নিউজ ডেস্ক :: শিক্ষক মিলন কান্তি দাসের পা ধরে মাফ চাওয়ার বিষয়টিতে ছাত্রীদেরকে প্ররোচিত করার জন্য শিক্ষক সালমা আক্তার, রুনা লায়লা, শাহানাজ রহমান ও মো. ফেরদাউস দায়ী। তারা ছাত্রীদেরকে প্ররোচিত করে মাফ চাওয়ায় এবং ভিডিও করে একটি প্রায় মীমাংসিত বিষয় জনসম্মুখে এনে শান্ত পরিবেশকে উত্তপ্ত করেছেন।
বরখাস্ত হচ্ছেন ঝালকাঠির নলছিটি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মিলন কান্তি দাসসহ পাঁচজন শিক্ষক। স্থানীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও অন্যান্য আইনি দিক বিবেচনা করে এমপিও বাতিল ও বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর
নলছিটির উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. নজরুল ইসলাম গত ২১ জুলাই মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে ২৬ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন ও সংযুক্তি পাঠিয়ে দেন। শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম এর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়, মাউশি অধিদপ্তরে। তারা জানান, প্রথমে শোকজ। পরে বরখাস্ত ও এমপিও বাতিল হতে পারে মিলন কান্তিসহ অপরাপর অভিযুক্ত শিক্ষকদের
সম্প্রতি নলছিটি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মু. আনোয়ার আজিমের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত সম্পন্ন হয়।
তদন্ত কমিটি জানায়, গত ১৩ মে ক্লাস চলাকালীন নলছিটি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মিলন কান্তি দাস ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতজনিত বক্তব্য দেন বলে জানিয়েছেন ওই দিন উপস্থিত ১৯ জন ছাত্রী (২ জন হিন্দু ছাত্রীসহ)।
এছাড়া শিক্ষক মিলন কান্তি দাসের পা ধরে মাফ চাওয়ার বিষয়টিতে ছাত্রীদেরকে প্ররোচিত করার জন্য শিক্ষক সালমা আক্তার, রুনা লায়লা, শাহানাজ রহমান ও মো. ফেরদাউস দায়ী। তারা ছাত্রীদেরকে প্ররোচিত করে মাফ চাওয়ায় এবং ভিডিও করে একটি প্রায় মীমাংসিত বিষয় জনসম্মুখে এনে শান্ত পরিবেশকে উত্তপ্ত করেছেন।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, শিক্ষক মিলন কান্তি দাস শ্রেণিকক্ষে পাঠদানকালে মুসলিম এবং হিন্দু উভয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে কঠোরভাবে আঘাত হেনেছে। এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতো। তাতে দেশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতমূলক বক্তব্যের জন্য শিক্ষক মিলন কান্তি দাসের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক। অন্যথায় ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ধর্মীয় বিষয় নিয়ে গত ১৩ মে ক্লাস চলাকালীন নলছিটি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মিলন কান্তি দাস কটূক্তিকর বক্তব্য দেন। যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে। বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় গত ২১ মে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে মিলন কান্তি দাসকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মিলন কান্তি দাস জানান, আমি কোনো কটূক্তি করিনি। এটি ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব থেকে করা হয়ে থাকতে পারে।
নাম না প্রকাশের শর্তে শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, পায়ে ধরানো শারীরিক শাস্তি, আবার ধর্মীয় উসকানি ও কটূক্তি ফৌজদারি অপরাধ। সেই হিসেবে অভিযুক্ত শিক্ষকদের গ্রেফতার ও বরখাস্ত এবং এমপিও বাতিল করা হতে পারে। তবে, অভিযুক্তদের পক্ষে তদবির করে তদন্ত প্রতিবেদন হালকা করা হয়েছে। ইউএনও এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নাকের ডগায় বসে মিলন ও বিনি আমিনরা শিক্ষা বহিরর্ভুত কাজে বছরের পর বছর লিপ্ত থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি। ছাত্রীদেরকে মিলনের পায়ে ধরানোতে বাধ্য করা শিক্ষকদের পক্ষ নিয়েছে তদন্ত কমিটি। তাছাড়া নলছিটি ও বরিশালের কয়েকজন বিএনপি নেতা অভিযুক্তদের পক্ষে অধিদপ্তরের আইন শাখায় তদবির করেছেন। ফলে দুই সপ্তাহেও ফাইল নড়াচড়া নেই।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক জলিলুর রহমান আকন্দ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি ও বনি আমিনসহ স্কুলটির কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগর কুখ্যাত নেতা আমির হোসেন আমুর দালালি করার অভিযোগ স্থানীয়দের। মিলন, বনি আমিনসহ প্রতিষ্ঠানটির কয়েজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে পাঠদান বহির্ভুত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকলেও প্রধান শিক্ষক কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো এদের সাফাই গেয়ে চলছেন। ফলে একদা সুনামধন্য এই নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ডুবেছে। কেউ ভর্তি হতে চায় না।
বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি তছলিম উদ্দিন চৌধুরীসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির অন্যান্য সদস্যরা মিলে প্রতিষ্ঠানটিকে রাজনৈতিক আড্ডাবাজির ভেন্যু করার অভিযোগ অভিভাবকদের। গত বছরের পাঁচ আগস্টের পর তাদের অনেকেই পলাতক। তবে, বিনি আমিন ও মিলন কান্তিরা বোল পাল্টে নতুন পরিচয়ে শিক্ষা বহির্ভুত কাজে লিপ্ত। আমুর দালালি করে মিলন ও বিনি আমিন একাধিকবার শ্রেষ্ঠ পুরস্কার বাগিয়ে নিয়েছেন। সেসব পুরস্কার বাতিল করারও দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা অফিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা অন্য কোনো পেশায় যুক্ত হতে পারেন না। কিন্তু আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে চাইলে আমাদের বিরুদ্ধে ফেসবুক, ইউটিউব ও ভুইফোঁড় পত্রিকায় লিখে দেওয়া হয়। বহুবার বানোয়াট প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে নলছিটির শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। যার নেপথ্যে বিনি আমিন ও মিলন কান্তি গং।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।