নিউজ ডেস্ক :: লন্ডন বৈঠকের পর সংস্কার প্রস্তাব বিএনপিকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বুধবার এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।
সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার যে উদ্দীপনা ও প্রতিজ্ঞা নিয়ে কাজ শুরু করেছিল, এখন তাতে ভাটা পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। বিশেষ করে লন্ডন বৈঠকের পর সংস্কার প্রস্তাব বিএনপিকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে।
তারা একমত না হলে সেই প্রস্তাব আর অগ্রসর হচ্ছে না। পিআরের মতো একটি বিষয়ে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত হলেও কেবল একটা দলের জন্য বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। অথচ স্বৈরতন্ত্র রোধে পিআর একটি পরীক্ষিত ও উত্তম পদ্ধতি।’ অন্তর্বর্তী সরকারকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে তার প্রতিজ্ঞা ও দায় পূরণে অবিচল ও কঠোর হতে হবে।
স্বৈরতন্ত্রের রাস্তা খোলা রেখে কারও চাপে যদি এই সরকার নির্বাচন আয়োজন করে, তাহলে ইতিহাসে তারা চির অপরাধী হয়ে থাকবে। কারণ, জুলাই রাষ্ট্র সংস্কারের যে মহাসুযোগ তৈরি করেছে, তা জাতির জীবনে পুনরাবৃত্তি হবে, এমন আশা করা যায় না।’ মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে। স্বৈরতন্ত্র প্রতিরোধে রাষ্ট্রকে স্বয়ংক্রিয় হতে হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতি সুষ্ঠু ও সুন্দর হতে হবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী হতে হবে।
এরপর নির্বাচন নিয়ে কথা বলা যাবে। রাষ্ট্রকে ভঙ্গুর করে কোনো দলকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য যেনতেন নির্বাচন আয়োজন করা হলে তার পরিণতি ভালো হবে না।’ জুলাইয়ে তরুণদের আত্মত্যাগ প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ ছিল মন্তব্য করে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, ‘জুলাই আন্দোলন বিগত পনেরো বছর ধরে চলা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন ছিল না, বরং জুলাই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জেঁকে বসা অনিয়মকে দূর করা, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া এবং দেশ থেকে চিরতরে স্বৈরতন্ত্রকে উৎখাত করা। যে তরুণেরা অকাতরে জীবন দিয়েছে, তাদের অধিকাংশই প্রচলিত রাজনীতি করত না।
কারণ, তারা প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে অপছন্দ করত। তাদের আত্মত্যাগ প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিরুদ্ধেও একটি বিক্ষোভ ছিল।’
নির্বাচন নির্বাচন করে সংস্কারের দাবি আড়াল করা হয়েছে মন্তব্য করে সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তির এই ক্ষণে দাঁড়িয়ে বেদনা ও দায় অনুভব করছি। জুলাই ঘোষণা এখনো দেওয়া যায় নাই, রাষ্ট্র সংস্কারের মৌলিক জায়গায় একমত হওয়া যায় নাই, বিচার নিশ্চিত করা যায় নাই। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতাকেন্দ্রিকতা প্রকট হয়ে উঠেছে। চাঁদাবাজি, দখলবাজি এখনো চলমান।
চাঁদার দাবিতে রাতভর নির্যাতন করা, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করার মতো বর্বরতা এখনো বিদ্যমান। অথচ নির্বাচন নির্বাচন করে সংস্কার ও বিচারের দাবিকে আড়াল করে দেওয়া হয়েছে। যে চাওয়া নিয়ে আমাদের তরুণেরা গত জুলাইয়ে প্রাণ দিয়েছে, এক বছর পরে এসে মনে হচ্ছে তাদের চাওয়া হতে আমরা অনেক দূরে অবস্থান করছি।’