নিউজ ডেস্ক :: ভোলা জেলার দৌলতখান উপজেলা ভূমি অফিসের নাজির ও পেশকার দালালদের নিয়ে গড়েছেন ঘুষচক্র। নাজির আনোয়ার হোসেন ২০০৪ সাল থেকে ও পেশকার আব্দুল খালেক ২০১৫ সাল থেকেই এই অফিসে কর্মরত। ২০২৩ সালে নাজির আনোয়ারকে অন্য উপজেলায় বদলি করার পর এক বছরের মাথায় আবার একই কর্মস্থলে ফিরে আসেন। জমির নামজারিসহ জমিসংক্রান্ত বিভিন্ন সেবা নিতে গেলে এই চক্রের সদস্যদের দ্বারস্থ হতে হয়, না হলে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, একেকটি নামজারিতে ছয় হাজার থেকে শুরু ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হলেও প্রতিকার মেলে না। তবে জেলা প্রশাসন থেকে চক্রের এক সদস্যকে সম্প্রতি কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার এই ভূমি অফিসের পেশকার আব্দুল খালেকের ঘুষ নেওয়ার ভিডিও চিত্র প্রকাশ পায়।
সকাল থেকেই তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পাঁচ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা গেছে, এক নারী সেবাগ্রহীতা হাজার টাকার তিন-চারটি নোট খালেকের হাতে দেন। খালেক হাতে পেয়ে টাকাগুলো গুনছেন। কালের কণ্ঠ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, ঘুষ প্রদানকারী নারীর নাম শাহনাজ, তিনি দৌলতখান উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা।
গত রবিবার তিনি নামজারির জন্য এই ভূমি অফিসে গিয়ে খালেককে ওই অর্থ দেন।
গত কয়েক দিন এই অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, তিন-চারজন দালাল পেশকার খালেকের টেবিলে বসে থাকে। তবে খালেক নির্দিষ্ট কক্ষের চেয়ারে বসেন না, বসেন পাশের কক্ষে। এ প্রতিবেদক পরিচয় গোপন রেখে নামজারির বিষয়ে জানতে চাইলে খালেকের চেয়ারের সামনে বসা শহীদুল ইসলাম জানান, খালেককে দিয়ে নামজারি করালে কোনো ঝামেলা হবে না—এটা সবাই মনে মনে করে। এর আগেও খালেকের মাধ্যমে তিনি ২৫ হাজার টাকায় দুটি জমির নামজারি করিয়েছেন।
একই টাকায় আরো দুটি জমির নামজারি করতে দিয়েছেন। শহীদুল জানান, তিনি এর আগে নাজির আনোয়ারের মাধ্যমে নামজারির কাজ করাতেন। নাজির বেশি ঘুষ নিতেন। ফলে এখন খালেকের মাধ্যমে কাজ করাচ্ছেন। তিনি জানান, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন দালাল রয়েছে খালেকের। তারা নামজারির আবেদন ও অন্যান্য কাজের জন্য খালেকের টেবিলের কাছে প্রতি কার্যদিবসে বসে থাকে। ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, খালেক ২০১৫ সাল থেকে দৌলতখান উপজেলা ভূমি অফিসে পেশকার হিসেবে কর্মরত আছেন।
২০০৪ সাল থেকে এই অফিসে নাজির হিসেবে কাজ করছেন মো. আনোয়ার হোসেন। তাঁর বিরুদ্ধেও দালালদের মাধ্যমে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে ২০২২ সালের নভেম্বরে ভোলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. রায়হান উজ্জামান দৌলতখান উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও মোখলেছুর রহমান গংয়ের মধ্যে জমির বিরোধের বিষয়ে উপজেলা ভূমি অফিসে তদন্তে যান। তদন্ত শেষে ডিসি চলে যাওয়ার পর নাজির আনোয়ার উপজেলা চেয়ারম্যানের পক্ষ নিয়ে অফিসের সামনের সড়কে মোখলেছুর রহমানের বোন ফিরোজা খাতুন ও তাঁর ছেলে আব্দুর রবকে মারধর করেন। এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর জেলা প্রশাসক আনোয়ারকে মনপুরায় বদলির আদেশ দেন। কয়েক মাস পরই আনোয়ার মনপুরা থেকে বোরহানউদ্দিন উপজেলা ভূমি অফিসে চলে আসেন। সেখান থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আবার আগের কর্মস্থল দৌলতখান ভূমি অফিসে যোগ দেন।
সেবাগ্রহীতা নুরে আলম জানান, দুই মাস আগে নাজির আনোয়ারকে নামজারির জন্য ছয় হাজার টাকা দিয়েছিলেন। দুই মাস পর তাঁর নামজারিটি খারিজ করে দেওয়া হয়। আনোয়ার পরে নুরে আলমকে এসি ল্যান্ডের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। কিন্তু আর সহযোগিতা করছেন না।
পেশকার আব্দুল খালেক ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। আমি নামজারির টাকা নিই না।’ নাজির আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘অফিসের সামনে কাউকে মারধর করিনি। কথা-কাটাকাটি হয়েছে। নামজারিতে কারো কাছ থেকে ঘুষ নিইনি।’
দৌলতখান এসি ল্যান্ড মুন্নী ইসলাম জানান, পেশকার আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ায় তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান কালের কণ্ঠকে বলেন, অভিযুক্ত নাজির ও পেশকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।