নিউজ ডেস্ক :: একযোগে দেশের চার জেলায় গতকাল রোববার নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন শিক্ষার্থীসহ কিছু মানুষ। এতে মহাসড়কে অসংখ্য যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী যানবাহন আটকা পড়ে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ।
প্রতিষ্ঠার নয় বছরেও স্থায়ী ক্যাম্পাস না পেয়ে মহাসড়ক ব্লকেডের মতো কঠোর আন্দোলন শুরু করেছেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। গতকাল বেলা ১১টা থেকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশপথ সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় ঢাকামুখী সব মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার আধুনিকায়নসহ তিন দফা দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেছেন একদল শিক্ষার্থী। ‘বরিশাল ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত শুক্রবার থেকে ছাত্র-জনতার ব্যানারে তারা এ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। গাজীপুরের শ্রীপুরের পল্লীবিদ্যুৎ মোড় এলাকায় জুলাই যোদ্ধাদের নামের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন জুলাই যোদ্ধা তালিকাবঞ্চিতরা। ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সম্ভাব্য রুট পরিবর্তনের দাবিতে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন এলাকাবাসী।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন: রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রকল্পের ডিপিপি একনেক সভায় এজেন্ডাভুক্ত না হওয়ায় গত ২৭ জুলাই থেকেই মহাসড়ক অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। প্রতিদিন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক বন্ধ করে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও প্রতীকী পাঠদান কর্মসূচি চলে। এমন কর্মসূচিতে যানজটসহ প্রতিদিনই ভোগান্তিতে পড়তে হয় হাজারো মানুষকে। বিশেষ করে বাঘাবাড়ি থেকে উত্তরাঞ্চলে সার, তেলসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহনে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়।
গতকাল বেলা ১১টা থেকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশপথ সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল গোলচত্বর এলাকায় ঢাকামুখী সব মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। তারা ক্যাম্পাসের অনুমোদন ও পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসানের পদত্যাগ দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় ঢাকা-রাজশাহী, ঢাকা-পাবনা ও ঢাকা-রংপুর রুটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দেড় ঘণ্টাব্যাপী চলা কর্মসূচিতে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। একপর্যায়ে মহাসড়কের চারটি রুটেই যানজটের সৃষ্টি হয়। অনেককে হেঁটেই গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আরও ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা।
শাহজাদপুরের বিসিক বাসস্ট্যান্ড, দিলরুবা বাসস্ট্যান্ড এলাকার একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, ঘন ঘন অবরোধের কারণে দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। প্রতিদিনই দুই ঘণ্টা করে রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন। এর রেশ থাকে আরও এক-দেড় ঘণ্টা। তার পরও আমরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সমর্থন করি।
শাহজাদপুর বণিক সমিতির সভাপতি মো. নওশাদ বলেন, প্রতিদিন যে ছাত্ররা ধর্মঘটের আয়োজন করে, এতে জনজীবন অতিষ্ঠ। শাহজাদপুরের মানুষের বিরক্তিকর অবস্থা। আন্দোলন আমরা সমর্থন করি। স্থায়ী ক্যাম্পাস আমরা চাই; কিন্তু আন্দোলনের ধরনটা পাল্টাতে হবে।
শাহজাদপুর বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোক্তার হোসেন বলেন, এই আন্দোলনে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। আমাদের গাড়িগুলো ট্রিপ পায় না। পাবনা গিয়ে মার খেয়ে চলে আসে। সব গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। একটা বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এটা ছাত্রদের ব্যাপার, আমরা কী বলব।
হাইওয়ে পুলিশ সুপার মো. শহীদ উল্লাহ বলেন, তারা (শিক্ষার্থী) বঞ্চিত, তাদের দাবি আছে। পাশাপাশি এখানে লাখ লাখ মানুষ যাতায়াত করে। অনেক রোগী অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় যাচ্ছে, আবার হয়তো লাশ আনা হচ্ছে। মহাসড়ক বন্ধ করায় অনেক লোকই হয়রানির শিকার হয়। অন্য কোনো পন্থায় এ আন্দোলনটা করা যেতে পারে। তাদের আন্দোলন করার অধিকার আছে। তবে এটাও চিন্তা করতে হবে, এই রুটে ২২টি জেলার মানুষ চলাচল করে।
এসব বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী জাকারিয়া জিহাদ বলেন, আমরা সড়ক অবরোধ করলেও ইমার্জেন্সির জন্য একটা লেন খোলা রাখি। ওই লেন দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি প্রয়োজনের গাড়িগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়। আমাদের দাবি মানা না হলে আমরা রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি করব। এরপর প্রয়োজনে আমরণ অনশনে যাব।
তিন দিন ধরে অচল বরিশাল: বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার আধুনিকায়নসহ তিন দফা দাবিতে গতকাল তৃতীয় দিনের মতো ‘বরিশাল ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা–বরিশাল মহাসড়ক অবরোধের কারণে অসংখ্য যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী যানবাহন আটকা পড়ে হাজারো যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েন।
গতকাল দুপুর ১২টার দিকে নগরের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনকারীদের মহাসড়ক অবরোধ করে জনভোগান্তি সৃষ্টি না করার জন্য অনুরোধ করেন। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুরোধ-বাধা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা এ অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যান। তারা মহাসড়কে বাঁশ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে সেখানে বসে পড়েন এবং দাবির পক্ষে নানা স্লোগান দিতে থাকেন। পরে বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে তারা তৃতীয় দিনের কর্মসূচি সমাপ্ত করেন।
জুলাই যোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ: গাজীপুরের শ্রীপুরের পল্লীবিদ্যুৎ মোড় এলাকায় জুলাই যোদ্ধাদের নামের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির দাবিতে
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন জুলাই যোদ্ধা তালিকায় বঞ্চিতরা। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশের লেনে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের দুর্ভোগে পড়েন কয়েক হাজার যাত্রী। পরে শ্রীপুর থানা পুলিশ অবরোধস্থলে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের আশ্বাস দিলে প্রায় দেড় ঘণ্টা পর তারা অবরোধ তুলে নেন। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বিক্ষোভকারীদের মধ্যে নিলয় মৃধা জানান, শ্রীপুরে জুলাই যোদ্ধাদের তালিকা ত্রুটিপূর্ণ। নিজেদের খেয়ালখুশিমতো সেখানে অনেককেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকৃত জুলাই যোদ্ধাদের সেখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অনেকে আন্দোলনে না গিয়ে হোঁচট খেয়ে আহত হয়েছেন, তাদের নামও তালিকায় রয়েছে।
এক্সপ্রেসওয়ের রুট পরিবর্তনের দাবিতে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক অবরোধ: ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সম্ভাব্য রুট পরিবর্তনের দাবিতে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে রাজেন্দ্রপুর এলাকায় ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন এলাকাবাসী। গতকাল সকালে তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়েন এই রুটে চলাচলকারী যানবাহনের যাত্রীরা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এক্সপ্রেসওয়ের প্রস্তাবিত টার্নিং পয়েন্ট স্থাপনের জন্য তেঘরিয়া ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রাম নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে শত শত পরিবারের বসতভিটা, মসজিদ-মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও খেলার মাঠ বিলুপ্ত হবে। তারা বলেন, উন্নয়নের বিরুদ্ধে নয়, তবে উন্নয়ন হতে হবে মানবিক ও পরিবেশসম্মত। মাত্র এক কিলোমিটার পূর্বদিকে সরিয়ে নিলে গ্রামের অস্তিত্ব রক্ষা পাবে এবং সরকারের বিপুল অর্থও সাশ্রয় হবে।
সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ব্যক্তিগত প্রকল্প ‘প্রিয় প্রাঙ্গণ’ এর উদাহরণ টেনে বক্তারা বলেন, এত বড় ফাঁকা জায়গা থাকতে বসতভিটা উচ্ছেদ করে রুট নেওয়া অমানবিক। মানুষের ঘরবাড়ি রক্ষার সহজ সমাধান থাকা সত্ত্বেও কেন উচ্ছেদ করা হবে।