নিউজ ডেস্ক :: মারামারির ঘটনায় অভিযোগের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানামূলে গভীর রাতে ঘুমিয়ে থাকা যমজ সন্তানসহ এক মাকে থানায় ধরে নিয়ে এসেছে পুলিশ। এরপর থানার নিজস্ব আইডিতে যমজ শিশু সন্তানসহ পোস্ট করলে ওই গৃহবধূ জামিনে এসে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে এখন ঝুঁকিতে আছেন। এমন ঘটনা ঘটে নান্দাইল থানায়। নিজেদের দক্ষতা দেখাতে এখন ময়মনসিংহের সব থানাতেই এ ধরনের কর্মকাণ্ড চলছে।
স্থানীয় সূত্র ও এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, নান্দাইল উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে ওই গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ি। গত প্রায় আট বছর আগে তার বিয়ে হয়। জমিসংক্রান্ত ঘটনা নিয়ে চাচাশ্বশুর ও চাচাতো দেবরদের সঙ্গে তার স্বামীর দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা চলছে।
এ নিয়ে প্রায় মাসখানেক আগে ঝগড়া-বিবাদ ছাড়াও সামান্য মারামারির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে এক চাচাশ্বশুর বাদী হয়ে তার স্বামীসহ তাকে ছাড়াও আরো কয়েকজনের নামে থানায় মামলা করেন। কিন্তু তিনি ওইসব ঘটনার সঙ্গে কখনো সম্পৃক্ত ছিলেন না। ছয় মাস আগে যমজ দুই পুত্র সন্তান হওয়ায় তাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
কখনো বুঝতে পারেননি যে তাকে মামলায় অভিযুক্ত করা হবে।
তিনি জানান, গত ৯ জুলাই রাতের খাবার খেয়ে যমজ সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। সেদিন গভীর রাতে বাড়িতে পুলিশ আসে। আদালতের একটি পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট) আছে জানিয়ে বন্ধ দরজায় ধাক্কা দিয়ে ঘুম থেকে উঠতে বলে। ওই সময় ঘরে স্বামী না থাকলেও শাশুড়ি জেগে উঠে দরজা খুলতেই নাম জানতে চেয়ে আটক করে থানায় যেতে বলে।
ওই সময় দুই সন্তানকে ঘুম থেকে উঠিয়ে কোলে নেন তিনি। পরে তাদেরসহ পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যায়। পরে সারা রাত থানার হাজতখানায় রাখা হয়। পরদিন জেলা শহর ময়মনসিংহ আদালতে পাঠালে সেখানের গারদে রাখা অবস্থায় বিকেলে জামিন হয়। এর আগে থানায় অবস্থান করার সময় অন্য আসামিদের সঙ্গে তার দুই শিশু সন্তানসহ ছবি তোলা হয়।
ওই গৃহবধূ আরো বলেন, ‘আমি একজন গ্রাম্য গৃহবধূ। আইন ও নিয়মকানুন সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। আমার মনে শুধু বাজতে থাকে কী অপরাধে আমাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। লজ্জায় মরে যাচ্ছিলাম। এখন তো দেখি ওই ছবি প্রতিপক্ষ বিশেষ করে বাদী নিজেদের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করে নামসহ প্রচার করছে। এতে আমি রাতে ঘুমাতে পারি না। এসব ভাবলে মরে যেতে ইচ্ছে হয়। যে চাচাশ্বশুরকে মারার কথা বলে মামলা দেওয়া হয়েছে ওই চাচাশ্বশুরের সামনেও আমি গত আট বছরে যাইনি, মারামারি তো দূরের কথা।’
গৃহবধূর স্বামী জানান, এ ঘটনার পর শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার ওপর খুবই ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। সংসারে বিশৃঙ্খলা চলছে। বিশেষ করে স্ত্রীর মানসিক অবস্থা এতই খারাপ যে শঙ্কায় আছেন। এর জন্য তিনি সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে জড়িতদের বিচার দাবি করেন।
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী কাজী এরশাদুর করিম আরমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গ্রেপ্তারের পর আসামির ছবি প্রকাশ করার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু আইন বা বিধিমালা রয়েছে। তাহলে অতিগুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর মামলা, গুরুতর অপরাধ, যেমন—হত্যা, ধর্ষণ, বা বড় ধরনের ডাকাতি মামলার আসামির ছবি জনসচেতনতা বাড়াতে বা অন্য আসামিদের ধরতে সাহায্য করার জন্য প্রকাশ করা হতে পারে। অন্যদিকে শিশুদের ক্ষেত্রে, তাদের ছবি প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা হয় এবং সাধারণত ছবি প্রকাশ করা যাবে না। বিশেষ করে বিচারের আগেই আসামির ছবি প্রকাশ করা হলে তা ‘মিডিয়া ট্রায়াল’ এর দিকে ধাবিত হতে পারে এবং এতে আসামির সম্মানহানি হতে পারে।’
নান্দাইল থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এটা মিসটেক হয়ে গেছে। এখন থেকে আরো সতর্ক হতে হবে।’
ময়মনসিংহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরীপুর সার্কেল) দেবাশীষ কর্মকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘থানার অপারেটর এ ধরনের কাজ করে। তারপরও বলা আছে আসামিদের মুখমণ্ডল ‘ডার্ক’ করে দিতে। কেন ওই নারী ও যমজ শিশুদের ক্ষেত্রে এমন হলো তা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’