নিউজ ডেস্ক :: জয়পুরহাটে শ্রী নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজটির ব্যয় প্রায় প্রায় ৭২ লাখ টাকা। এই নদীর একপাশে বসতবাড়ি, অন্যপাশে ফসলি জমি। গ্রামবাসীদের সুবিধার্থে নির্মাণ করা হয়েছে ব্রিজটি। তবে সেটি এখন গ্রামবাসীর উপকার বা সুবিধা নয়, আতঙ্কিত করে তুলেছে। ব্রিজ নির্মাণের এক বছরের মধ্যেই ধরেছে ফাটল, দেবে গেছে ব্রিজের মাঝের অংশ। ব্রিজের দুই পাশের গাইড ওয়ালও ধসে পড়েছে। এমনকি মেরামত করে ব্রিজটি টেকানোর মতো কোনো অবস্থাও নেই। পানির স্রোতে যে কোনো সময় ব্রিজটি ভেঙে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে জয়পুরহাট সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর গ্রামের শ্রী নদীর ওপর। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতা ও নির্মাণকাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করায় ব্রিজটির এমন অবস্থা হয়েছে।
গ্রামবাসী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভূ-উপরিস্থ পানি উন্নয়নের মাধ্যমে বৃহত্তর দিনাজপুর ও জয়পুরহাট জেলার সেচ সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর গ্রামে শ্রী নদীর ওপর একটি ব্রিজ নিমার্ণের উদ্যোগ নেয়। মেসার্স রফিক এন্ড মিম ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০২৪ সালের ২৫ মার্চ সাবমারজেড ওয়্যার এন্ড ফুট ওভার ৬৫ ফিট ব্রিজটির নির্মাণকাজ শুরু করে। এ কাজের ব্যয় ধরা হয় ৭২ লাখ ৭৩ হাজার ৪৩৯ টাকা। ওই বছরের ৭ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কাজটি বুঝে নেয় বিএমডিএ। সেতুটি নির্মাণের সময় নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার ও শিডিউল মোতাবেক কাজ না করার অভিযোগ করেছিলেন স্থানীয় লোকজন। ওই সময় সংশ্লিষ্টরা তাদের অভিযোগকে কোনো পাত্তা দেননি। ফলে ব্রিজটি চালুর কয়েকমাস যেতে না যেতেই ঢালাইয়ের মাটি-বালু সরে যায়। ব্রিজের দুটি পিলার দেবে গিয়ে মাঝের অংশ নিচু হয়ে গেছে। দুই পাশের রেলিংয়ে ফাটল ধরেছে। সেতুটি যে কোনো সময় ভেঙে হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লাল ও হলুদ রঙে ফুটে ওঠা ব্রিজটির অবস্থা বেহাল। অনেকগুলো স্থানে ফাটল ধরায় সেখানে নতুনভাবে সিমেন্ট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ব্রিজের মাঝের পিলার দেবে গেছে, আর ওই স্থানের পাটাতনে পানি জমে আছে এবং ওই অংশ পিচ্ছিল হয়েছে। গ্রামের লোকজন পানি ভেঙে ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচল করছে। দুই পাশের পুরো রেলিংয়ে ফাটল ধরেছে। পাটাতনের নিচ অংশে পিলারের উপরের দিকে ফাটল ধরে আছে। ব্রিজের দুই পাশে গাইড ওয়াল হেলে গেছে এবং সেটির বিভিন্ন অংশ ফেটে গেছে।
উত্তর জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ওই পাশে আমাদের জমি আছে। কৃষি কাজের জন্য যাতায়াত করি। কিন্তু ব্রিজের এখন করুণ অবস্থা, আমাদের চলাচলের জন্য ভয়াবহ হয়ে দাঁড়াইছে। এখন যে পরিস্থিতি অনেক জায়গায় ভেঙে গেছে। আমরা ভয়ে ভয়ে পার হই। যদি জোড়ে স্রোত হয় সেক্ষেত্রে ব্রিজ ভেঙে যেতে পারে।
ওই গ্রামের এক গৃহবধূ মুক্তা খাতুন বলেন, আমাদের উপকারের জন্য ব্রিজ করা। কিন্তু কোনো কাজে আসেনি। একটি পাওয়ার টিলার পার হয় না। এমনভাবে ফেটে গেছে আমাদের যাতায়াত করতেই ভয় করে।
ফয়সাল আহাম্মেদ নামের আরেকজন বলেন, ব্রিজের উপর সলিং করে কোনো রকম কাজ করেছে। পানি আসার পর দুইপাশে ফাটল ধরছে, তা ছাড়া অনেক জায়গায় ভেঙে গেছে। মাঝখানে ঢালু হয়ে পানি জমে আছে। তাদের লোকজন এসে শুধু দেখে যায়, ঠিক করার কথা, আর কেউ আসেনি।
এ ব্যাপারে জানতে ঠিকাদার আতাউল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলে তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
পানির চাপে বালু-মাটি সরে গিয়ে ব্রিজটির পিলার দেবে গেছে। নিম্নমানের কাজের জন্য সেটি নষ্ট হয়নি বলে দাবি করে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জয়পুরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী আশেকুর রহমান বলেন, এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে সেখানে একটি ফুট ওভার ব্রিজ করা হয়েছে। সেটি নদীর শেষের দিকে। হঠাৎ করে একটি বন্যা আসে। এখন নরমাল ফুট ওভার ব্রিজ, আর ডিজাইন তো আমরা করি না। নিচ দিয়ে পানি ঢোকার ফলে সেখানে বাঁধা পায় এবং দেবে যায়। ঠিকাদারকে চূড়ান্ত বিল দেওয়া হয়নি।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, জয়পুরহাটের লোকজনের ভালোর জন্য তদবির করে প্রকল্পটি এনেছিলাম। একটি সেতুর কারণে আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে। আর কোনো কাজ তদবির করে আনবো না। আমি চেষ্টা করবো এখান থেকে বদলি হয়ে চলে যাওয়ার।