নিউজ ডেস্ক ::

গাজীপুরের টঙ্গীতে সেটার্ন অ্যাপারেলস লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানার ঝুট ব্যবসা নিয়ে আবারও বিএনপির দুই পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এ সময় অন্তঃত ২০টি ককটেলের বিস্ফোরণ এবং পাঁচ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের ১৫ জন আহত হন। এতে ওই এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ও র‌্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শনিবার (২৮ জুন) দুপুর পৌনে ১টার দিকে টঙ্গী পশ্চিম থানার গাজীপুরা এলাকার সেটার্ন টেক্সটাইল ও হোপলুন কারখানার সামনের সড়কে এ ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন—রাসেল (৩০), মাহবুব হোসেন (৩২), বাবু মিয়া (২৮), আনোয়ার হোসেন (৩৫), ফরহাদ মিয়া (২৬), হাফিজুল ইসলাম (৩৩), শিপন (২৯), মাসুম (৩৭) ও হানিফ মোল্লা (৩১)। তাদেরকে টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল, বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, দীর্ঘদিন যাবত ঝুট ব্যবসা নিয়ে গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব হালিম মোল্লা এবং ৫০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী হুমায়ুনের অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। দুপুরে কারখানা থেকে ঝুট বের করা নিয়ে আবারও দুই পক্ষের সমর্থকরা মুখোমুখি হয়। এ সময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় দুই পক্ষের লোকজন ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে এবং উভয়পক্ষ অন্তত পাঁচ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়েন। এতে আশপাশের এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী হুমায়ুন বলেন, আমার সঙ্গে করা একটি জুট ব্যবসার চুক্তি হালিম মোল্লা জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিতে চাইছেন। আজও তার নেতৃত্বে ১৫০-২০০ জন এসে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালান ও বোমা ফাটান। আমরা দুজনই বিএনপির গাজীপুর মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল করিম রনির অনুসারী।

গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব হালিম মোল্লার অনুসারী এবং টঙ্গী পশ্চিম থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য আল মামুন বলেন, ঝুট ব্যবসার আয়ে বিএনপি শক্তিশালী হওয়ার বদলে কিছু নেতা আওয়ামী লীগকে সহযোগিতায় ব্যবহার করছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, কাজী হুমায়ুন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন।

গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব হালিম মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

টঙ্গী পশ্চিম থানা বিএনপির আহ্বায়ক প্রভাষক বসির উদ্দিন বলেন, যারা সংঘর্ষে জড়িয়ে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মহানগর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন বলেন, ঘটনার বিষয়ে আমি অবগত। বিষয়টি কেন্দ্রীয় ফোরামে তোলা হবে এবং দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপির) টঙ্গী পশ্চিম থানার ভরাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিব ইস্কান্দার বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় এখনো (সন্ধ্যা ৭টা) কোনো পক্ষ অভিযোগ দেয়নি।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেন, কে কোন দলের সেটা মুখ্য নয়। যারা এ ঘটনায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ মে একই কারখানার ঝুট ব্যবসা নিয়ে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওইদিনও ককটেল বিস্ফোরণ, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে এবং সাংবাদিকসহ অন্তত ১০-১৫ জন আহত হন। ওই ঘটনায় টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের হলে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেন।