজেরাই এখানে বাণিজ্য করছি।
এসময় বাজার নিয়ে নাক চেপে ঘরে ফিরছিলেন কাউনিয়ার বাসিন্দা শেলি ও শর্বনাম দাস। তারা বলেন, এজন্য সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ দায়ী। এখানে এই যে হাসপাতালের দেয়াল ঘেঁষে তৈরি তাদের স্থাপনাটি দেখুন। এটির নীচে কিছু নেই। যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফুটপাত দখল করে এই স্থাপনা দাঁড়িয়ে আছে। তারপরও এটি তারা সরাচ্ছে না। কারণ এটিকে ঘীরে, এটিকে অজুহাত করে, এটির আড়ালে এখানে ফুটপাতের বাণিজ্য চলছে। বাচ্চা নিয়ে এপথে চলাচল করা যায়না। মোড়ে বখাটেদের আড্ডা সারাক্ষণ লেগেই আছে, ঐ যে দেখুন পুলিশও তাদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে।
তার আঙ্গুল ইশারা লক্ষ্য করে বিসিসির পরিত্যক্ত অবৈধ স্থাপনাটির দক্ষিণ পাশে ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল এর সিরিয়াল লেখার জন্য তৈরি একটি ছাউনি ও কয়েকটি টুল বসিয়ে আড্ডা চোখে পড়লো। সেখানে ইজিবাইক ও মোটরসাইকেল চালকদের পাশে বসে তাস খেলা দেখছেন একজন পুলিশ সদস্য ও একজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য। তাদের কাছে এগিয়ে গিয়ে এই জায়গাটিতে জটলা এবং জনগণের সমস্যা করার কারণ জানতে চাইলে বেশ আন্তরিকতা নিয়েই বলেন, সমস্যা আমরা করি নাই, সমস্যা করেছে সিটি করপোরেশন প্রশাসনের লোকেরাই। সেই কবে সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণের জন্য এখানে ফুটপাত দখল করে তারাই প্রথম এই স্থাপনা তৈরি করে। পরবর্তীতে এটি ব্যবহার অনুপযোগী হলেও এটি আর সরিয়ে নেওয়া হয়নি। এটির কারণে এ অংশের ফুটপাত পুরোটা ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার হয়। দক্ষিণ পাশের এই অংশ আমরা পরিষ্কার করে ব্যবহার করছি বলে এখনো ভালো আছে। উত্তরপাশ কিন্তু ব্যবহার অনুপযোগী এখন।
তাদের সাথে কথা বলার অবসরে নাকে রুমাল চাপা দিতে হয়েছে মলমূত্র ও ডাস্টবিনের ঝাঁঝালো গন্ধে।
ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, আমরা দুর্গন্ধে এখানে দাঁড়াতে পারিনা। সন্ধ্যার পর এটি রীতিমতো ভাগাড়ে পরিণত হয়। আর রাতে এটিই হয় পাবলিক টয়লেট।
১৯ নং ওয়ার্ড নাজির মহল্লার বাসিন্দা আজিজুল হক বলেন, এখানে একটি হাসপাতাল আবার জেলখানা। জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আবার বাবুগঞ্জ, মুলাদি, শায়েস্তাবাদ যাতায়াতের সহজ পথও এটি। প্রতিদিন এ পথে লাখো মানুষের চলাচল। এমন একটি ব্যস্ত সড়কের দুপাশের ফুটপাত ব্যবহার করার উপায় নেই। রাতারাতি দখল হয়েছে এই ফুটপাত। পরিকল্পিতভাবে একপাশে ভাগাড়খানা অন্যপাশে দোকানপাট বসিয়ে বাণিজ্য করছে সিটি করপোরেশনের একদল অসাধু কর্মচারী।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসক বিভাগীয় কমিশনার রায়হান কাওছার এবং বিসিসি সিইও রেজাউল বারী বলেন, আজই ওই স্থান পরিদর্শন করবেন তারা। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।