নিউজ ডেস্ক :: সাবেক স্ত্রীর যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর চিঠি দিয়েছেন ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে কর্মরত অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। অভিযুক্ত ফাহিমা আক্তার তুরাগ থানাধীন বাউনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন জাঁকজমকপূর্ণ জীবনাকাঙ্ক্ষা, জীবনযাত্রায় উভয়ের রুচি ও চাহিদার অমোচনীয় বৈপরিত্য, স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর প্রতি নিদারুণ অসম্মানজনক আচরণ ও ইচ্ছাকৃত অযত্ন অবহেলা, স্ত্রীর অবাধ্যতা, আত্মীয়-অনাত্মীয় নির্বিশেষে পরিচিতজনদের নিকট মিথ্যা অপবাদ ও কুৎসার বিস্তার ঘটাতে থাকা, প্রকাশ্য অশান্তি ও বিশ্রী কলহ এবং ক্রমাগত চাপের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রের প্রচলিত সব আইন বিধিবিধান ও মুসলিম ধর্মাবলম্বী হিসেবে ধর্মীয় আচার ও রীতিনীতি প্রতিপালনপূর্বক সাক্ষীদের উপস্থিতিতে সজ্ঞানে নিরাময় অযোগ্য কারণে দীর্ঘদিনের অসুস্থ ও অস্বাস্থ্যকর সম্পর্কের অনিবার্য পরিণতি হিসেবে সরকারি বিবাহ তালাক ও নিবন্ধন (কাজী) অফিসে তালাক দিতে বাধ্য হই।
অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম চিঠিতে লেখেন, এরপরেও বিভিন্ন সময়ে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আমার আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী, জুনিয়র ও পরিচিতজনদের কাছে চরম অসত্য, বিভ্রান্তিমূলক ও মানহানিকর তথ্য ও বক্তব্য নানাভাবে প্রচার করে আমাকে কর্মস্থলে ও সামাজিকভাবে নিগৃহীত করার লক্ষ্যে অপমানকর পরিস্থিতি তৈরির অপরাধমূলক কর্মকণ্ডে অব্যাহত রেখেছেন এবং দাম্পত্য জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সংঘটিত একান্ত ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও গোপনীয় তথ্যের অনৈতিক ও বেআইনি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রায়শই ব্ল্যাকমেইল করার হীন প্রচেষ্টায় লিপ্ত হন। যা চরম অশান্তিজনক, বিরক্তিকর ও মর্মপীড়াদায়ক।
তিনি বলেন, ডিভোর্স নোটিশ প্রাপ্তি থেকে চূড়ান্ত নিবন্ধন পর্যন্ত ৩ মাস সময়কালে ওই বিষয়ে ডিভোর্স সংক্রান্তে বা অন্যবিধ কোনো আপত্তি বা অভিযোগ সে কোথাও দাখিল করেনি। আনুষ্ঠানিক বা পারিবারিকভাবে কোনো অভিযোগ বা নিষ্পত্তির উদ্যোগ বা প্রচেষ্টা না নিয়ে থাকলেও, তার সীমাহীন অর্থলিপ্সার বিষয়টি বিহিত করা আমার পক্ষে কখনোই সম্ভব ছিল না। কারণ চাকরির আয়ের বাইরে আমার অন্য কোনো ব্যবসা বাণিজ্য ছিল না ও নেই। প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন যে, আমি চাকরিজীবনে কখনো কোনরূপ দুর্নীতি করিনি বা অবৈধ উৎস উদ্ভূত অর্থ বা সম্পদ সংগ্রহ করিনি, যা আমার পরিবারসহ পরিচিতজন সবাই সম্যকভাবে অবহিত। ফলে আমার সীমিত জ্ঞাত ও বৈধ আয়ের মধ্যেই ক্যান্সার সারভাইভার মায়ের ব্যয়বহুল চিকিৎসাসহ সব পারিবারিক চাহিদা প্রতিনিয়ত মেটাতে হয়।
অতিরিক্ত ডিআইজি চিঠিতে আরও উল্লেখ করেন, তার চরম বিরক্তিকর মানহানিকর অসত্য বানোয়াট ও বিভ্রান্তিমূলক কর্মকাণ্ডে আমি ভীতসন্ত্রস্ত এবং মানহানি ও প্রাণহানির আশঙ্কা করছি। এ ছাড়াও কর্মক্ষেত্রে আমার দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনাম ক্ষুণ্ন করার তার অপপ্রয়াস আমাকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে দিচ্ছে। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার, বৈধভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের ও পারিবারিক জীবন পুনর্গঠন করার আইনগত ও মৌলিক অধিকার রাষ্ট্র সমাজ ও ধর্ম আমাকে উপযুক্ত কারণেই অবারিতভাবে দিয়েছে মর্মে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
এসব ঘটনা উল্লেখ করে বর্ণিত বিষয়সমূহের উপযুক্ত ও বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তকে তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখতে ও উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার বদৌলতে ন্যায়বিচার প্রাপ্ত হয়ে সুষ্ঠুভাবে জীবনযাপন করতে সহায্য প্রার্থনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ফাহিমা আক্তারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফাহিমা আক্তারের বড় ছেলে জয় বলেন, সেপারেশনের পরে আব্বু মাসে মাসে টাকা দিতো। যতটুক দরকার আব্বু ততটুকই টাকা দিতো, কম দিতো না কখনো। কিন্তু আম্মুর তাতেও হতো না। এক্সট্রা টাকার জন্য প্রেশার দিতো। আমাকে বলতো যে, তোর বাপ তো টাকা দেয় না। কিন্তু যা যা লাগছে সবই দিতো। আমাকে আব্বুর থেকে টাকা চাওয়ার জন্য প্রেশার দিতো। এটা তো নেওয়া যায় না। এরকম মাসের পর মাস চলতে থাকতো।
তিনি বলেন, ওইরকম টক্সিক এনভায়রনমেন্টে আমি থাকতে পারছি না। ওটা নিতে পারছি না। এজন্য আমি আমার ইউনিভার্সিটির পাশে বাসা নিয়ে একা থাকি।
মায়ের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে জয় বলেন, আম্মুকে নিয়ে আমি আগেও ফোনে বলছি এবং ফেস টু ফেস বলছি। আর এখন যেটা বলব সেটা হচ্ছে, আম্মু যে ভুলগুলো করেছে এবং করছে প্রথমত সেটা অনৈতিক। উনি যে ভুলগুলো করছে বা যার ইনফ্লুয়েন্সে চলছে উনিও যে ভালো তাও কিন্তু না। একে তো ভুল ইনফরমেশনে চলছে আর ভুল ওয়েতে ডিমান্ড করছে। এটা তো লজিক্যালি বা ইথিক্যালি কোনোভাবেই ঠিক না। আর তোমার (মা) এই প্রেশারে আমার একাডেমিক লাইফে প্রবলেম হচ্ছে। পার্সোনাল লাইফে তো শুরু থেকেই প্রবলেম যাচ্ছে আমার সঙ্গে। আমি আগেও বুঝেছি। এগুলা বন্ধ করো। এগুলা করলে কিছুই হবে না, তোমার লস আমারও লস। তিনি আরও বলেন, রিয়া জোয়ার্দার নামে একজনের সঙ্গে আমার আম্মুর কথা হয়। ওনার সঙ্গে যেরকমভাবে কথাবার্তা বলছে, আমার মনে হয় তার ইনফ্লুয়েন্সেই আম্মু এরকম করছে। ওনাদের মেইন কনসার্ন হচ্ছে আব্বুর থেকে টাকা বা প্রপার্টি কীভাবে আনা যায়। সেটা যেভাবেই হোক, ওনাদের এই একটাই গোল।