নিউজ ডেস্ক :: ঋণের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার মোছা. নুরুন্নাহার (৪৭) নামের এক নারীকে প্রায় দুই ঘণ্টা যাবৎ চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) অফিসে তালাবদ্ধ করে রাখার ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) অফিসের মধ্যে ওই নারীকে তালাবন্ধ রাখেন মাঠ সংগঠক আবিদা খাতুন। এরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশ এবং অফিসের কর্মকর্তারা এসে ওই নারীকে উদ্ধার করেন।
জীবননগর পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) কর্মকর্তা জামিল আখতার বলছেন, অভিযুক্ত নারী ইরেসপো প্রকল্পের আওতাধীন মাঠ সংগঠক হিসেবে জীবননগর উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসের কর্মরত। তিনি যে কাজটি করেছেন এটা ঠিক হয়নি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলার পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা জামিল আখতার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি নিজেই অফিসে গিয়েছিলাম। ওই নারী অসুস্থ ছিলেন না। তবে কিছু সময়ের জন্য তাকে তালাবন্ধ করে আমাদের মাঠ সংগঠক নামাজে গিয়েছিলেন। এটি করা ঠিক হয়নি। কাউকে তালাবদ্ধ করে রাখা অন্যায়। ঘটনাটি ঘটেছে সন্ধ্যা ৬টার পর, আমরা ৫টার দিকে সবাই চলে গিয়েছি অফিস থেকে। পরে বিষয়টি জানতে পেরে আমি নিজেই অফিসে গিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, বছর খানেক আগে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার আওতায় মোছা. নুরুন্নাহার, তার মেয়ে এবং তার পুত্রবধুকে এক লাখ করে মোট ৩ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করা হয়। ৮ শতাংশ সুদ হিসেবে প্রতিমাসেই কিস্তি পরিশোধ করে আসছিলেন। তবে গত তিনমাস যাবৎ তিনি কোনো টাকা পরিশোধ করেননি। এতে তাকে কয়েকবার নোটিশ করার পরও তিনি কোনো প্রকার সাড়া দেয়নি। রোববার অফিস খুললে আমরা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে ভুক্তভোগী নুরুন্নাহার তার ছোট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের অফিসে যান। তবে কর্তৃপক্ষ পুরো ঋণের টাকা এক সঙ্গে পরিশোধের জন্য চাপ দিলে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে মাঠ কর্মকর্তা আবেদা খাতুন তাকে অফিসের ভেতরে তালাবদ্ধ করে রাখেন।
তালাবদ্ধ অবস্থায় নুরুন্নাহার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি টাকা দিতে রাজি। আজ কিছু টাকা এনেছি, বাকি টাকা শিগগিরই দেব। কিন্তু তা না শুনেই আমাকে আটকে রাখা হয়েছে।
ভুক্তভোগীর ছেলে বলেন, আমার মা টাকার অভাবে পুরো ঋণ এক সঙ্গে দিতে পারেননি। আমি অনুরোধ করেছিলাম আমাকে আটকে রাখতে, কিন্তু আমার অনুরোধ কেউ শোনেনি। আমার অসুস্থ মাকে আটকে রাখল তারা।
মাঠ সংগঠক আবেদা খাতুন বলেন, ১৪ মাস আগে তিনি ৩ লাখ টাকা ঋণ নেন। ৪ মাস আগে মেয়াদ শেষ হয়েছে। বারবার সময় নিলেও টাকা পরিশোধ করেননি। তার নানা অজুহাত ও প্রতিশ্রুতি আমাদের অফিসে বেতন প্রভাবিত করেছে। আমি বাজারে গিয়েছিলাম, ফেরার পর দেখি তালা দেওয়া নিয়ে হইচই। আমি তাকে আটকে রাখেনি। তালাবদ্ধ করে বাড়িতে গিয়ে নামাজ এবং খাবার খেয়ে এসেছি।
জীবননগর থানা পুলিশের পরিদর্শক মামুন হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি দল পাঠানো হয়েছিল। ওই নারী তিন লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিল তা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ কারণে অফিসের মাঠ সংগঠক আটকে রেখেছি। তবে এটা আইনসিদ্ধ নয়। কর্তৃপক্ষ চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।