নিজস্ব প্রতিবেদক :: দীর্ঘ ৬ বছর পর বরিশালের চাঞ্চল্যকর দলিল লেখক রিয়াজুল করিম রিয়াজ হত্যা মামলায় স্ত্রী লিজা ও তার প্রেমিকা মাছুম সহ সাত জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রদান করা হয়েছে। ২০১৯ সালের ১৯ এপ্রিল রিয়াজকে নিজ বাড়ীতে নৃশংস ভাবে তার স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজা ও তার সহযোগিরা হত্যা করে ডাকাতির নাটক সাজায়। ঐদিনই নিহত রেজাউল করিম রিয়াজের ভাই মোঃ মনিরুল ইসলাম রিপন বাদী হয়ে কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন।
তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মোঃ ইদ্রিস হাওলাদার নামের একজনকে চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ পরিদর্শক পিবিআই আব্দুল্লাহ আল মামুন ভুঁইয়া আদালতে চার্জসীট দাখিল করেন। যাদের বিরুদ্ধে চার্জসীট দেওয়া হয়েছে তারা হচ্ছেন কাউয়ারচর ময়দান চুন্নু হাওলাদার এর ছেলে মো:শাকিল হোসেন, বড় রঘুনাথপুর এর ৯ নং ওয়ার্ড ১৩ নম্বর পাদ্রীশিবপুরের মো: মৃত ইউসুফ আলী শিকদারের ছেলে জলিল শিকদার। চরমোনাই এলাকার মোশারফ চৌকিদারের ছেলে নাঈম হোসেন চৌকিদার, বুখাইনগরের পিন্টু চৌকিদারের ছেলে মোঃ রায়হান, নগরের পলাশপুর এলাকার দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে ও নিহত রিয়াজের স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজা, চরমোনাই আলতাফ হোসেনের ছেলে ও লিজার পরকিয়া প্রেমিক মোঃ মাসুম হোসেন, একই এলাকার মৃত হোসেন হাওলাদার এর ছেলে মোঃ হাবিবুর রহমান হাওলাদার। এই হত্যা মামলায় এর আগে মোট সাতবার আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ, ডিবি, সিআইডি। তবে বাদীর নারাজির কারণে সর্বশেষ পিবিআইর পুলিশ পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন ভুঁইয়া চার্জশিট প্রদান করেন। চলতি মাসের ৩০ শে জুন এই মামলার তারিখ রাখা হয়েছে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের বরিশাল সদর থানার জি,আর,ও এনামুল হোসেন।
পিবিআই ব্যাপক তদন্ত শেষে ২০২৫ সালের ২৮ শে মে চার্জশিট প্রদান করেন। মঙ্গলবার মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত চার্জশিট গ্রহণ করে আগামী ৩০ শে জুন মামলা পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন। নিহত রিয়াজ একজন দলিল লেখক ছিলেন। তার প্রথম স্ত্রীর সাথে চার বছর পূর্বে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর রিয়াজ আমিনা আক্তার লিজা (৩০) চার বছর পূর্বে প্রেমের সম্পর্কে মাধ্যমে তাদের বিয়ে হয়। আমিনা আক্তার লিজার ইতিপূর্বে আরো দুটি বিবাহ হয়েছিল। ব্যক্তিগতভাবে রিয়াজের ধনাঢ্য ছিলেন। টাকার কারণেই স্ত্রী ও তার প্রেমিকার হাতে খুন হতে হয়েছিলো রিয়াজকে।
২০১৯ সনের ১৯ শে ফেব্রুয়ারি ভোর আনুমানিক ৫:৩০ মিনিটের সময় বাদীর মামা আব্দুল হাই নিহত রিয়াজের বাড়িতে এসে চিৎকার শুরু করে। জানায় ঘটনার দিন অর্থাৎ ২০১৯ সালের ১৯ শে এপ্রিল রিয়াজ দুধ খেয়ে ভেতরের কক্ষে উঠে সামনের বারান্দায় কক্ষে ঘুমায় এবং স্ত্রী আমিনা আক্তার লিজা ভিতরের কক্ষে ঘুমাতে যায়। ভোররাত অনুমান তিনটার সময় লিজা বিছানা হতে ওঠে তার মোবাইলের টর্চ জালিয়ে দেখতে পায় তার স্বামী খুন হয়েছে। তখন স্ত্রী লিজা বাহিরে এসে ডাকচিৎকার শুরু করে। লিজা যে কক্ষে ঘুমিয়েছিলেন সেই কক্ষের খাটের নিচে একটি সিধঁকাটা। সিধ কাটার মাটি যেখানে লিজার একটি পেটি কোট বিছানো ছিল। পলাশপুরে লিজার জমির নিকট বাদীর ভাইয়ের জমি ছিল। বাদির সন্দেহ উক্ত জমির প্রতি লোভের বশবতী হয়ে লিজা উক্ত সম্পত্তি গ্রাস করবার জন্য রিয়াজকে দুধের সাথে বিষ মিশিয়ে যেকোনো সময় খুন করে। লিজা এর পূর্বে ৬৫ বছরের এক ব্যক্তিকে বিবাহ করেছিল। তার বাড়ি চট্টগ্রামে। পরে লিজা ওই লোকটিকে তালাক দেয়। বাদীর ভাইয়ের সম্পত্তি ও নগদ টাকার প্রতি লোভ করে বাদিরভাই রিয়াজকে আমিনা আক্তার লিজা অথবা অজ্ঞাত নামা সহযোগীদের নিয়ে গলার বাম পাশে বাম গালে বাম গালের নিচে ও ডান হাতে কুপিয়ে রক্তাক্ত কাটা জখম করে বাদির ভাইকে হত্যা করে। উল্লেখ্য, লিজার প্রেমিকা মাছুম হোসেন দফাদারের (চার্জশীট ভুক্ত আসামী) সাথে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ সম্পর্ক ছিলো। মাছুম নিহত রিয়াজের সহকারী ছিলেন। সেই সুবাধে রিয়াজের বাসায় আসা যাওয়ার কারণে পরকিয়া সম্পর্ক ছিলো। চিকিৎসকদের মতে রিয়াজ ছিলো সন্তানদানে অক্ষম। কিন্তু তার মৃত্যুর সাড়ে ৮ মাস পরে স্ত্রীর গর্ভে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। বর্তমানে বাচ্চার বয়স ৬ বছর। মামলার বাদী নিহত রিয়াজের বড় ভাই মনিরুল ইসলাম রিপন দাবী করেন ওই সন্তান রিয়াজের নয়। ডিএনএ পরীক্ষা করলে সন্তানের পিতৃ পরিচয় বেড়িয়ে আসবে।