নিজস্ব প্রতিবেদক :: ব্ল্যাকমেইল ও নির্যাতনের অভিযোগে ফের আলোচনায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলিনা
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা দপ্তরের উপ পরিচালক সেলিনা বেগম আবারও আলোচনায় এসেছেন। একাধিক বিয়ে, সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে অস্বাভাবিক সম্পর্ক, ব্ল্যাকমেইল ও শারীরিক নির্যাতনের মতো অভিযোগে তিনি আগেও সমালোচনায় ছিলেন। সম্প্রতি লালমনিরহাট জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল কর্মকর্তা হাসানুর রশীদকে অফিসকক্ষে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।
পুরুষদের ব্লাকমেইলিং করাই সেলিনার কাজ:
কখন যৌন হয়রানী,কখনো ধুমপান, কখনো বিয়ে বা কখনো সমকামিতা বা মামলার আসামী হিসেবে আলোচিত সে।অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে সেলিনার অপরাধ জগতের সব কর্মকান্ড।সুন্দরী তাই পুরুষদের প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে নেন খুব কাছে। পরে মোটা অংকের দেনমোহরে করেন বিয়ে।হাতিয়ে নেন নগদ টাকা পয়সাসহ মুল্যবান সম্পদ। হাতানোর পরে দেনমোহরের টাকা আদায় করে ডিভোর্স দেন স্বামীকে।প্রতারনা করাই সেলিনার কাজ।অসংখ্য পুরুষকে ব্লাকমেইলিং করে করেছে সর্বঃশ্বান্ত।
হাসানুর রশীদ অভিযোগ করেন, বরিশালে কর্মরত থাকাকালীন অফিসার্স ক্লাবে ব্যাডমিন্টন খেলতে গিয়ে সেলিনার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। প্রথমে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইলে সেলিনা আত্মহত্যার হুমকি দেন এবং পরে দাবি করেন তাঁর গর্ভে সন্তান আছে। এভাবে ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে অবশেষে তিনি ২০২৫ সালের ১ মার্চ বিয়ে করতে বাধ্য হন। কিন্তু বিয়ের পর শুরু হয় আরেক দফা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। হাসানুর জানান, তাঁকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়, আর্থিক চাপ দেওয়া হয় এবং প্রতিনিয়ত জানাতে বাধ্য করা হতো কার সঙ্গে কোথায় কথা বলছেন। ১৯ জুন রুপাতলীর বাসায় এবং ৩ জুলাই লালমনিরহাট অফিসকক্ষে প্রকাশ্য মারধরের শিকার হন তিনি। অবশেষে ৩১ জুলাই ডিভোর্স দেওয়ার পর ১ আগস্ট তাঁর বাসায় গিয়ে হামলা চালানো হয়। চিৎকার শুনে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করেন। ৬ আগস্ট তিনি লালমনিরহাট সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে তিনি ভীতিকর পরিস্থিতিতে জীবনযাপন করছেন। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
সেলিনার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ,ব্ল্যাকমেইলের ফাঁদ বরিশাল অফিসার্স ক্লাবে ব্যাডমিন্টন খেলা:
এটি সেলিনার বিরুদ্ধে একমাত্র অভিযোগ নয়। ৩৩তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজে পরিচয়ের পর তাঁকে জোরপূর্বক সম্পর্কে জড়িয়ে ভিডিও ধারণ ও ব্ল্যাকমেইলের শিকার হতে হয়েছে। প্রায় ১০ মাস ধরে নিয়মিত অর্থ সহায়তাও দিতে বাধ্য হয়েছেন।জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন, সেলিনা একজন সুন্দরী ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়ের কারনে পুরুষরা প্রথমে গলে যায়।পুরুষদের সরলতার সুযোগ নিয়ে পরে সেলিনা সেসব পুরুষদের ব্লাকমেইলিং করে অর্থ হাতানোসহ সম্মান নস্ট করে। তিনি জানিয়েছেন, সেলিনার ডোপ টেষ্ট করলেই প্রমান হবে সে একজন মাদকাসক্ত ।তার বাসার ফ্রিজে সব সময় দেশী ও বিদেশী মদ থাকে। রয়েছে নেশা পান করার অভিযোগও। একই ব্যাচের আরেকজন শিক্ষা ক্যাডার হাবিব বলেন, সেলিনার সাথে পূর্ব পরিচয় ছিল। পরে বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু বিয়ের পর সেলিনার বেপরোয়া আচরণ স্থায়ী হয়নি। পরে ডিভোর্স হয় এবং দীর্ঘ আইনি লড়াই করতে হয়েছে।
সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ এসেছে ৩১তম বিসিএসের পুলিশ কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান ফেরদৌসের কাছ থেকে। তিনি জানান, অফিসার্স ক্লাবে ব্যাডমিন্টন খেলার সময় সেলিনার সঙ্গে পরিচয় হয়। প্রথমে নিজেকে বিবাহিত পরিচয় দিয়ে স্বামী হিসেবে জাহাঙ্গীর আলম সম্রাটের নাম উল্লেখ করতেন সেলিনা। পরে তিনি ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন এবং কিছু ছবি তুলেন। হঠাৎ সেলিনা জানান, স্বামী তাঁকে ডিভোর্স দিয়েছে এবং ছবি দেখিয়ে হুমকি দেন যে স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠাবেন। এতে সম্মানহানি ও চাকরিজীবন বিপন্ন হওয়ার ভয়ে তিনি মানসিক চাপে পড়েন। বাধ্য হয়ে স্থান পরিবর্তন করতে হয়। পরে মামলা দিয়ে হয়রানি শুরু করে। তিনি বলেন, “আমি একা নই, অনেকেই একইভাবে প্রতারিত হয়েছেন।
সেলিনা প্রথমে বিয়ে করেন মির্জাগঞ্জ উপজেলার হাবিবুর রহমানকে। এক বছর যেতে না যেতেই সেলিনা এক এক করে তার স্বামী হাবিবুর রহমান ও তার পরিবারের লোকজনদের আসামী করে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১২ সালে হাবিবুর রহমানের সাথে বিয়ে ভেঙ্গে যায়। স্ত্রী কর্তৃক মামলার আসামী হওয়ায় হাবিবুর রহমান বিসিএসে চুড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়েও যোগদান করতে পারেননি। হাবিবুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, আল্লাহ আমাকে সেলিনার খপ্পর থেকে বাচিঁয়েছেন এটাই শুকরিয়া। আমি একটি আজাব থেকে মুক্তি পেয়েছি।
এর আগেও সেলিনা বেগমের বিরুদ্ধে নানা বিতর্ক রয়েছে। ২০১৬ সালের ৩ মার্চ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে জোরপূর্বক হয়রানির অভিযোগ ওঠে। পরে তিনি একটি মুচলেকায় স্বীকার করেন যে ১৫ মার্চ রাতে শিক্ষার্থীকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন। সেখানে তিনি অনুতপ্ত উল্লেখ করেন এবং ভবিষ্যতে আর কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তবে ঘটনার পরও তাঁর আচরণে কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
ময়না’ নামে পরিচিত সেলিনা বেগমকে ঘিরে তুমুল আলোচনা :
সেলিনা বেগমের বাড়ি পটুয়াখালীর সুবিদখালীর পূর্ব সুবিদখালী গ্রামে। স্থানীয়ভাবে তিনি ‘ময়না’ নামে পরিচিত। এলাকাবাসীর দাবি, তাঁর প্রভাবশালী চলাফেরার কারণে প্রকাশ্যে কেউ তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পান না। আগের সরকারের সময় তিনি একাধিক উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও শাসক দলের নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন।
লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ নুরনবী বলেন, লালমনিরহাট জেলা কালচার কর্মকর্তার দায়ের করা অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে। অন্যদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ তৌফিক আলম বলেন, লিখিত অভিযোগ হাতে না পেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকেই সেলিনা বেগম সম্পর্কে নানা তথ্য শোনা গেছে।
বেপরোয়া চালচলন, একাধিক বিয়ে, সরকারি কর্মকর্তাদের হয়রানি, শারীরিক নির্যাতন, ব্ল্যাকমেইল ও প্রতারণার মতো অভিযোগে অভিযুক্ত সেলিনা বেগমকে ঘিরে তুমুল আলোচনা চলছে। সচেতন মহলের দাবি, এসব অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত করে সত্য উদঘাটন ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ একইভাবে প্রতারণা ও পুরুষ নির্যাতনের শিকার না হন।
সেলিনার কারনে অসংখ্য পুরুষের সুন্দর স্বপ্নের সংসার ও জীবন নষ্ট:
সেলিনা বেগম।উপ পরিচালক, শারীরিক শিক্ষা দপ্তর,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। সব সময়েই থাকেন আলোচনায়। কখনো যৌন হয়রানীর আবেদন করে আবার মদ পান করে। আবার প্রকাশ্যে ধুমপান করে। একেকটি সংসার তছনছ করে আবার নতুনের পথে হাটেন। একাধিক পুরুষ তার ব্লাকমেইলিংয়ের শিকারও হয়েছে। উচ্চাভিলাসী এই কর্মকর্তার কারনে অনেক পুরুষ বেচেঁ গেছে আত্মহত্যার পথ থেকে। সুন্দরী আর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্মরতকে পুঁজি করে পুরুষদের প্রথমে প্রেমের ফাঁদ পরে বিভিন্ন ভাবে ব্লাকমেইলিং করে বিয়ে করে। চতুর এই সেলিনার কারনে অসংখ্য পুরুষের সুন্দর স্বপ্নের সংসার ও জীবন নষ্ট হয়ে গেছে।
সেলিনা বেগম ২০১৮ সালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক রেজিস্ট্রার মনিরুলের বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ তুলে আলোচনায় আসেন। অভিযোগ করেছিলেন যে মনিরুল যৌন হয়রানিসহ তাকে তার সঙ্গে ঢাকা যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।সেলিনা তখন লিখিত অভিযোগও দিয়েছিল ভিসির নিকট। মনিরুল তখন বিষয়টিকে মিথ্যা ও ব্লাকমেইলিংয়ের কথা বলেছিলেন। মিথ্যাকে সত্যে রুপান্তর করতে না পেরে পিছু হটেন সেলিনা বেগম।
২০১২ সালে স্বামী বিহীন হওয়ার পরে ফেসবুক ও মোবাইলের মাধ্যমে একেকজন পুরুষকে প্রথমে প্রেমিক তারপরে স্বামী হিসেবে দাবী করে। প্রশাসনসহ সরকারি – বেসরকারি উচ্চ পদাস্থ কর্মকর্তারাদের টার্গেট তার। এভাবে একাধিক পুরুষকে ঘায়েল করেছেন সেলিনা বেগম। কেউ কেউ মান ইজ্জত নিয়ে কেটে পড়লেও অনেকেই হারিয়েছেন সম্মান। সেলিনার অনৈতিক ও অপকর্মের তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে এ প্রতিবেদকের হাতে । প্রতারিত ও ব্লাকমেইলিংয়ের শিকার ভুক্তভুগীরা সেলিনার সাথে পুরুষদের সম্পর্ক গড়ার থেকে সাবধান করেছেন।
selina begum 4
সেলিনার বিরুদ্ধে মারধর,শ্লীলতাহানি ও চুরিসহ বিভিন্ন অভিযোগ:
সেলিনার বিরুদ্ধে মারধর,শ্লীলতাহানি ও চুরিসহ বিভিন্ন অভিযোগে মির্জাগঞ্জের সুবিদখালীর কমলচন্দ্র হাওলাদার বাদী হয়ে মির্জাগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছিল। যার মামলা নম্বর -১/১৭।
সেলিনা বেগমের বিরুদ্ধে হুমকি প্রদর্শন এবং মানহানীর বিষয় বিচার চেয়ে ভিসি বরাবরে আবেদন করেন মারুফুর রহমান চৌধুরী নামের একজন। ৩০ নভেম্বর ২০২২ তারিখ দেয়া লিখিত এই অভিযোগের শে অংশে তিনি উল্লেখ করেন,আমি সেলিনার কর্মকান্ডে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে লাঞ্চিত এবং অপমানিত । সেলিনা বেগমের মত এরকম ব্লাকমেইলকারী দুশ্চরিত্রবান ও নেশাগ্রস্থ ব্যক্তিত্ব যদি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থাকে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামহানির পাশাপাশি মেধাবী শিক্ষার্থীরাও অসম্মানিতবোধ করবে।
selina begum 6
সেলিনা বেগম অফিস করেন নিজের ইচ্ছামতো:
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শারীরিক শিক্ষা দপ্তরের উপ পরিচালক সেলিনা বেগম অফিস করেন নিজের ইচ্ছামতো। মনে চাইলে অফিস করেন, না চাইলে করেন না। মাসের পর মাস এভাবেই চলছেন তিনি।বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা দপ্তরে গিয়ে খালি পড়ে থাকতে দেখা যায় সেলিনা বেগমের চেয়ারটি। পরে আবার গিয়েও তার চেয়ারটি ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা যায়।দপ্তর সূত্রে জানা যায়, সেলিনা বেগম অফিসই করেন না। কালেভদ্রে অফিসে আসলে চলেন নিজের খেয়াল খুশি মতো।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বছরের পর বছর এভাবেই অফিস না করেই পার পেয়ে যাচ্ছেন উপ পরিচালক সেলিনা বেগম। অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের শক্তিশালী একটি কোরামের সঙ্গে সেলিনার ভালো সম্পর্ক থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলেন না। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই গ্রহণ করেননি।
এ ব্যাপারে সেলিনা বেগমের বক্তব্য নেয়ার জন্য কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি।