নিউজ ডেস্ক :: বরিশালের কাউনিয়ার বাসিন্দারা ‘সেকশন মাঠ’ স্থায়ীভাবে হারাতে চলেছেন। জেলা পুলিশ গত দু’দিন ধরে মাঠের চারপাশে উঁচু প্রাচীর নির্মাণ করছে। শিশু-কিশোরসহ এলাকাবাসী দফায় দফায় বাধা দিলেও কাজে আসেনি। বুধবার আবারও তারা মাঠ রক্ষায় নগরীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন। নগরের কাউনিয়া ব্রাঞ্চ রোড থেকে সাবান ফ্যাক্টরি সড়ক এবং ভাটিখানা সড়কের সংযোগমুখে সেকশন মাঠের অবস্থান।
এটির মালিক জেলা পুলিশ। মাঠটি নগরীতে ঐতিহ্যবাহী। চারদিকে কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে একমাত্র ব্যবহারযোগ্য এটি। শুধু খেলাধুলা নয়, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে দলগুলোর ভরসা মাঠটি। পুলিশ সূত্র জানায়, আগে মাঠের এক কোণে আধাপাকা ভবনে জেলা পুলিশের ফাঁড়ি ছিল। স্থানীয়রা এটিকে পুলিশ সেকশন বলতেন। উন্মুক্ত ৫৬ শতাংশ জমি স্থানীয়ভাবে ‘সেকশন মাঠ’ নামে পরিচিত। ২০ বছর আগে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশে উন্নীত হলে বিলুপ্ত হয় ফাঁড়ি।
স্থানীয় শিশু-কিশোর ও বাসিন্দারা আগের মতোই মাঠটি ব্যবহার করে আসছিলেন। গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, ১০ শ্রমিক সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ করছেন। সাদা পোশাক ও পোশাকধারী পুলিশ সেখানে পাহারা দিচ্ছেন। স্থানীয় কয়েক দোকানি জানান, দু’দিন আগে প্রাচীর নির্মাণ শুরু হয়। স্থানীয়রা কয়েক দফা বাধা দিলেও কাজ হয়নি। বুধবার সকালেও বিপুলসংখ্যক শিশু-কিশোরসহ স্থানীয়রা জড়ো হন। কিন্তু র্যাব-পুলিশের শক্ত অবস্থানে পিছু হটেন। এদিকে, গতকাল নগরের অশ্বিনী কুমার হলের সামনে মাঠটি রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন হয়।
পরে বিক্ষোভ নিয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের দপ্তরে তারা স্মারকলিপি দেন। মাঠের পূর্বপাশে আছমত আলী মাস্টার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (বালক ও বালিকা) নামে দুটি প্রতিষ্ঠান। সঙ্গে শুকতারা খেলাঘর আসরের কার্যালয়। দক্ষিণপাশে মসজিদ ও মাদ্রাসা। পশ্চিমে বড় পুকুর। উত্তরপাশ দিয়ে ব্রাঞ্চ রোড-ভাটিখানা এলাকার সংযোগ সড়ক।
স্থানীয়রা জানান, এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অদূরে মাতৃমন্দির সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর কাউনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং আশপাশের কিশোর-যুবকরা এ মাঠে খেলাধুলা করে। ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টনসহ নানা টুর্নামেন্ট আয়োজন হয়। স্থানীয় বাসিন্দা পরিবেশকর্মী আকতারুল কবির বলেন, ৬৬ বছর পার করেছি এ মাঠে খেলাধুলা করে। দুই বছর আগে জেলা পুলিশ ১০টি স্টল এবং অবশিষ্ট জমিতে গোডাউন করে ভাড়া দেওয়ার জন্য সাইনবোর্ড টানায়।
আন্দোলনের মুখে সে উদ্যোগ বন্ধ হয়। এখন নতুন করে মাঠের চারদিকে প্রাচীর দেওয়া হচ্ছে। মাঠটি বিলুপ্ত হলে আশপাশে কয়েক কিলোমিটারে মধ্যে উন্মুক্ত খেলার জায়গা থাকবে না। সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শুভংকর চক্রবর্তী বলেন, মাঠটির বয়স ৭০ বছর।
এটিকে কেন্দ্র করে শুকতারা খেলাঘর আসর গড়ে ওঠে। মাঠটি রক্ষার জন্য স্থানীয়রা আন্দোলন করছে। বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘জমিটি বহু বছর আগে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পুলিশ বিভাগ পেয়েছে। আগে সীমানাপ্রাচীর ও ফাঁড়ি ছিল। আগামীতে আবারও ফাঁড়ি চালুর জন্য নতুন ভবন হবে।
সেজন্য নতুন করে সীমানাপ্রাচীর করা হচ্ছে। সেখানে একটি গেট থাকবে। স্থানীয় শিশু-কিশোররা চাইলে গেট দিয়ে ঢুকে মাঠে খেলাধুলা করতে পারবে।’ তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে ভবন হলেও একপাশে খেলাধুলা করার মতো কিছু খোলা জায়গা রাখা হবে।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মাঠ রক্ষায় স্মারকলিপি পেয়েছি। কিন্তু জমির মালিক জেলা পুলিশ হওয়ায় আমি কেন কারও কিছুই করার নেই। এলাকাটি মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতায় হওয়ায় আইনশৃঙ্খলার কোনো অবনতি হলে আমরা দেখব।