স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরিশাল নগরীর কালীবাড়ি রোডের মমতা স্পেশালাইজড হসপিটালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, অযথা বিলম্ব, অতিরিক্ত টেস্ট ও ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, গত ৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় ডা. মোহাম্মদ জামিল হোসেন এক রোগীর (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) আঙুলের নখ অপসারণের (nail avulsion) জন্য রাত ১০টার সময় নির্ধারণ করেন। নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত থাকলেও অপারেশন না করে জানানো হয়, ডাক্তার অন্য হাসপাতালে গিয়েছেন। সেখান থেকে বাসায় গেছেন। পরদিন সকাল ১০টায় আসতে হবে।
পরদিন সকালেও দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পর রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। সেখানে এক ঘণ্টারও বেশি সময় রাখা হয় এবং রোগীর স্বজনরা অপারেশন থিয়েটারে সামনের রুমে ঢুকলে ওটি স্টাফরা ধমক দিয়ে বের করে দেন। স্বজনদের অভিযোগ- “থিয়েটারের স্টাফদের আচরণ ছিল রূঢ় ও অসম্মানজনক।”
অপারেশন শেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমে ৭ হাজার টাকা দাবি করে, পরে অন্য হাসপাতালের স্টাফ পরিচয় জানালে ফি কমিয়ে ৩৫০০ টাকা নেয়া হয়। নার্সরাও আলাদা ফি চান বলে অভিযোগ। এতে ফি অনিয়মের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, অপারেশনের আগে তাদের CBC, RBS, ECG ও HBsAg এই চারটি টেস্ট করতে বলা হয়, যদিও এটি ছোট সার্জারি হওয়ায় এসব টেস্টের প্রয়োজন নেই।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, নখ অপসারণ একটি মাইনর সার্জারি, যা ১০-১৫ মিনিটে সম্পন্ন হয়। সাধারণত এসব অপারেশনে একাধিক টেস্টের প্রয়োজন হয় না। তারা মনে করেন, “অতিরিক্ত টেস্ট রোগীর খরচ বাড়ানোর কৌশল হতে পারে।”
রোগীর মা জানান, “আমরা টাকা দিয়েই চিকিৎসা নিয়েছি, দয়া চাইনি। ডাক্তারদের বিনয়ী হওয়া উচিত।”
এ বিষয়ে মমতা স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ডা. জহিরুল হক মানিক বলেন, “রোগী বা স্বজনদের সঙ্গে খারাপ আচরণ কারো কাম্য নয়। হয়ত ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখব।” টেস্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতে টেস্টগুলো প্রয়োজনীয় ছিল।”
অভিযোগের বিষয়ে ডা. মোহাম্মদ জামিল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
বিশ্লেষকদের মতে, “প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকায় রোগীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও অতিরিক্ত ফি আদায় এখন নিয়মে পরিণত হচ্ছে। চিকিৎসা মানবিক সেবা, ব্যবসা নয়, এ বিষয়টি সবাইকে মনে রাখতে হবে।”