
নিজস্ব প্রতিবেদক :: ফেসবুক প্ল্যাটফর্মে দীর্ঘদিন ধরে ট্রল, রোস্ট, অপমানজনক মন্তব্য ও নানামুখী অনলাইন হ্যারেজমেন্টের শিকার হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তরুণ শিক্ষার্থী জেসিকা জুই । তার অনুমতি ছাড়া এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিকৃত ছবি ও ভিডিও তৈরি, কল্পিত কনটেন্ট বানানো এবং সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে তাকে সামাজিকভাবে হেয় করার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীর দাবি—এ ধরনের কনটেন্ট তৈরি, শেয়ার বা পুনঃপ্রচার করা বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে সরাসরি দণ্ডনীয় অপরাধ।
সম্প্রতি ক্রাইম টাইমস পত্রিকায় জেসিকা জুইকে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদে নতুন করে শুরু হয়েছে বিতর্ক। প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু পেইজ তার বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য, বাজে ইঙ্গিত এবং ব্যক্তিগত ছবি পাঠিয়ে তাকে হয়রানির চেষ্টা চালায়। বিষয়টি নজরে আসার পর জেসিকা জুই ও সংশ্লিষ্টরা সাইবার ডিভিশনে অনলাইন অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সাইবার ডিভিশন সূত্রে জানা গেছে, পূর্বেও এই ধরনের কার্যকলাপে যুক্ত কয়েকটি পেইজ প্রশাসনের নজরে ছিল। নতুন করে তাদের অশালীন আচরণ ও ‘বাট’ মন্তব্য প্রশাসনকে আরও সতর্ক করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে কয়েকটি পেইজের ডিজিটাল অ্যাক্টিভিটি, কমেন্ট প্যাটার্ন এবং অ্যাডমিন তথ্য ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
প্রশাসন জানিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় কাউকে নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক বিদ্বেষ ছড়ানো, ট্রোল করা, মিথ্যা তথ্য প্রচার এবং ব্যক্তিগত ছবি বা ইঙ্গিতপূর্ণ কনটেন্ট পাঠানো—ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় দণ্ডনীয় অপরাধ।
জুই জানান, যেসব কনটেন্ট তাকে উদ্দেশ্য করে প্রকাশ করা হচ্ছে, তা তার ব্যক্তিগত মর্যাদা, পারিবারিক সম্মান এবং ভবিষ্যৎ জীবনকে চরমভাবে বিপর্যস্ত করছে। তিনি বলেন—
“আপনাদের রোস্ট বা মজা হয়তো আপনাদের কাছে বিনোদন, কিন্তু একটি মেয়ের জীবনে এর প্রভাব ভয়াবহ। আজ আমি একজন শিক্ষার্থী; ভবিষ্যতে আমি কারো স্ত্রী, কারো সন্তানের মা হব। আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো এসব কনটেন্ট ভবিষ্যতে আমার পরিবারকেও অপমান ও হ্যারেজমেন্টের মুখে ফেলতে পারে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, তার অভিযোগের প্রতিটি আচরণই বাংলাদেশের একাধিক আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হতে পারে—
এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জরিমানা, কারাদণ্ড, এবং ডিজিটাল কনটেন্ট বাধ্যতামূলকভাবে অপসারণের আদেশ দেওয়া হতে পারে।
জুই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন—
“আমার অনুমতি ছাড়া প্রকাশিত সকল ছবি, ভিডিও, মিম, রোস্ট বা অপমানজনক মন্তব্য অবিলম্বে ডিলিট করতে হবে। আমার ছবি–ভিডিওতে কেউ খারাপ মন্তব্য বা কনটেন্ট তৈরি করা অব্যাহত রাখলে, আমি বাধ্য হয়ে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, মানহানি আইন ও নারীর মর্যাদা রক্ষায় প্রচলিত সব আইনে মামলা দায়ের করব।”
তিনি আরও বলেন,
“এটি কারো প্রতি অনুরোধ নয়—এটি আইনগত সতর্কতা।”
সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনলাইন হয়রানি বা ট্রল কোনোভাবেই ‘মজা’ নয়; এটি একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। ভুক্তভোগী চাইলে পুলিশ সাইবার ক্রাইম ইউনিট, ডিজিটাল নিরাপত্তা সংস্থা কিংবা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার সহায়তা বিভাগে অভিযোগ জানাতে পারেন।