নিজস্ব প্রতিবেদক :: বরিশাল-৫ আসন : বেড়েই চলছে বিএনপির প্রার্থী, জামায়াত-ইসলামি আন্দোলনের প্রার্থী চূড়ান্ত।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ একক প্রার্থী ঘোষণা দিলেও বরিশাল সদর আসনে বিএনপিতে রয়েছে ডজন খানেক প্রার্থী। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীর সংখ্যাও তত বাড়ছে আসনটিতে। তার উপরে হঠাৎ এসে সংবাদ সম্মেলন করে মনোনয়ন প্রত্যাশার ঘোষণা দিলেন বেগম খালেদা জিয়ার আরেক উপদেষ্টা এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তবে মনোনয়ন প্রশ্মে তৃণমূলের কেউ পুরনো মুখ আবার কেউ চান নতুন মুখ। অন্য দিকে “হয় এম পি না হয় পদ” হাইকমান্ডের এই সিদ্ধান্তে মনোনয়নের হিসাব বদলে যাওয়ার আশঙ্কাও করছেন অনেকে। জানাগেছে, বরিশাল সদর আসনে বিএনপির প্রার্থীর তালিকায় রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন এর উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান সরোয়ার, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য আবু নাসের মোঃ রহমাতুল্লাহ, এবায়দুল হক চান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. বিলকিস জাহান শিরিন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহীন, মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক, সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক আফরোজা খানম নাসরিন, সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার, সদর উপজেলা বিএনপির আহাবয়ক এ্যাড. এনায়েত হোসেন বাচ্চু। কিন্তু হঠাৎ করে সম্প্রতি সংবাদ সম্লেলন করে নিজের প্রার্থীতার ঘোষনা দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। ফলে একই আসনে বেগম জিয়ার দুই উপদেষ্টার মনোনয়ন লড়াই বরিশালের রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যদিও নতুন হিসেবে মাঠ গুছিয়ে উঠতে কতটুকু পারবে আলাল তা নিয়েও রয়েছে গুঞ্জন। আসন টিতে বেগম জিয়ার দুই উপদেষ্টার মনোনয়ন লড়াই কোথায় গিয়ে ঠেকবে তাও দেখার বিষয় বলছে অনেকে।
এডভোকেট মজিবুর রহমান সরোয়ার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বলেন, প্রার্থী অনেক থাকতেই পারে। এখানে শুধু এমপি নয়, মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান সহ অনেকগুলো পদ রয়েছে। তাই অনেকেই এখন থেকেই ঘোষনা দিচ্ছে। একটা না একটা তো পাবে।
আবু নাসের মোঃ রহমতুল্লাহ, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য বলেন, আমি বিগত ফ্যাস্টিষ্ট সরকারের নির্যাতিত প্রতিটি কর্মীর পাশে দাড়িয়েছি। এখানে নেতা-কর্মীরা খুবই অবহেলিত। বিপদের তাদের পাশে কেউ থাকে না। দলের প্রতিটি প্রগ্রামে আমার অংশগ্রহন আছে। সাধারন মানুষের পাশ থাকার নেশা থেকে আমি তাদের নিয়ে সভা করেছি। তাদের চাহিদা সাধ্যমত পূরন করার চেষ্টা করেছি। অসহায় ব্যাক্তিদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। দল যদি আমাকে মনোনায়ন দেয় তবে আমি আরো বেটার কিছু দেয়ার চেষ্টা করব।
এবায়দুল হক চান, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য বলেন, আমি জাগো দল থেকে বিএনপি করি। আমি জিয়া উর রহমানের গায়েবি জানাযা পরিয়েছি। তখন কেউ সাহস করত না জিয়ার নাম নেয়ার। আমার বাড়ি ঘর লুট পাট হয়েছে ৯৬ সালে। ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর হয়েছে। আমাকে দল কখনো কিছু দেয় নি। দুই বার মনোনায়ন দিয়েও পরে সরোয়ারকে দিয়েছে। আমি তাদের জন্য কাজ করেছি। দল যদি এবার আমাকে মূল্যায়ন করে আমি দলের হয়ে নিবেদিত কাজ করব।
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বলেন, ঘরের ছেলে ঘরে ফিরতে চাই। সবাই এক সময় নিজ এলাকায় ফিরে। আমি রাজনীতিতে নতুন নয়। বরিশাল বাসী আমাকে গ্রহন করলে আমি তাদের খেদমত করতে চাই।
সাবেক কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বিলিকিস জাহান শিরিন বলেন, আমি দলের সকল কর্মসূচি গুলোতে অংশগ্রহন করেছি। আমাকে একটি মিথ্যা নিউজের কারনে অনেক বড় শাস্তি দেয়া হয়েছে। আমার বাপ দাদার জমি আমি কিভাবে দখল করি এটা আমার বোধে আসে না। দল আমার অতীত পর্যালোচনা করে এক সময় আমার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়ে এই আসনে আমাকে মনোনায়ন দেবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে আমলে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করতে সভা সমাবেশ হরতাল করতে গিয়ে মার খেয়েছি। জেল খেটেছি। আশাকারি সুদিন আসবে ইনশাআল্লাহ।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহীন বলেন, আন্দোলন সংগ্রামে বিগত সময়ে কোনদিন ভয় করিনি। রাজপথে ছিলাম। কোন বিতর্কিত কাজে যায় নি। দলের জন্য নিবেদিত ছিলাম। জেল জুলুম রাজনীতি করতে গেলে থাকবেই। কিন্তু নীতি আদর্শ একটা বিষয়। কাজ করার সক্ষমতা থাকতে হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে উদ্যমি হতে হবে। আমাকে দল যদি মনে করে আমি যোগ্য তবে অবশ্যই আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে আমি মনেকরি।
মহানগর বিএনপির আহবায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, গেল বছরগুলোতে কেন্দ্রের নির্দেশনা মত সকল কর্মসূচির নেতৃত্ব দিয়ে সফল করেছি। এখানের অনেক নেতা তখন ঘর থেকে বের হয় নি। আওয়ামীলীগ সব শেষ আমাকে কুপিয়ে আহত করে। শেষ বয়সে এখন আমাদেরও কিছু চাওয়ার থাকে। দল যদি যোগ্য মনে করে এবং মনোনায়ন দেয় তবে আমি চেষ্টা করব এই আসন বিএনপিকে উপহার দেয়ার।
সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আফরোজা খানম নাসরিন বলেন, আমার সকল কর্মকান্ড মিডিয়া অবগত আছে। তারা স্বাক্ষী আমাকে কতবার পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। সবাই যখন পালিয়ে ছিল আমি তখন রাজপথে ছিলাম। আমার কর্মীরা আমার সাথে রাজপথে ছিল। আমি কোন চাদাবাজি অন্যায় অত্যাচারের সাথে সম্পৃক্ত নেই। ক্লীন ইমেজের রাজনীতি করেছি। আশা করি দল মূল্যায়ন করবে।
মহানগর সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদার জানান, আপনারা দেখেছেন বিগত প্রগ্রামগুলো সব আমাদের এই কমিটি করেছে। সেখানে অনেক প্রতিবন্ধকতার পোহায়ে জেল জুলুম মামলা হামলার শিকার হতে হয়েছে। প্রান চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। চিকিৎসা পর্যন্ত করাতে হয়েছে পালিয়ে থেকে। দল অবশ্যই তার মূল্যায়ন করবে।
সদর উপজেলার আহবায়ক এনায়েত হোসেন বাচ্চু বলেন, ছাত্রদল থেকে তিনি বিএনপির রাজনীতি সম্পৃক্ত। সদর উপজেলার মানুষের সাথে তার আত্মার সম্পর্ক। সদর উপজেলায় তিনি নির্বাচন করেছিলেন। ১৪ সালে স্বৈরাচার সরকার ভোট কারচুপি করে তাকে বিজয়ী করে নি। ডাক্তার ইউনূসের মামলার আইনজীবী ছিলেন। দলের প্রতিটি কর্মসূচিতে তার অংশগ্রহণ ছিল সরব। দলের নেতাকর্মীদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দিয়েছেন তিনি। বিগত ৭ ১৭ বছরে নেতা কর্মীদের খোঁজ খবর রাখা বিপদে পাশে দাঁড়ানো ছিল তার দায়িত্ব। বেগম জিয়ার মামলা পরিচালনা করেছেন দাবি করে তিনি বলেন, দল যদি তাকে মনোনয়ন দেয় তবে তিনি বিজয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী।
তবে তৃণমূলের কর্মীরা বলছে,গন অভ্যুথ্থানের আগ থেকে বিপদে পাশে থাকা কর্মীবান্ধব নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হোক। উরে এসে জুড়ে বসা কাউকে দেখতে চায়না কর্মীরা। সাধারন মানুষের সাথে কতটুকু সম্পৃক্ততা আছে মানুষ এখন তাই মূল্যায়ন করে।
এ দিকে জমায়াত ইসলামের চূড়ান্ত প্রার্থী হলেন সহঃ সেক্রেটারি জেনারে অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসেন হেলাল এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি ফয়জুল করিম। তারা বলেন, একবার তাদের ভোট দিয়ে পরীক্ষা করার সুযোগ দেয়া হোক। দূর্নীতি মুক্ত একটি দেশ তারা উপহার দিতে চায়।