নিজস্ব প্রতিবেদক :: চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলা চেয়ারম্যানের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি গাড়ি ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্ত্রীর বিরুদ্ধে। মূলত ইউএনওর ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ওই গাড়িটি দখলে নিয়েছেন তার স্ত্রী। শুধু তাই নয়, গাড়ির ড্রাইভার ও জ্বালানি খরচও নিচ্ছেন উপজেলা পরিষদ থেকে। সরকারি টাকায় নিয়মিত সেই গাড়িটি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন লঘুদণ্ড পাওয়া নাচোল ইউএনও কামাল হোসেনের স্ত্রী।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় নাচোল ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গেটের সামনে এমন দৃশ্য ধরা পড়ে স্থানীয় এক গণমাধ্যমকর্মীর ক্যামেরায়। ওই গাড়ি থেকে ইউএনওর স্ত্রীকে নেমে স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা যায়। প্রায় ২০ মিনিট ধরে গাড়িটি ওই স্কুলের গেটে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ইউএনও কামাল হোসেন সরকারি কাজে তার বরাদ্দকৃত গাড়ি ব্যবহার করলেও উপজেলা চেয়ারম্যানের নামে বরাদ্দকৃত সরকারি গাড়িটি ব্যবহার করছেন কামাল হোসেনের স্ত্রী।
Advertisement
নাচোল ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লাভলী ইয়াসমিন বলেন, ইউএনওর স্ত্রী-সন্তান উপজেলা চেয়ারম্যানের নামে বরাদ্দকৃত সরকারি গাড়িতে চড়ে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া আসা করেন। আজকেও তিনি তার ছেলে-মেয়েকে স্কুলে নিয়ে এসেছেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে ১৯ আগস্ট সব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়। চেয়ারম্যানদের অপসারণের পর উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পান ইউএনওরা। তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলা পরিষদের প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন ইউএনও।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ পরিদর্শনে গেলে সঙ্গে তার স্ত্রী-সন্তান থাকেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আব্দুস সামাদ বলেন, ইউএনওর পরিবারের নিরাপত্তার জন্য গাড়িটি ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া গাড়িটি সচল রাখার জন্য ব্যবহার করতেই পারেন।
উল্লেখ্য, প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ৩৫তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পান নাচোল ইউএনও মো. কামাল হোসেন। মুক্তিযোদ্ধা চাচাকে বাবা পরিচয়ে প্রতারণা-জালিয়াতি করে কোটা সুবিধা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও চাকরি নেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলাটি বর্তমানে চলমান। এছাড়া নিজের জেলা কুষ্টিয়ায় জমি কেনার ক্ষেত্রে সরকারের পূর্বানুমোদন না নিয়ে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯ লঙ্ঘনের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ৩ (খ) অনুযায়ী অসদাচরণের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা অনুযায়ী কামাল হোসেনকে দুই বছরের জন্য বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা নামের লঘুদণ্ড দেওয়া হয়।