নিজস্ব প্রতিবেদক :: চেকের মাধ্যমে কোটি টাকা আগাম ছাড় : সরকারি বরাদ্দ গায়েবের নেপথ্যে রফিকুল ইসলাম।
আওয়ামী লীগ শাসনামলের মতই অনিয়ম দুর্নীতি পূর্বক এখনও অফিসিয়াল কার্যক্রম পালন করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে বরিশাল ডিভিশনাল কন্ট্রোলার অব একাউন্টস এর কার্যালয়ের নিরীক্ষা ও হিসাবরক্ষণ বিল শাখার কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। বরিশাল-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ আশীর্বাদপুষ্ট আগৈলঝাড়া রত্নপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. কবির হাওলাদারের ভাই হলেন এই রফিকুল ইসলাম। ভাইয়ের ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে রফিকুল ইসলাম অনিয়ম দুর্নীতিতে বেপরোয়া হয়ে উঠে। এমনকি আওয়ামী লীগ শাসনামলে সিংহভাগ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের সামনে মাথা নীচু করে কথা বলতেন। ঘটনার সুষ্ঠুতদন্তে হলে ফেঁসে যেতে পারে হিসাবরক্ষণ এ কর্মকর্তা।
শুরুতে অনিয়ম দুর্নীতির কথা অস্বীকার করে হিসাবরক্ষণ রফিকুল ইসলাম বলেন, রত্নপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হলেন তার চাচতো ভাই। তবে তিনি ভাইয়ের ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করেননি। নিয়মানুযায়ী অফিসিয়াল দায়িত্ব পালন করে আসছেন বলে জানান।
অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করে ডিভিশনাল কন্ট্রোলার অব একাউন্টস্ সিপিএফএ এ কে এম জুবায়ের কাছে সাক্ষাৎকার চাইলে তিনি এক কর্মকর্তাকে তথ্য প্রদানের নির্দেশ দেন।
২০২৩-২৪ অর্থ বছরে টি আর কাবিটা খাতে মোট ৮ কোটি ১৪ লাখ ৯৪ হাজার ১৮২ টাকা অগ্রিম গ্রহণ করা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অগ্রিম সমন্বয় না করায় হিসাব মহানিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের পরিদর্শন টিম কর্তৃক আপত্তি উত্থাপন করা হয়। অগ্রিম বিল সমন্বয়পূর্বক যথাসময়ে প্রমাণ সহ সিজিএ কার্যালয়ে প্রেরণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এমতাবস্থায় গত ২১-০৮-২০২৫ তারিখে বরিশাল সদর উপজেলা বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কে ৩ কর্ম দিবসের মধ্যে অগ্রিম গৃহীত ওই টাকার সমন্বয় বিল দাখিলের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করতে বলা হলেও অফিয়ালভাবে এখন পর্যন্ত কোন রেসপন্স পাননি বলে জানান।
যার অনুলিপি প্রেরণ করা হয়- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর মহাপরিচালক বরাবর সহ বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, বরিশাল জেলা প্রশাসক, বরিশাল জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকতা এবং বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্মকর্তা বরাবর।
ঘটনাচক্রে উঠে আসে, আওয়ামী লীগ শাসনামলে অদৃশ্য ক্ষমতা বলে বরিশাল নিরীক্ষা ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম গত বছরের ২৩ জুন মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ৩ টি চেকের মাধ্যমে বিল ছাড় করেন। পর্যায়ক্রমে (sa- 9542420) নম্বর চেকে ৭১ লাখ ৩০ হাজার ৩৩ টাকা, (sa-9542375) ৩৬ লাখ টাকা এবং (sa- 9542376) নম্বর চেকে ৪৬ লাখ টাকা ছাড় করেন। অফিসিয়াল নিয়মানুযায়ী এই টাকা আগাম দেয়া যাবে না। কিন্তু হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলামের যোগসাজসে এই টাকাসহ অন্যান্য টাকাও ভাগিয়ে নেয় সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান। অথচ গ্রামীণ দরিদ্র ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান তৈরির উদ্দেশ্যে উপরোক্তা টাকা ওই অর্থ বছরে বরাদ্দ হয়েছিল।
আওয়ামী লীগ শাসনামলে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম সাবেক সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ ও তার পুত্র সাবেক বরিশাল সিটি মেয়র মোঃ সাদেক আব্দুল্লার প্রভাব খাটিয়ে আ.লীগ আমলে বিভিন্ন সরকারি অফিসের কর্মচারীদের হয়রানী করে লাখ লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহণ করতেন বলে অভিযোগ আছে । তাকে কেউ কিছু বললে- শেখ পরিবারের লোকজনদের পরিচয় দিয়ে হুমকি দিতেন।
পূর্বের ন্যায় এখনও অনিয়ম দুর্নীতিতে অফিসিয়াল কার্যক্রম করছেন হিসাবরক্ষণ রফিকুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে মাস্টার ডাটা এন্ট্রি/এপ্রুভ, সংশোধন, যোগদান ও রিলিজকরণ, কর্মকর্তা কর্মচারীর ব্যাংক হিসাব, মোবাইল নং ও ই-মেইলের ঠিকানা পরিবর্তন এর বিষয় এন্ট্রি/সাবমিট ও ফরওয়ার্ডিং, এরিয়ার বিল ও টিএ/ডিএ বিল সাবমিট, ব্যাংক স্টক টেকিং এন্ট্রিকরণ ও এপ্রুভকরণ জিপিএফ স্লিপ, সাব লেজার ও টিআইএন সার্টিফিকেট উত্তোলনপূর্বক অর্থ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কয়েকজন ভুক্তভোগী মৌখিক অভিযোগ করলেও তাদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে।
সুনির্দিষ্ট করে অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরলে হিসাবরক্ষণ রফিকুল ইসলাম বলেন, অগ্রিম বিল নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে সমন্বয় করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যার অনুলিপিও প্রেরণ করা হয়েছে। এখন অফিসিয়াল নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।