নিউজ ডেস্ক :: ২০০০ সালের ২৬ জুন দশম টেস্ট খেলুড়ে দেশের মর্যাদা পায় বাংলাদেশ। এর প্রায় পাঁচ মাস পর ১০ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে নিজেদের অভিষেক টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামে তারা। বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল এখন বোর্ড সভাপতি। পেছনে ফিরে তাকালে তার কি মনে হয় না, যে জায়াগায় থাকার কথা ছিল, সেই জায়গায় নেই বাংলাদেশ।
যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত আলাপে উঠে এল সে প্রসঙ্গ সহ আরও অনেক কিছু। তার সাক্ষাৎকার
প্রশ্ন : বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আপনি। টেস্ট ক্রিকেটের কুলীন পরিবারের সদস্য হওয়ার ২৫ বছর পূর্তির মাহেন্দ্রক্ষণে আপনি বিসিবির সভাপতি। বিষয়টি আপনার কাছে কতটা গুরুত্ব বহন করে?
আমিনুল ইসলাম বুলবুল : অবশ্যই ভালো লাগার ব্যাপার। প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান হিসাবে সব সময়ই গর্ববোধ করি। আমরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করতাম। আমাদের সময় অনেকে ছিলেন-ফারুক (আহমেদ) ভাই, আতাহার (আলী খান) ভাই, নান্নু (মিনহাজুল আবেদিন) ভাই, যারা অভিষেক টেস্ট খেলতে পারেননি। আমি সেদিক থেকে ভাগ্যবান। এতদিন সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম; কিন্তু সুযোগ পাইনি। এখন পেয়েছি, কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।
প্রশ্ন : খেলাটির আদি ফরম্যাট দিয়ে কি বাংলাদেশের ক্রিকেট এগিয়ে নেওয়া সম্ভব?
আমিনুল : টেস্ট ক্রিকেটই বাংলাদেশের মূল ক্রিকেট। টেস্টই বাংলাদেশের ক্রিকেটের বড় পরিচয়। এই সংস্করণের মাধ্যমে কীভাবে দেশের মানুষকে জাগিয়ে তুলতে পারি, সেই পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। অনেকটা ঘুমিয়ে ছিলাম আমরা এই জায়গায়। প্রথমে ঘুম ভাঙলাম। এরপর আস্তে আস্তে কাজগুলো এগিয়ে নিতে চাই। একটা জাগরণ তৈরি করতে হবে।
প্রশ্ন : আপনি সারা বিশ্বে ক্রিকেট ডেভেলপমেন্টের কাজ করেছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটে সেরকম ডেভেলপমেন্ট হওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেছেন কি?
আমিনুল : ২৫ বছরে অন্তত ২৫টি প্রোগ্রাম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হলো না। আমি শুরু করলাম ২৫তম বছরে এসে। এখন সব কিছুই ডেভেলপ হবে। ‘ট্রিপল সেঞ্চুরি’ নামে একটা প্রোগ্রাম শুরু করেছি, পরিকল্পনা করেছি। সেখানে সব কিছুই আছে। দেশব্যাপী বহু জায়গায় ক্রিকেট ঘুমিয়ে ছিল, তাদের একটা ‘ওয়েক আপ’ কল দেওয়ার চেষ্টা আমরা অত্যন্ত সফলভাবে করার চেষ্টা করছি।
প্রশ্ন : অন্য টেস্ট খেলুড়ে দেশের সঙ্গে আমাদের ক্রিকেট উন্নতির পার্থক্যটা কোথায়?
আমিনুল : আমি সারা বিশ্বে দেখেছি, যে ছেলেটা পড়াশোনায় কিংবা অন্য কোনো দিকে দুর্বল তারাই ক্রিকেটে আসে। আর আমাদের দেশে যারা মেধাবী শিক্ষার্থী, শারীরিকভাবে ফিট, তারাই আসে ক্রিকেটে। এই বিশাল সম্ভাবনা আমরা কাজে লাগাতে পারি না। তাদের যেভাবে প্রয়োজন সেভাবে দিতে পারি না। সেটা করতে পারলেই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
প্রশ্ন : টেস্ট ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে হলে নিশ্চয়ই বড় পরিকল্পনা দরকার। আপনি সেই পরিকল্পনা কীভাবে করছেন? কীভাবে এগোতে চান?
আমিনুল : এখান থেকে শুরু। এখান থেকেই টেস্ট ক্রিকেটটাকে আমরা ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করব। ক্রিকেট মানেই টেস্ট সংস্করণকে মজবুত করা। শিকড় শক্ত করা। এজন্য অবশ্যই বেশ কিছু পরিকল্পনা আছে। এই রতজজয়ন্তী আরও বড় আকারে করা যেত। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে দেশের ভেতরে সবাইকে নাড়া দেওয়াই মূল দায়িত্ব।
প্রশ্ন : কয়েকটি পরিকল্পনা কি শেয়ার করা যাবে?
আমিনুল : আমাদের ৬৪ জেলায় যে ৬৪ জন কোচ রয়েছেন তাদের অবস্থার মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে আমরা ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ দেখছি। মিরপুরে বসে সারা দেশের উন্নয়নের ছক কষা সম্ভব না। মাঠপর্যায়ে কাজ করার মতো শক্তিশালী কোচ তৈরি করা প্রয়োজন। তারা যেন গ্রাম পর্যায়ে কাজ করতে পারেন। তাহলেই ভবিষ্যতে জাতীয় দলে তার ছাপ দেখা যাবে। একই সঙ্গে যদি জেলা পর্যায়ে ভালো উইকেট তৈরি করা যায়, তাহলে আলাদা মাঠের দরকার হবে না। মানে, একই মাঠে হয়তো ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা চালানো যাবে।
প্রশ্ন : প্রথম টেস্টে যে আলোর বার্তা ছিল, পরে তা ফিকে হতে শুরু করে। ২৫ বছরেও কেন বাংলাদেশ ২৫টি টেস্ট জিততে পারেনি?
আমিনুল : এই প্রশ্ন আমারই করা উচিত। এভাবে ঘুমিয়ে থাকলে তো জাগিয়ে তোলা কঠিন। তবে একবার জাগিয়ে তুলতে পারলে, টেস্টে ভালো শুরু করতে পারলে, বাকিগুলোতেও এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। সেটাই এতদিনে শুরু হচ্ছে।
প্রশ্ন : সভাপতি হয়ে টেস্ট নিয়ে কাজ শুরু করলেন। এটা ধরে রাখতে হলে আপনার সভাপতি থাকাটা জরুরি। সরকার যদি চায় তাহলে কি আপনি দীর্ঘমেয়াদে কাজ করবেন?
আমিনুল : হা হা ...। এই বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। এসব নিয়ে ভাবছি না।