
রবিউল ইসলাম রবি :: বরিশাল ডিআইজি প্রিজন্স অসীম কান্ত পাল ও সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন চাকুরি জীবনে যেখানেই কর্মরত ছিলেন, সেখানেই অনিয়ম দুর্নীতির চিহ্ন রেখে এসেছেন। আ.লীগ শাসনামলে কর্মক্ষেত্রে তারা যেমন ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন, সেই চর্চা এখনও অব্যাহত রেখেছেন। যে কারণে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ার পাশাপাশি কারা অভ্যন্তরে বিস্তর অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়মে পরিণত হয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানকালে বেড়িয়ে আসছে নানা তথ্য।
কারা উপ-মহাপরিদর্শকের কার্যালয়, বরিশাল বিভাগের ডিআইজি প্রিজন্স অসীম কান্ত পাল চট্টগ্রামের আওয়ামী শীর্ষ সন্ত্রাসী দিদারুল আলম মাসুম-এর পক্ষ নিয়ে পক্ষপাতিত্বমূলক তদন্ত করেন। অনেকেই বলেছেন, অসীম কান্ত পাল হলেন- ভারতের ‘র’ এর এজেন্ট। আবার কেউ কেউ বলেছেন- সে ইসকন পন্থী অনুসারী। বছরে ২ বার করে আ.লীগ শাসনামলে গত ১২ বছরে সপরিবারে ভারতে গেছেন প্রায় ২৫ বার। এসব খরচ আয়কর ফাইলে দেখায়নি। রাজশাহীতে কর্মরত থাকাকালীন ৩ বছরে ৮ টন এসি বাবদ প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা সরকারের আর্থিক ক্ষতিসাধন করেছে। পরিদর্শনে গিয়ে সরকারি রেস্টহাউস/সার্কিট হাউজে না থেকে পর্যটন মোটেল, ব্যয়বহুল রিসোর্ট ও ৫ তারকা হোটেলে অবস্থান করেছিলেন। সকল ব্যয় কারাগারের জেল সুপারদের পরিশোধ করতে বাধ্য করতেন। এসব তথ্যের সত্যতা মিলবে অসীম কান্ত পাল চট্টগ্রাম, যশোর, রাজশাহী ও রংপুরে কর্মরত থাকাকালীন বিষয়ে অনুসন্ধান করলে। যা অফিস ফাইলেও অনেক তথ্য রেকর্ড রয়েছে।
সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন-এর নেতৃত্বে বরিশাল কারাগার এক ভয়াবহ জগতে রূপ নিয়েছে। মাসে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময় সেলে আটক বন্দিদের মোবাইল, মাদক ও ঘুমের ওষুধ সরবরাহ ওপেন সিক্রেট বিষয়। বন্দিদের আর্থিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে দাম হাঁকেন রক্ষীরা। শুধু নেশাদ্রব্যই নয়, আমদানি ওয়ার্ড থেকে বন্দি বেচাকেনা, নিম্নমানের খাবার পরিবেশন, বন্দিদের সঙ্গে দেখা করার সময় অর্থ আদায়, আর্থিক চুক্তিতে সুস্থ বন্দিকে অসুস্থ সাজিয়ে কারা হাসপাতালে রাখাসহ বিভিন্ন অনিয়মের ওপর ভর করেই চলছে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার। যার নেপথ্যে রয়েছেন ওই সিনিয়র জেল সুপার।
বিশ্বস্ত এক সূত্র জানায়, রাসেল নামে এক যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দী হিসেবে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে। সিনিয়র জেল সুপার তাকে জেলার মোহাম্মদ মাহবুব কবিরের মাধ্যমে টর্চার করে যাচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক স্টাফ জানান, জেলার মানসিকভাবে অসুস্থ। সর্ব প্রথম তার মানসিক চিকিৎসা দরকার।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন আ.লীগ শাসনামলে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এর সহযোগিতায় সিলেট কারাগারের মূল্যবান সম্পদ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নিকট হস্তান্তরের চেষ্টা করেন। যা সেখানের অনেকেই জানেন। কারা বন্দী ও স্টাফদের কল্যাণে ভুয়া ভাউচার করে প্রায় ২০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে। চট্টগ্রাম সেন্ট্রাল জেলের সিনিয়র জেল সুপার দায়িত্ব গ্রহণের সময় কামান ফান্ডে মোট উদ্বৃত্ত ছিল প্রায় ৬৯ লাখ টাকা। উদ্বৃত্ত তো দূরের কথা, সেখানে উল্টো ২০ লাখ টাকা ঘাটতি দেখান এ কর্মকর্তা।
গত ৫ আগস্ট বাহিরে আন্দোলনের সময় জিআইজি ও জোলার পরিবার সহ অজ্ঞাত স্থানে চলে যায় এবং মুঠোফোন বন্ধ করে দেয়। আ.লীগ শাসনামলেই কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন। যার মধ্যে বন্দি ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কল্যাণের অর্থও রয়েছে। ক্ষমতার প্রভাবে তার কর্তৃক অনেক কর্মকর্তা বৈষম্যতার শিকার হয়েছেন। চট্টগ্রাম কারাগারে তার অনিয়ম দুর্নীতির সহযোগী ছিলেন- সুপার প্রশান্ত, জেলার সোহেল রানা, সাবেক জেল সুপার গিয়াস।
সিলেট, চট্টগ্রামের পর বরিশালে এসেও মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেনের অব্যাহত রয়েছে পুরানো অভ্যাস। এক কথায় “টাকায় সব মেলে বরিশাল কারাগারে।” যারা জেলহাজত থেকে বের হয় তাদের সাথে কথা বললেও যে কেউ প্রমাণ পাবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল, চট্টগ্রাম, যশোর, রাজশাহী ও রংপুরে কারাগারে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ন্যায়বিচারের কামনা করেছেন। তাদের ভাষ্য- ফ্যাসিস্টরা এখনও বহাল পূর্বের ন্যায় অনিয়ম দুর্নীতিতে বহাল তবিয়তে রয়েছে।
উপরোক্ত বিষয়ে বরিশাল বিভাগের ডিআইজি প্রিজন্স অসীম কান্ত পাল-এর ব্যবহৃত মুঠোফোনে বুধবার বিকেল সেয়া ৪ টায় একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। পরে তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে সাক্ষাৎকারের বিষয় তুলে ধরে চ্যাট করলেও কোনো রেসপন্স করেননি।
বিকেল সাড়ে ৪ টায় বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন এর ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।


