নিউজ ডেস্ক :: চাঁদপুরে ইলিশের মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব চূড়ান্ত হওয়ার খবরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের মাঝে। ক্রেতারা দাম নির্ধারণের বিষয়টিকে সাধুবাদ জানালেও তাদের দাবি- সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।
বিক্রেতারা বলছেন- বিষয়টি একেবারে অযৌক্তিক। ইলিশের দাম নির্ধারণ করে বিক্রি করা একেবারে অসম্ভব। যার কারণে সরকারের এ সিদ্ধান্ত কখনোই বাস্তবায়ন হবে না। আড়তে ইলিশ কম আসছে, দাম নির্ধারণ হলে সেটি আরও কমে যাবে ।
এর আগে ইলিশের বাজার নিয়ন্ত্রণে ১৭ জুন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠান। সেই চিঠির আলোকে ২৬ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার নিকট উপস্থাপন করে এবং মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাবে সম্মতি দেন প্রধান উপদেষ্টা।
চাঁদপুর মাছঘাটে কচুয়া থেকে আসা ইলিশের ক্রেতা সাব্বির আহমেদ বলেন, ইলিশ মাছ উন্মুক্ত স্থান থেকে ধরা হয়। মাছের দাম এত বেশি কেন, এটি সরকারকে খুঁজে বের করতে হবে। আমার মনে হচ্ছে ইলিশের দাম বেশির ক্ষেত্রে একটা সিন্ডিকেট আছে। এই সিন্ডিকেট যদি দূর করা যায়, তাহলে ইলিশের দাম নির্ধারণ করা যাবে।
নোয়াখালী থেকে আসা আরেক ক্রেতা জয়নাল বলেন, ইলিশের মূল্য নির্ধারণ করাকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু শুধু ইলিশের মূল্য নির্ধারণ করলেই হবে? মূল্য নির্ধারণের সাথে সাথেই বাজার মনিটরিং করতে হবে।
ইলিশের ক্রেতা আলাউদ্দিন বলেন, এখানে ইলিশের দাম অনেক বেশি। বাজারে এসে ইলিশ কিনতে ভয় করে। আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি, সরকার ইলিশের মূল্য নির্ধারণ করে দেবে। পদক্ষেপটি বাস্তবায়ন হলে আমরা খুশি হব।
আরেক ক্রেতা মাসুদ হোসেন বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে আমরা কখনো ইলিশ প্রকৃত দামে ক্রয় করতে পারি নাই। আগের সরকারও চেষ্টা করছে ইলিশের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে। তারাও সফলতার মুখ দেখতে পারেনি। আগামীতে সফলতার মুখ দেখবে কিনা জানি না। আমরা চাঁদপুরের মানুষ হয়ে ইলিশ খেতে পারি না। অথচ ভারতে ইলিশের দাম অনেক কম। সরকার যদি শক্তভাবে সিন্ডিকেট ভাঙে, তাহলে ইলিশ সঠিকদামে ক্রয় করতে পারব।
চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটের ব্যবসায়ী নবীর হোসেন বলেন, মাছের দাম আমদামির ওপর নির্ভর করে। আমদামি যদি কম থাকে তাহলে দাম বাড়বে। আর কম হলে দাম কমবে। আমদামি না হওয়ার কারণে বেশি দামে ক্রয়- বিক্রয় করতে হয়। সরকার ইলিশের মূল্য নির্ধারণ করতে চায়। সরকার নির্দিষ্ট দাম করে দিলে বিক্রি করা সম্ভব না। আমার কথা হচ্ছে সরকারি খরচে নদীতে জেলেদের দিয়ে যদি মাছ ধরানো হয় তাহলে তারা বুঝবে মাছ ধরতে কি পরিমাণ খরচ হয়।
মাছঘাটের আড়তদার মেসার্স প্রধানীয়া ট্র্রেডার্সের মালিক জিয়া প্রধানীয়া বলেন, সরকার ইলিশের মূল্য নির্ধারণ করতে চায়, এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ আমদামি না হওয়ার কারণে বেশি দামে ক্রয়-বিক্রয় করতে হয়।
আরেক ইলিশ ব্যবসায়ী সুজন বলেন, প্রতি মাসে কী পরিমাণ ইলিশ সরবরাহ হবে। তার ওপর ইলিশের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।
চাঁদপুর বড়স্টেশন মৎস্য বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত সরকার বলেন, ‘ইলিশ সরবরাহের ওপর দাম নির্ধারণ হয়ে থাকে। সরকার নির্দিষ্ট দাম করে দিলে বিক্রি করা সম্ভব না। কারণ কাঁচামাল অগ্রিম মূল্য নির্ধারণ করা যায় না। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে চাঁদপুরসহ সারাদেশে ইলিশ নেই, তাহলে কীভাবে মূল্য নির্ধারণ করে দেবে। তারপরও ইলিশ সরবরাহের ওপর দাম নির্ধারণে প্রশাসনের এই সমস্যা সমাধানের যদি সুযোগ থাকে, তাহলে আমরা তাদেরকে সব্বোর্চ সহযোগিতা করব।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মহসীন উদ্দিন বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ইলিশের দাম নির্ধারণে সম্মতি দিয়েছেন। তবে এখনো দাম নির্ধারণের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়নি। ইলিশ ধরা ও সরবরাহ খরচের ক্ষেত্রে আড়তদার, জেলে, ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করা হবে।