ঝালকাঠি প্রতিনিধি :: ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার আমুয়া হাসপাতাল সংলগ্ন ধোপার নদীর ওপর নির্মাণাধীন সেতুর কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় কয়েক হাজার মানুষ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা নড়বড়ে অস্থায়ী কাঠের ভাঙাচোরা সেতু দিয়ে প্রতিদিন পারাপার হচ্ছেন। সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, নারী, শিশু ও হাসপাতালে আসা রোগীরা।
কাঁঠালিয়া উপজেলা প্রকৌশল অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বরাদ্দ পাওয়া ৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ের সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২২ সালের মে মাসে। প্রাথমিকভাবে ২০২৩ সালের অক্টোবরে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্মাণের শুরুতেই সেতুর ডিজাইন পরিবর্তন করায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুপ্তি কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড কবির ব্রাদার্স কাজটি বাস্তবায়ন করছে। তবে দীর্ঘ দুই বছরেও কেবল কয়েকটি স্প্যান বসানো ছাড়া আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি।
এই সেতুটি শুধু আমুয়া ইউনিয়নের নয়, পুরো কাঠালিয়া উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম। এর আশপাশে রয়েছে ৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপজেলার একমাত্র আমুয়া হাসপাতাল, আমুয়া বন্দর ও তিনটি বড় বাজার। প্রতিদিন শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, রোগী, নারী ও শিশু- এই বিপজ্জনক কাঠের সেতু দিয়েই চলাচল করছেন। বর্ষায় নদীর পানি বাড়লে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইতোমধ্যেই একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর কাজ বন্ধ থাকায় এলাকাবাসীর জীবন কার্যত ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ছাত্রছাত্রীরা প্রতিদিন ভয়ে-আতঙ্কে কাঠের সেতু পার হয়। রোগী নিয়ে হাসপাতালে যেতে গিয়ে পরিবারগুলোকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
আমুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নকিরুল ইসলাম বলেন, এই সেতুটি আমাদের এলাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বছরের পর বছর কাজ বন্ধ পড়ে আছে। প্রতিদিন হাজারো মানুষ ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে এটা খুবই উদ্বেগজনক। দ্রুত কাজ শেষ হওয়া জরুরি।
শেখ ফজিলাতুন্নেছা ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এই ভাঙাচোরা কাঠের সেতু দিয়ে পারাপার হয়। যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে হলেও দ্রুত কাজ শেষ করা দরকার।
ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, সেতুর কাজ বন্ধ থাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রমেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। জরুরি সেবার যানবাহন চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় শিক্ষক মো. মাসউদুল আলম বলেন, দুই বছরেও কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। প্রতিদিনই আমরা জীবনঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছি। রোগী নিয়ে গেলে আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়।
উদ্যোক্তা মাসুম বিল্লাহ জুয়েল বলেন, হাজারো মানুষ এই সেতুর ওপর নির্ভরশীল। বিকল্প কাঠের সেতুটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। দ্রুত কাজ শেষ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
এর আগে চলতি বছরের মধ্যে কাজ শেষ করতে চাইলেও নির্মাণকাজের অগ্রগতি আশানুরূপ নয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী সুবীর সরকার বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা কাজ এগিয়ে নিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
উপজেলা প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, সেতুর ডিজাইন পরিবর্তন হওয়ায় কাজ কিছুটা পিছিয়েছে। তবে আমরা কাজের গতি বাড়ানোর চেষ্টা করছি। স্থানীয়দের কষ্ট আমরা বুঝি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য নিয়মিত তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয়দের দাবি, নির্মাণাধীন সেতুর কাজ দ্রুত শেষ না হলে ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সেতু যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। হাসপাতালগামী রোগীদের দুর্ভোগও আরও বাড়বে। তাই মানবিক দিক বিবেচনায় জরুরি ভিত্তিতে কাজের গতি বাড়াতে হবে।