নিজস্ব প্রতিবেদক :: আগাম বর্ষণের তীব্রতায় বরিশালের অন্তত ৪০টি স্থানে নতুন করে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। মাটি সরে যাচ্ছে রাতারাতি, বসতঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন গ্রামীণ জনপদের মানুষরা। বাঁকে বাঁকে ভাঙছে নদী, নদীর পাড়ের মানুষের চোখেও বাঁধ মানছে না জল।
সন্ধ্যা নদীর পাড়ে উজিরপুর উপজেলার নারিকেলী গ্রামে ২৭ এপ্রিল মধ্যরাতে ৭টি বসতভিটার একটি বাড়ি মুহূর্তেই বিলীন হয়ে যায় নদীতে। সেই রাত থেকে চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেননি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।
> “রাত ১টার দিকে আমাদের তিনটা ঘর চোখের পলকে নদীতে নেমে যায়। কিছুই বাঁচাতে পারিনি। এখন শুধু ধ্বংসস্তুপ আর নদীর দিকে তাকিয়ে কাঁদি,” — বলছিলেন ক্ষতিগ্রস্ত এক গৃহস্থ।
অন্য একজন বলেন,
> “আমরা চার ভাই এক উঠোনে থাকতাম। এখন চারদিকে ছড়িয়ে গেছি। কেউ আত্মীয়ের বাড়ি, কেউ মসজিদের বারান্দায়। সরকারি সাহায্যে বালুর বস্তা মিলেছে, কিন্তু তাতে কি ঘর ফেরত পাওয়া যাবে?”
নারিকেলী গ্রামের ৯৫০টি পরিবার এই মুহূর্তে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। নদীর গহ্বরে চলে গেছে রাস্তা, স্কুল, বাজার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র। এক নারী কান্নাভেজা গলায় বলেন—
> “এই ভিটায় বউ হয়ে এসেছিলাম, মরার ইচ্ছাও ছিল এখানেই। এখন সব হারিয়ে পরনের কাপড়টুকু ছাড়া কিছুই নেই।”
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, এই এলাকায় প্রায় এক লাখ জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু স্থায়ী বাঁধ ছাড়া এই পরিস্থিতি রোধ করা সম্ভব নয় বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা।
বরিশালের ১২টি নদীতে ৪০টি পয়েন্টে ভাঙন
পাউবো বলছে, বরিশালের ৩৮টি নদীর সবখানেই এ বছর ভাঙন শুরু হয়েছে। তবে সন্ধ্যা, সুগন্ধা, তেঁতুলিয়া, মেঘনার শাখা, কালাবদর, তালতলী ও আড়িয়াল খাঁ সহ অন্তত ১২টি নদীর ৪০টি পয়েন্টে ৮ কিলোমিটারজুড়ে ভাঙন ভয়াবহ আকার নিয়েছে।
পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী জাভেদ ইকবাল বলেন—
> “বরিশালের নদীগুলোর বাঁক বেশি, সঙ্গে গভীরতাও। বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি হওয়ায় পানির ধারনক্ষমতা ব্যাহত হচ্ছে। তাই নদীগুলোর ভাঙন তীব্র হচ্ছে। ৪০টি স্পট চিহ্নিত করে ইতিমধ্যে প্রায় ৩৯ কোটি টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।”
পাউবো’র উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মাহমুদুন্নবী আরও জানান—
> “আড়িয়াল খাঁ থেকে কঁচা নদী পর্যন্ত ৬১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সন্ধ্যা নদীর প্রতিটি বাঁকে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। জরিপ শেষ হয়েছে, বরাদ্দ পেলেই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ শুরু হবে।”
দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প চলমান
২০২০ সাল থেকে বরিশালের নদীগুলোতে ৩৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ২৬০০ কোটি টাকার ৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। তবে বর্তমান ভাঙনের ভয়াবহতা স্থানীয়দের মাঝে নতুন করে শঙ্কা জাগিয়েছে—এই ভাঙন যদি দ্রুত না ঠেকে, তাহলে মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যাবে গ্রাম।
-