আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ইসরায়েল ও হামাস চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) থেকে শুরু এ যুদ্ধবিরতির ফলে ফিলিস্তিনিরা গাজার উত্তরে ফিরতে শুরু করেছে। এই চুক্তির ফলে দুই বছর ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসানের আশা দেখা দিয়েছে। মাটির টানে নিজ ঘরে ফেরার আনন্দ উঁকি দিচ্ছে হাজার হাজার ফিলিস্তিনির মনে। খবর, আল জাজিরা’র।
মূলত, টানা দুই বছর ধরে ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলায় শোকে কাতর হয়ে পড়া গাজাবাসী যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর বাড়ি ফিরতে পেরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছে। ইসরায়েলি নৃশংসতার মুখে একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাইকে। এর মধ্যে গত আগস্টে গাজা নগরীতে ইসরায়েলের স্থল অভিযান শুরুর পর জন্মভূমি ছেড়েছিলেন ৭ লাখ ফিলিস্তিনি।
যুদ্ধবিরতির চুক্তিটি সম্পন্ন হয়েছে মিশরের পর্যটন শহর শারম আল-শেখে। এটি বাস্তবায়নে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, মিশর ও তুরস্ক। চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলের হাতে থাকা বাকি সকল জিম্মি এবং প্রায় ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেয়া হবে। হামাসকে সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার মধ্যে জিম্মিদের মুক্তি দিতে হবে। তবে ঠিক কখন বা কোথায় এই মুক্তি ঘটবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
গাজার দক্ষিণে খান ইউনিসে ৩২ বছর বয়সী আমির আবু ইয়াদে বলেন, ‘এই অবস্থার জন্য (ঘরে ফিরতে পারা) আল্লাহর শোকর করি, যদিও আমরা ক্ষত আর বেদনায় পরিপূর্ণ মন নিয়ে আমাদের এলাকায় ফিরে যাচ্ছি।’
সংঘাত শুরুর দিকেই বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন ৫৩ বছর বয়সী আরিজ আবু সাদেহ। যুদ্ধবিরতি হওয়ায় অবশেষে নিজের বাড়ির পথে চলতে শুরু করেন তিনি। বলেন, ‘আমি এই যুদ্ধবিরতি আর শান্তির জন্য খুশি, যদিও আমি আমার এক ছেলে ও এক মেয়েকে হারিয়েছি। তাদের জন্য আমি গভীরভাবে শোকাহত। তবুও, যুদ্ধবিরতির মধ্যেও একটা আনন্দ আছে— আমরা ঘরে ফিরছি।’
৩৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ মরতাজার ভাষ্য, তিনি দোয়া করছেন যেন গাজা সিটিতে নিজের বাড়িটি অক্ষত অবস্থায় পান। বলেন, ‘আমরা শুধু চাই এই যুদ্ধ চিরতরে শেষ হোক, যেন আমাদের আর কখনও পালিয়ে যেতে না হয়।’
তবে আনুষ্ঠানিকভাবে সমস্ত ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের ঘোষণা এবং কর্তৃপক্ষের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত গাজা সিটির সীমান্তবর্তী এলাকায় কাউকে না যেতে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে এক বিবৃতিতে। ভবিষ্যতের দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি নিয়ে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের আলোচনা এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভূমিকাসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনও অমীমাংসিত রয়েছে।
ট্রাম্প বলেছেন, এই যুদ্ধবিরতি ইসরায়েলের জন্যই শুধু নয়, আরব-মুসলিম সম্প্রদায়-বিশ্ববাসীর জন্য এক অনন্য মাইলফলক।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। এতে ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হয়। জিম্মি করা হয় ২৫১ জনকে। তাদের মধ্যে ৪৭ জন এখনও জিম্মি। এর মধ্যে ২৫ জন আর বেঁচে নেই বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। অপরদিকে, গাজায় টানা বর্বর গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েল। হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছরে ইসরায়েলের হামলায় গাজায় অন্তত ৬৭ হাজার ১৭৩ জন নিহত হয়, এর মধ্যে ২০ হাজারেও বেশি শিশু।