নিউজ ডেস্ক :: বরিশালের বাকেরগঞ্জে কুকুরকে গলায় ফাঁস দিয়ে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যার পর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েকজনের বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। এ ঘটনায় জড়িত একজনকে জরিমানা ও তিনজনের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। বাকেরগঞ্জ থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি কুকুরকে গলায় রশি বেঁধে গাছের ডালের সঙ্গে টেনে ঝুলিয়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। কয়েকজন সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় বাসিন্দা খোকন হাওলাদার (৪২) কয়েকদিন ধরে গ্রামের কুকুরটিকে খুঁজছিলেন। তিনি প্রচার করে বেড়াচ্ছিলেন কুকুরটি পাগল তাই কুকুরটির ফাঁসি দেওয়া হবে। রোববার কুকুরটিকে এলাকায় পেয়ে খোকন হাওলাদারের নেতৃত্বে রায়হান মল্লিক (১৭), বায়েজিদ হাওলাদার (১৭) ও সুমন গাজী (২১) মিলে ধরে আনে।
কুকুরটির গলায় লম্বা রশি বেঁধে সেই রশি গাছের ডালের ওপর থেকে একপ্রান্ত খোকন হাওলাদার ধরে রাখেন। তিনি রশি ধরে টান দিলে কুকুরটি ঝুলে উপরে উঠে যায়। তখন একজনে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে কুকুরটিকে হত্যা করেন। অন্য দুজনে ভিডিও ধারণ করেন। তারা নিজেরাই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। এরপর মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হলে স্থানীয় পুলিশ অভিযান চালিয়ে চারজনকে আটক করে কলসকাঠী ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসে।
ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হুমায়ুন কবির বলেন, কুকুর মারার ঘটনা আজকে সমাধান হয়েছে। এসিল্যান্ড, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এসেছিলেন। তারা খোকন হাওলাদারকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। অন্য তিনজনকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. সালেহ আল রেজা বলেন, আমি প্রশিক্ষণে ঢাকায় থাকায় বাকেরগঞ্জের বিষয়ে কিছু জানি না। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আছেন ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. আমিরুল ইসলাম সোহাগ।
ডা. মো. আমিরুল ইসলাম সোহাগ বলেন, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ছুটিতে থাকায় আমি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে আমি ছিলাম। স্থানীয় বাসিন্দারা সাক্ষ্য দিয়েছেন, কুকুরটি ভারসাম্যহীন ছিল। তবে ভারসাম্যহীন থাকলেও এভাবে নৃশংসভাবে কোনো প্রাণীকে হত্যা করা আইনিভাবে অপরাধ।
তিনি আরও বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতে একজনের জরিমানা হয়েছে। বাকিদের মুচলেকা রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে কী ব্যবস্থা নিতে পারি, তা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে নেওয়া হবে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তন্ময় হালদার বলেন, কুকুর হত্যার ঘটনায় চারজনের মধ্যে একজনকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযুক্ত অন্যদের বিষয়ে আইন প্রয়োগের এখতিয়ার ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেই। তারা অপ্রাপ্ত বয়স্ক। এজন্য তাদের মুচলেকা নেওয়া হয়েছে।