নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশালে প্রধান শিক্ষকের হাত-পা ভেঙ্গে দেওয়ার প্রতিবাদে শিক্ষকদের মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান।
বরিশালের বানারীপাড়ায় ইলুহার বিহারীলাল একাডেমির নৈশ প্রহরী পদে চাকরি না পেয়ে প্রধান শিক্ষক সৈয়দ মোঃ মাহবুবুর রহমানকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দেওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। উপজেলা পরিষদ চত্বরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বানারীপাড়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু বকার সিদ্দিকের সভাপতিত্বে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও বাইশারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফকরুল আলম, যুগ্ম সম্পাদক ও গাভা হাই স্কুলের সহকারি শিক্ষক কেএম শফিকুল আলম জুয়েল, চাখার ওয়াজেদ মেমোরিয়াল বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী আজিম প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
মানববন্ধন শেষে প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলাকারী সন্ত্রাসী পিতা-পুত্রকে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় গিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতিমা আজরিন তন্বী ও তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসক এবং ওসি ও তার মাধ্যমে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ফেরী ঘাটে গিয়ে শেষ করেন।
প্রসঙ্গত, সোমবার (১৩ নভেম্বর) সকালে স্কুলে যাবার সময় পথে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে হত্যার উদ্দেশ্যে ইলুহার বিহারী লাল একাডেমির প্রধান শিক্ষক সৈয়দ মাহাবুবুর রহমানের ওপর ফ্লিমি স্টাইলে হামলা চালায় ওই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী চান্দু আকন ও তার ছেলে সজিব আকন। এতে তার ডান পা ও বাম হাত ভেঙ্গে যাওয়াসহ সারা শরীর রক্তাক্ত ও জখম হয়।
এসময় তার সঙ্গে ব্যাগে থাকা পরীক্ষার ফিসহ স্কুল ফান্ডের ৮০ হাজার টাকা ও স্কুলের গুরুত্বপূর্ন কাগজপত্র নিয়ে যাওয়া ও মোটরসাইকেলটিও ভাংচুর করা হয়। তার ডাক চিৎকার শুনে এলাকাবাসী, স্কুলের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরা এগিয়ে এলে হামলাকারী পিতা-পুত্র আজ তোকে ( প্রধান শিক্ষক) হত্যা করতে পারলাম না, পরে যেদিন একা পাবো সেদিন তোকে হত্যা করবো বলে হুমকি দিয়ে চলে যায়।
পরে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রধান শিক্ষক সৈয়দ মো. মাহাবুবুর রহমানকে তারা উদ্ধার করে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়া যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক সুধাংশু কুমার মন্ডল বাদি হয়ে ওইদিন রাতে উপজেলার ইলুহার গ্রামের চান্দু আকন ও তার ছেলে সজিব আকনকে আসামি করে বানারীপাড়া থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ইলুহার ইউনিয়নের ইলুহার বিহারী লাল একাডেমি স্কুলে গত শুক্রবার নৈশ প্রহরী পদে ইন্টারভিউ হয়। বরিশাল সদর গার্লস স্কুলে অনুষ্ঠিত ওই পদে ইন্টারভিউতে চান্দু আকনের ছেলে সজিব আকন অংশ নেয়। নৈশ প্রহরী পদে ইন্টারভিউতে প্রথম হয়ে ইলুহার গ্রামের নাঈম নামের অন্যজনের চাকরি হয়। এতে সজিব ও তার পিতা চান্দু আকন চরম ক্ষিপ্ত হন।
এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতিমা আজরিন তন্বী বলেন, জাতি গড়ার কারিগর একজন প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারসহ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম মাসুদ আলম চৌধুরী বলেন, প্রধান শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা নেওয়া হয়েছে। হামলাকারী পিতা-পুত্রকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।