নিউজ ডেস্ক :: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুল নওরীন উর্মির ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিতে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (৭ জুলাই) বিচারপতি ফাতিমা নাজিব ও বিচারপতি মো. হামিদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, চার সপ্তাহের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জান্নাতুল নওরীন উর্মির ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে।
এরআগে, ছাত্রত্ব ফিরে পাওয়ার দাবিতে জান্নাতুল নওরীন উর্মি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই বিক্ষোভে জান্নাতুল নওরীন উর্মির ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সুজিত বালা এবং ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। ঘটনার বিচারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগও দেন। কিন্তু তিনি তার ছাত্রত্ব হারান।
ছাত্রত্ব ফিরে পেতে ২০২৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর উপাচার্য বরাবর আবেদন জানান নওরীন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে ৩ ডিসেম্বর একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। পরে প্রশাসন ২০২৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তবে আশ্বাসের পরও তাকে পড়াশোনার সুযোগ দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
নওরীন বলেন, ‘আমি শুধু আমার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে আমাকে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বহুবার অনুরোধ করেও যখন কোনো সমাধান পাইনি, তখন বাধ্য হয়ে আদালতের শরণাপন্ন হই।’
তার আইনজীবী মো. জিয়াউর রহমান বলেন, ‘বিচারিক আদালতের এই আদেশে আমরা সন্তুষ্ট। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত নওরীনকে পুনরায় পড়াশোনায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেবে।’
জান্নাতুল নওরীন উর্মি ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রী-বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
মেডিকেলে ভর্তি কোচিং করায় ২০১৬-১৭ সেশনে ক্লাস শুরু করে ২য় বর্ষে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ২০১৭-১৮ সালের কোটা আন্দোলনে কোটা বাতিলের পক্ষে আন্দোলন করেন ও ফেসবুকে লেখালেখি করায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ তার পরিবারকে হুমকি দেয়। পরবর্তীতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে বাঁধা দেয় এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করলে তার বাবা থানায় ১৭ মার্চ ২০১৮ সালে সাধারণ ডায়েরি করেন।
২০২০ সালে ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি ছাত্রদলের মতবিনিময় সভায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি পদপ্রার্থী হওয়ায় ২০২০ সালের ১ মার্চ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে নওরীনের ওপর হামলা হয়। এ নিয়ে বেশ কয়েকটি জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ করা হয়। সে সময়ও ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বিচার দাবি করেছিলেন। তবে জড়িতরা আওয়ামীপন্থি শিক্ষক ও ছাত্রলীগের রাজনীতি করায় তিনি বিচার পাননি বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
ঘটনার ১০ দিন পর ২০২০ সালের ১১ মার্চ গণিত বিভাগের শিক্ষক সুজিত বালাকে প্রধান আসামি করে বরিশালের বন্দর থানায় ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী আলিম সালেহী, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম, ষষ্ঠ ব্যাচের আবদুল্লাহ ফিরোজ, পঞ্চম ব্যাচের হাফিজ ও আসাদুজ্জামান আসাদ।
এ বিষয়ে জান্নাতুল নওরীন বলেন, ‘২০২০ সালের ১ মার্চ হত্যার উদ্দেশ্যে আমার ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। গণিত বিভাগের শিক্ষক সুজিত বালা ফাইনাল পরীক্ষার হল থেকে আমাকে বের করে তুলে দিয়েছিলেন কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার হাতে। ঘটনায় সুজিত স্যার ছাড়াও মোট আটজন ছিলেন। কিন্তু আমি দুজনকে চিনতে পারিনি। সেই ছাত্রলীগ নেতারা আমার মাথায় আঘাত করে ও নির্মমভাবে পেটায়। সারা শরীরে জ্যামিতি বক্সের কাঁটাকম্পাস দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করে; গলার চামড়ায় দাগ কাটে। পেন্সিল ভেঙে অর্ধেক আমার বুকে ঢুকিয়ে দেয়, ভেঙে দেয় পা। এসব নির্যাতনের চিহ্ন আজও আমি সারা শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছি। আওয়ামী লীগ সরকার থাকায় আমি কোনো বিচার পাইনি। এখন আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুনেছি আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর পরই সুজিত বালা স্যার আমেরিকা পালিয়ে গেছে। ছাত্রলীগ নেতারা গা ঢাকা দিলেও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে নয়। যেহেতু দেশ স্বৈরাচারের কবল থেকে মুক্ত হয়েছে, আমি আশাবাদী এবার ন্যায়বিচার পাব।’