নিউজ ডেস্ক :: পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) সামনে এক ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। আজ শুক্রবার রাতে তাঁরা নিজ নিজ ক্যাম্পাসে এ বিক্ষোভ করেন।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার সন্ধ্যায় পুরান ঢাকায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) জনসমক্ষে পিটিয়ে ও পাথর দিয়ে বুক ও মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে যুবদল ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা–কর্মী শনাক্ত হয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
আজ রাত ১০টার দিকে সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্যের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে আবার বটতলায় গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ হয়।
বিক্ষোভ মিছিলে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, ইসলামী ছাত্রশিবির, গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন, আধিপত্যবাদবিরোধী মঞ্চ, বিল্পবী সাংস্কৃতিক মঞ্চের নেতা-কর্মীসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
মিছিলপরবর্তী সমাবেশ সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব আহসান লাবিব।
সমাবেশে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নাদিয়া রহমান বলেন, ‘গত ৯ মাসে বিএনপির অন্তঃকোন্দলের কারণে প্রায় দেড় শ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি এই বাংলাদেশে আর হতে দেব না। আপনারা যদি না শোধরান, তাহলে হয়তো আগামীতে আপনাদের ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন পূরণ হবে, কিন্তু কত দিন ক্ষমতায় টিকে থাকবেন, সেটা ছাত্র-জনতা আবার ঠিক করে দেবে।’
সমাবেশে ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেক্রেটারি শাফায়েত মীর বলেন, ‘আবার যারা আওয়ামী লীগের পুরোনো বন্দোবস্ত চালু করতে চায়, আবার চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, খুন করতে চাচ্ছে, সেই দলকে আমরা বলব, চাঁদাবাজি না করে ভিক্ষা করুন, আমরা ভিক্ষা দেব। কিন্তু আমরা আপনাদের জুলুম, নির্যাতন, খুন মেনে নেব না। প্রয়োজনে আবার রাজপথে নামব।’
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব তৌহিদ সিয়াম বলেন, ‘বিএনপি যদি এই খুন, রাহাজানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে হয়তো সেদিন বেশি দূরে নেই, যে পথে আমরা লীগকে পাঠিয়েছি, সেই পথে ফ্যাসিবাদী আমলে আমাদের সহযোদ্ধা বিএনপিকেও হয়তো হাঁটতে হবে।’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ক্যাম্পাসের জিয়া মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে প্রশাসন ভবন চত্বরে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হন তাঁরা।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসমন্বয়ক ইয়াসিরুল কবির বলেন, ‘আমরা তাদের মুখে বারবার শুনি, নির্বাচন না দিলে নাকি দেশের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা ঠিক হবে না। কিন্তু আমরা এটাও দেখতে পাই যে নির্বাচন না হওয়ার কারণে ওই সংগঠন সবচেয়ে বেশি খুনের রাজনীতি করতেছে। এই খুনের রাজনীতি তারাই কায়েম করতে চায়, আর তারাই বলতেছে নির্বাচন চাই।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুজ্জোহা চত্বরে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, ‘ব্যবসায়ী হত্যায় খুনি ছিল যুবদল। বাংলাদেশে স্পষ্টভাবে দলের নাম ধরে সমালোচনা করা শিখতে হবে। যদি তা না পারেন, তাহলে সবাই আবার হাসিনা হয়ে উঠতে চাইবে। প্রত্যেকে আওয়ামী লীগ হয়ে উঠতে চাইবে। নতুন বাংলাদেশে জুলাই যত দিন বেঁচে থাকবে, আমরা কোনোভাবে কাউকে আওয়ামী লীগ হয়ে উঠতে দেব না।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমালোচনা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজা বলেন, ‘আপনার দল চাঁদাবাজি করছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে, খুন করছে, এর বিচার আপনার করতে হবে। যদি না করেন, তাহলে আমরা মনে করব, এসব ঘটনায় আপনার সম্মতি আছে।’
আরেক সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার অনতিবিলম্বে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।
সমাবেশ সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক নুরুল ইসলাম শহীদ। এ সময় বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রাত সাড়ে আটটার দিকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রগতিশীল বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।
{প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, কুষ্টিয়া এবং প্রতিনিধি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়}