নিউজ ডেস্ক :: বরগুনার পাথরঘাটায় অবস্থিত হরিণঘাটা বনাঞ্চল একসময় ছিল জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এবং পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণকারী এক অপার সৌন্দর্যের আধার। অথচ বর্তমানে এই বনাঞ্চল চরম অবহেলা ও অনিয়মের কারণে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ এই বনটি আজ নানামুখী সংকটে জর্জরিত। স্থানীয়দের অভিযোগ, হরিণঘাটা রক্ষায় বন বিভাগ কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। নিয়মিত নজরদারির অভাবে বনের অভ্যন্তরে যত্রতত্র গৃহপালিত পশুদের বিচরণ দেখা যায়, যা পরিবেশের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে।
বন বিভাগের নিষ্ক্রিয়তা চোরাকারবারীদেরও সুযোগ করে দিয়েছে। বনের ভিতরে নিয়মিত গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। রাতের আঁধারে গাছ কেটে পাচার করা হয় আশপাশের এলাকায়। এই অবাধ গাছচুরি বনাঞ্চলের স্বাভাবিক পরিবেশকে চরমভাবে বিঘ্নিত করছে।
অথচ এসব চুরির বিরুদ্ধে কার্যকর কোন আইনগত ব্যবস্থা দৃশ্যমান নয়। বন রক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত জনবল অপ্রতুল। হাতে গোনা কয়েকজন দিয়ে বিশাল এলাকা রক্ষা করা সম্ভব নয় বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পাশাপাশি সরকারি বরাদ্দের অভাবও রক্ষাণাবেক্ষণ কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে।
পাথরঘাটা উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন “হরিণঘাটা এখন একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্পট। কিন্তু অধিকাংশ পর্যটকই পরিবেশ সচেতন নয়। বন এলাকা ঘুরে তারা প্লাস্টিক বোতল, চিপসের প্যাকেটসহ নানা অপচনশীল বর্জ্য ফেলে যায়। ফলে পর্যাপ্ত ডাস্টবিনের ব্যবস্থা না থাকায় এসব বর্জ্য বনভূমিকে দিন দিন দূষিত করে তুলছে।”
প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা ও পর্যটন সম্ভাবনাকে বাঁচিয়ে রাখতে হরিণঘাটা বনাঞ্চলের সুরক্ষা এখন সময়ের দাবি। বন বিভাগকে সক্রিয় হওয়া, লোকবল ও বরাদ্দ বৃদ্ধি, গাছচুরি রোধে কঠোর নজরদারি এবং পরিবেশ সচেতনতা বাড়াতে পর্যটকদের প্রশিক্ষণ ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এখন অত্যন্ত জরুরি।
এই বন শুধু পাথরঘাটার গর্ব নয়, এটি দেশের একটি মূল্যবান সম্পদ। অবহেলা অব্যাহত থাকলে আমরা হারাবো আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক ঐতিহ্য। এখনই সময় হরিণঘাটাকে রক্ষা করার।